প্লেগে আক্রান্ত ৫,০০০ বছর পুরনো মানুষের দেহাবশেষ আবিষ্কার
ব্ল্যাক ডেথ বা কালো মড়ক হয়েছিল যে প্লেগের কারণে, তার সবচেয়ে প্রাচীন রোগী, অর্থাৎ 'পেশেন্ট জিরো' কে—বিজ্ঞানমহলে ফের এ বিতর্ক উসকে দিল লাটভিয়ায় আবিষ্কৃত এক দেহাবশেষ।
লাটভিয়ায় আবিষ্কৃত দেহাবশেষটি ৫ হাজার বছরের পুরনো। নতুন এ আবিষ্কার থেকে জানা গেছে, এই ব্যক্তিই প্লেগের সবচেয়ে প্রাচীন স্ট্রেইনে আক্রান্ত ব্যক্তি।
চতুর্দশ শতকে গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়েছিল প্লেগ। মহাদেশটির অর্ধেকের বেশি মানুষ প্রাণ হারায় এ মহামারিতে। এরপরের কয়েক শতাব্দীতে নিয়মিত হানা দিতে থাকে প্লেগ। এতে প্রাণ হারায় লক্ষ লক্ষ মানুষ।
৫৩০০ বছরের প্রাচীন দেহাবশেষটি সম্পর্কে জার্মানির কিয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. বেন ক্রস-কিয়োরা বলেছেন, 'এখন পর্যন্ত যতগুলো প্লেগ ভিক্টিমের দেহাবশেষ আবিষ্কৃত হয়েছে, তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে প্রাচীন'।
লাটভিয়ার স্যালাক নদীর তীরের একটি নিওলিথিক সমাধিস্থলে আরও তিনজনের সঙ্গে কবর দেওয়া হয়েছিল এই ব্যক্তিকে।
চার ব্যক্তির হাড় ও দাঁতের ডিএনএ বিন্যাস বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা। বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, এদের একজন ছিল শিকারি-সংগ্রাহক। বয়স বিশের কোঠায়। ব্যাকটেরিয়া সৃষ্ট প্লেগের প্রাচীন স্ট্রেইন ইয়েরসিনিয়া পেস্টিস-এ আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিল সে।
ড. ক্রস-কিয়োরা জানান, প্রাচীন এই যুবক খুব সম্ভব কোনো বীভারের কামড় খেয়েছিল। সেখান থেকেই তার ইয়েরসিনিয়া পেস্টিস সংক্রমণ হয় এবং এর ফলে সৃষ্ট পচন থেকে দুই থেকে সাত দিন পর মারা যায়।
গবেষকদের অনুমান, এই প্রাচীন স্ট্রেইনটির আবির্ভাব প্রায় ৭ হাজার বছর আগে। মধ্য ইউরোপে তখন কৃষিকাজের প্রচলন হচ্ছে। তাদের ধারণা, ব্যাকটেরিয়াটি বড় ধরনের কোনো প্রাদুর্ভাব সৃষ্টি না করেই ঘুরতে ঘুরতে প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
সময়ের আবর্তে অভিযোজিত হতে হতে ব্যাকটেরিয়াটি মানুষকে সংক্রমণক্ষম হয়ে ওঠে। বিবর্তিত হতে হতে এটি বিউবনিক প্লেগের সূত্রপাত করে। মাছির মাধ্যমে এই প্লেগ মধ্যযুগে গোটা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যায় বিউবনিক প্লেগে।
সাধারণত প্লেগের জীবাণুবাহী অথবা প্লেগে আক্রান্ত কোনো প্রাণীর কামড় খেলে বা সংস্পর্শে এলে মানুষ প্লেগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ আজও হয়, তবে এখন তা চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়যোগ্য।
- সূত্র: বিবিসি