সুইস রূপকথা, ফ্রান্সের কান্না
এক রাতের জন্যই যেন সব রোমাঞ্চ রেখে দিয়েছিলেন ফুটবল ঈশ্বর! স্পেন-ক্রোয়েশিয়া রোমাঞ্চের রেশ না কাটতেই আরেকটি দম বন্ধ করা ম্যাচ। যেখানে রূপকথা লিখেছে সুইজারল্যান্ড। বিশ্বকাপের রানার্স আপদের বিদায়ের রাতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে বাড়ির টিকেট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে সুইসরা। উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে সমতার পর টাইব্রেকারে ফ্রান্সকে হারিয়ে ইউরো চ্যাস্পিয়নশিপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে সুইজারল্যান্ড।
সোমবার রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে রুমানিয়ার বুখারেস্টে পেনাল্টি শুট আউটে ফ্রান্সকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়েছে সুইজারল্যান্ড। নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ সমতা থাকার পর ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এখানেও স্কোরলাইন এটাই থাকে। টাইব্রেকারে নায়ক হয়ে সুইজারল্যান্ডকে আনন্দে ভাসান দলটির গোলরক্ষক ইয়ান সমের।
ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টানো ম্যাচে ফ্রান্সের ত্রাতা ছিলেন করিম বেনজমা। জোড়া গোল করে পিছিয়ে পড়া দলকে লিড এনে দেন রিয়াল মাদ্রিদের এই তারকা ফরোয়ার্ড। ডি-বক্সের বাইরে থেকে অসাধারণ শটে ফ্রান্সের হয়ে বাকি গোলটি করেন পল পগবা। সুইজারল্যান্ডের হয়ে জোড়া গোল করেন হারিস সেফেরোভিচ। বাকি গোলটি আসে মারিও গাভরানোভিচের পা থেকে।
'এফ' গ্রুপকে বলা হচ্ছিল মৃত্যুকূপ। এই গ্রুপের সেরা দল হয়ে শেষ ষোলায় ওঠে ফ্রান্স। তৃতীয় সেরা দল হয়ে নক আউট পর্বের টিকেট কাটে সুইজারল্যান্ড। কিন্তু এই পর্বে তাড়া গড়ে ফেললো ইতিহাস। ৬৭ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো মেজর টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠল সুইজারল্যান্ড। সর্বশেষ ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে শেষ আটে খেলা সুইসরা প্রথমবারের মতো ইউরোর কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো।
ম্যাচে শুরুটা দারুণ করে সুইজারল্যান্ড। হারিস সেফেরোভিচের গোলে ১৫তম মিনিটেই এগিয়ে যায় তারা। বিরতির পর ফ্রান্সকে লড়াইয়ে ফেরান বেনজেমা। দুই মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে দলকে লিড এনে দেন তিনি। ৭৫তম মিনিটে পগবার গোলে আরও এগিয়ে গেলেও তা টেকেনি। ৮১তম মিনিটে সেফেরোভিচের দ্বিতীয় গোল। শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে (৯০তম মিনিট) গোল করে দলকে লড়াইয়ে রাখেন গাভরানোভিচ।
অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গোল পায়নি কোনো দলই। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। যেখানে স্পট লাইটটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সমের। প্রথম পাঁচ শটের সবকটিতেই গোল করে সুইজারল্যান্ড। ফ্রান্সের ভাগ্য আটকে যায় পঞ্চম শটে। দেওয়াল তুলে ফ্রান্সের অনেক আক্রমণ থেকে দলকে রক্ষা করা সমের ফিরিয়ে দেন কিলিয়ান এমবাপ্পের নেওয়া শট।
পুরো ম্যাচে আধিপত্য ছিল ফ্রান্সেরই। ৫৫ শতাংশ সময় নিজেদের পায়ে বল রাখেন গ্রিজম্যান-এমবাপ্পেরা। আক্রমণেও ছিল তাদের দাপট। অবিরত আক্রমণে সুইসদের কাঁপিয়ে দেওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা গোলমুখে ২৬টি শট নেয়, এর মধ্যে ৮টি ছিল লক্ষ্যে। ইতিহাস গড়া সুইজারল্যান্ডের নেওয়া ১২টি শটের ৫টি ছিল লক্ষ্যে।