ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা ইব্রাহিম রাইসি
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগেই আজ শনিবার ইরানের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য প্রশংসা ও অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন অতি রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতা ইব্রাহিম রাইসি।
ইরানের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ও মধ্যমপন্থী নেতা হাসান রুহানি বলেছেন, তার উত্তরসূরি আগেরদিনের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে অধিক ভোট পাওয়া রাইসির নাম তিনি উল্লেখ করেননি।
রুহানি বলেন, 'আমি জনগণের পছন্দকে অভিনন্দন জানাই। আমার আনুষ্ঠানিক অভিনন্দন আরো পরে আসবে যদিও, তবে আমরা জানি কে যথেষ্ট ভোট পেয়েছে এই নির্বাচনে।'
বাকি দুই কট্টরপন্থী প্রতিদ্বন্দ্বী মোহসেন রেজাই এবং আমিরহোসেইন ঘাজিজাদেহ-হাশেইমিও রাইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
নির্বাচনের দৌড়ের সংস্কারবাদী একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অ্যাম্বাসেডর আব্দুলনাসের হেম্মাতিও রাইসিকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
৬০ বছর বয়সী রাইসি তার পূর্বসূরির হাত থেকে এমন এক সময়ে ক্ষমতা নিতে যাচ্ছেন, যখন ইসলামি প্রজাতন্ত্রটি বিশ্বের ক্ষমতাধরদের সাথে তাদের ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া পারমাণবিক চুক্তিসমূহ আবার উদ্ধার করতে চাইছে। সেই সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কবল থেকেও নিজেদের মুক্ত করতে চাইছে যা দেশটির অর্থনীতির নিম্নগতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিচারবিভাগের প্রধান, রাইসির কালো পাগড়ি সরাসরি নবী মুহাম্মদের বংশোদ্ভুত প্রমাণ হিসেবে দৃশ্যমান। তাকে ইরানের প্রধান নেতা ও সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী, ৮১ বছর বয়সী নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির কাছাকাছি পর্যায়েও দেখা হচ্ছে।
মধ্যপন্থী নেতা আবদুলনাসের হেম্মাতি নির্বাচনে নিজের পরাজয় স্বীকার করেছেন। তিনি ইনস্টাগ্রামে ইব্রাহিম রাইসিকে লিখেছেন, 'আমি আশা করি আপনার প্রশাসন ইরানের ইসলামী প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা বজায় রাখবে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করবে এবং ইরানের বৃহত্তর স্বার্থে জনগণের জীবনমান উন্নত করবে।'
৫০ শতাংশ বা তারও কম ভোট পড়ার আশঙ্কায় গেল শুক্রবার নির্ধারিত সময়ের চেয়েও দুই ঘন্টা বেশি সময় ভোট গ্রহণ চলে ইরানে। প্রায় ৬০০ প্রার্থী অবশেষে মাত্র ৭ জন প্রার্থীর সাথে টিকতে না পেরে নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেয়ায় অনেক ভোটারই ভোট দিতে আসেননি।
তবে ৬০ মিলিয়ন ভোটারের দেশ ইরানে ভোটাররা আগেপরেও অনেক বিস্ময়কর ফলাফল উপহার দিয়েছেন। যদি নিশ্চিত বিজয়ী বলে কাউকে ঘোষণা দেয়া না হয়, তাহলে আগামী শুক্রবারে একটি রানঅফ অনুষ্ঠিত হবে।
কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে কারো কারো ধারণা সরকার শুধু গণমাধ্যমে দেখানর উদ্দেশ্যেই এই নির্বাচন দিয়েছে। তারা এটিকে সরকার নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করছে। তেহরানের দোকানি সাঈদ জারেয়ি ব্যঙ্গ করে বলেন, 'আমি ভোট দেই বা না দেই, কেউ একজন তো আগেই নির্বাচিত হয়ে গেছে।'
ইরানি গণমাধ্যমে আগে থেকেই রাইসিকে খোমেইনির সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দল ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছে রাইসির নাম জড়িয়ে আছে ১৯৮৮ সালে রাজনৈতিক বন্দীদের উপর গণহত্যা চালানোর সঙ্গে। এর প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তার উপর শাস্তি আরোপ করলেও, রাইসি গণহত্যার সাথে নিজের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন।
সূত্র- আরব নিউজ