আড়াই টাকা অনিয়মে চাকরিচ্যুত, ৩৯ বছর পর বেতন-ভাতা ফেরত পাবেন ওবায়দুল
মাত্র আড়াই টাকা অনিয়মের দায়ে ১৯৮২ সালে কুষ্টিয়ার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ওবায়দুল আলম আকনকে দণ্ড দেওয়া হয়। এরপর আবেদনের প্রেক্ষিতে তার চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট।
এই আদেশের বিরুদ্ধে করা রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে রিভিউ রায়ে অবশেষে প্রায় ৪০ বছর পর হারানো চাকরি জীবনের সব বেতন-ভাতা পাবেন ওবায়দুল আলম।
সোমবার (২৮ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে ওবায়দুল আলমের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী।
এরশাদের সামরিক শাসন আমলের ঘটনা। মাত্র আড়াই টাকা বেশি দামে সরকারি পাট বীজ বিক্রির অভিযোগে ১৯৮২ সালের ১৫ এপ্রিল পাট সম্প্রসারণ সহকারি মো. ওবায়দুল আলম আকনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর এরশাদের সামরিক আদালত আকনকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি দুই মাস জেল ও এক হাজার টাকা জরিমানা করেন। এর প্রায় ৩০ বছর পর সামরিক আদালতের সেই সাজা ও চাকুরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে হাইকোর্টে রিট করেন ওবায়দুল আলম আকন। সে রিটে চাকুরিচ্যুতি থেকে অবসরে যাওয়ার নির্ধারিত সময় পর্যন্ত সকল সুযোগ-সুবিধাসহ সমুদয় বেতন-ভাতা পেতে নির্দেশনা চাওয়া হয়। এই রিটের শুনানি নিয়ে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর হাইকোর্ট ওবায়দুল আলমের সাজা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ে তার চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ পর্যন্ত সকল বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় পাওনা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আপিল করে। এই আপিলের শুনানি নিয়ে ২০২০ সালের ৮ মার্চ রায় দেন আপিল বিভাগ। সে রায়ে ওবায়দুল আলম আকনের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের অংশ বহাল রেখে সামরিক আদালতের সাজা অবৈধ ঘোষণা সংক্রান্ত অংশটি (এক্সপাঞ্জ) বাদ দেওয়া হয়। তবে এই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সে আবেদন খারিজ করে রায় দিলেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বিভাগ।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল আলম আকন তার চাকরি জীবনের সব বেতন-ভাতা ফিরে পাবেন। রাষ্ট্র পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।