আলিস আল ইসলাম: বিপিএলই যার একমাত্র পরিচয়
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই হইচই ফেলে দেন। অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিকসহ চার উইকেট! ওই ম্যাচের পরের কয়েক দিনের আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠেন আলিস আল ইসলাম। কিন্তু যেভাবে আসা, মিলিয়ে যাওয়াটাও সেভাবেই। ২০১৯ সালের শুরুতে অনুষ্ঠিত বিপিএলে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে চার ম্যাচ খেলা ডানহাতি এই অফ স্পিনার হঠাৎ উধাও দৃশ্যপট থেকে। ক্রিকেটের কোনো খবরে ছিল না আলিসের নাম।
বছরঘুরে বিপিএল আসতেই আবারও উচ্চারিত হচ্ছে তার নাম। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের শুরু থেকেই নামটি নিয়ে আলোচনা হলেও স্কোরকার্ডে তার নাম দেখা গেল শনিবার (৪ জানুয়ারি)। এই অপেক্ষাটা তরুণ এই স্পিনারের জন্য দীর্ঘ থেকেও দীর্ঘতর। বিপিএল দিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে নাম লেখানো আলিস ম্যাচ খেললেন গত বছরের ১৮ জানুয়ারির পর। অর্থাৎ, এক বছর পর (৩৫১ দিন পর) ব্যাটসম্যানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দেখা গেল তাকে।
এবার ঠিকানা বদলেছে আলিসের। সর্বশেষ আসরে ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে খেলা এই স্পিনারকে এবার দলে ভিড়িয়েছে খুলনা টাইগার্স। প্রথম কয়েক ম্যাচে সুযোগ হয়নি তার। নিজেদের নবম ম্যাচে আলিসের হাতে বল তুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে মন স্থির করেন খুলনার অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। যদিও এবার শুরুটা দাপুটে হয়নি বিপিএলকে নিজের পরিচয়ের একমাত্র সম্বল হিসেবে পাওয়া আলিসের। খুলনার ৬ উইকেটে হারের ম্যাচে ৪ ওভারে ২৭ রান খরচায় একটি উইকেট নিয়েছেন তিনি।
অমন তেড়েফুঁড়ে ক্যারিয়ার শুরু করা আলিস কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলেন? এই একটা বছর কীভাবে কাটলো তার? ঘটা করে বা পারফরম্যান্স দিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সুযোগ এখনও পাননি তিনি। আলিস জানাতে পারেননি, গত বিপিএলে পাওয়া চোট তাকে কতোটা ভুগিয়েছে, কতোটা রাত তাকে ঘুমোতে দেয়নি। বলতে পারেননি, ওই এক চোট ক্রিকেট থেকে তাকে কতোটা দূরে ঠেলে দিয়েছিল।
হ্যাটট্রিক দিয়ে বিপিএল অভিষেক রাঙানো আলিসের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে কথা ওঠে ওই ম্যাচের পরপরই। আলিসের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে লিখিত অভিযোগ করে প্রতিপক্ষ রংপুর রাইডার্স। অবশ্য বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বিপিএলে আরও ২১ দিন খেলার সুযোগ হয় তার। যদিও সফরটা দীর্ঘ হয়নি, নিজের চতুর্থ ম্যাচে হাঁটুর চোটে ছিটকে যান ডানহাতি এই স্পিনার।
নিয়ম অনুযায়ী ১৪ দিনের মধ্যে বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও চোটের কারণে তা দেয়া হয়নি গত বিপিএলে চার ম্যাচে ছয় উইকেট নেয়া আলিসের। এই চোটে দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাকে, করাতে হয় অস্ত্রোপচারও। গত বছরের জুনে ভারতে অস্ত্রোপচার করানো আলিস আগস্টে মাঠের যুদ্ধে নাম লেখান। টানা দুই মাস বোলিং অনুশীলন করার পর গত ১৫ অক্টোবর পরীক্ষার মাধ্যমে বোলিং অ্যাকশনের বৈধতা পান তিনি।
এরপর নিজেকে বিপিএলের জন্য প্রস্তুত করা শুরু করেন আলিস। তার অপেক্ষা ফুরায় গত নভেম্বর। বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ড্রাফট থেকে তরুণ এই অফ স্পিনারকে দলে নেয় খুলনা। যদিও আসল লড়াইয়ের অপেক্ষা শেষ হচ্ছিল না। সিলেট পর্বে গিয়ে সেই অপেক্ষাও ফুরিয়েছে আলিসের। চোখ ধাঁধানো বোলিং না করতে পারলেও এক উইকেট নেয়ার পাশাপাশি বেশ কৃপণ ছিলেন তিনি।
আলিসের ক্যারিয়ারে খুব বেশি ক্লাবের নাম নেই। ঢাকার ক্রিকেটে তার পথচলা শুরু কাঁঠাল বাগানের গ্রিন ক্রিসেন্ট ক্লাব দিয়ে। এরপর ওল্ড ডিওএইচএসের হয়ে খেলেন প্রথম বিভাগ ক্রিকেট। পরের পর্বটা তার কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। ঢাকা ডায়নামাইটসের নেটে বোলিং করার সুযোগ পেয়েই খুলে যায় আলিসের ভাগ্যের দরজা। ডায়নামাইটস কোচ খালেদ মাহমুদ সুজনের চোখ আটকে তার বোলিংয়ে। সুযোগ মিলে যায় বিপিএলে। যদিও চোটের কারণে স্বপ্ন ছোঁয়ার পথে একটা বছর হাঁটা হয়নি আলিসের।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোতে আলিসের প্রোফাইলে পাঁচটি ম্যাচের স্কোরকার্ড দেয়া। এরমধ্যে চারটি ষষ্ঠ বিপিএলের। সর্বশেষ ম্যাচটি শনিবারের, চলতি বিপিএলের। মাঝের এই লম্বা সময়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের কোথাও ছিলেন না আলিস, কেবল লড়ে গেছেন। তাকে লড়তে হয়েছে ইনজুরি কাটিয়ে উঠতে, বোলিং অ্যাকশন বৈধ প্রমাণ করতে। অবশেষে পেরেছেন আলিস, ফিরেছেন সেই বিপিএল দিয়েই। সেই বিপিএল দিয়েই আবারও নতুন করে স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায় ২৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।