তারের জঞ্জালবিহীন সিলেটের সড়ক
সড়কের দু’পাশজুড়ে এবড়ো থেবড়ো বিদ্যুতের খুঁটি। সেখানে ঝুলে আছে তারের জঞ্জাল। বিদ্যুতের সঙ্গে ইন্টারনেট, টেলিফোন, ক্যাবল অপারেটরসহ নানা সেবা প্রতিষ্ঠারের তারের প্যাঁচগুজে রীতিমতো আকাশ ঢেকে পড়ার অবস্থা। এই ছিল সিলেটের সড়কগুলোর চিত্র। যা নগরীর সৌন্দর্যহানীর পাশাপাশি ছিল দুর্ঘটনারও কারণ।
তবে গত সোমবার থেকে বদলে গেছে একটি সড়কের চিত্র। সিলেট নগরীর ১ নং ওয়ার্ডের শাহজালাল (র.) দরগাহ সড়কের বিদ্যুতের তারের জঞ্জাল ওইদিন সরানো হয়েছে। এই সড়কের বিদ্যুতের তার টানা হয়েছে মাটির নিচ দিয়ে।
বিদ্যুতের খুঁটি আর ঝুলন্ত তার সরিয়ে ফেলার পর নতুন রূপে দেখা দিয়েছে সিলেটের অন্যতম ব্যস্ততম এই সড়ক। সোমবার রাত থেকে তারবিহীন এই সড়কের ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর বাসিন্দাদের অনেকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের ছবি শেয়ার করে এই কাজের প্রশংসা করছেন।
এই কাজের প্রশংসা করে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার সরানোর ফলে দরগাহ সড়কের সৌন্দর্য অনেকখানি বেড়ে গেছে। পুরো নগরীতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা গেলে সিলেট নগরীর চেহারাই পাল্টে যাবে। এতে পর্যটক আকর্ষণ আরও বাড়বে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রথমবারের মতো সিলেটে বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন ভূগর্ভস্থ করা হচ্ছে। সে হিসেবে শাহজালাল দরগাহ এলাকার বৈদ্যুতিক তার ভূগর্ভস্থ হওয়া দেশের প্রথম সড়ক। নগরীর মোট ৪৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ভূগর্ভস্থ করার কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন নগর কর্তারা।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫-২০ দিন ধরে পরীক্ষামূলক সরবরাহ পর্যবেক্ষণের পর রোববার থেকে এই সড়কে ভ’গর্ভস্থ লাইনে পূর্ণ সরবরাহ চালু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে শাহজালাল মাজার এলাকা থেকে নগরীর কোর্ট পয়েন্ট পর্যন্ত পাইলট প্রকল্পে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতের লাইন চালু করা হয়। সোমবার সরিয়ে নেওয়া হয় দরগাহ এলাকার ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তার।
জানা যায়, গত বছরের জুলাইয়ে ‘সিলেট বিভাগ বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন’ শীর্ষক দুই হাজার ৫৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। ওই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর কিছু এলাকার বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ভ’গর্ভস্থ করা হচ্ছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে এ কাজ শুরু হয়।
এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক এমএম সিদ্দিক বলেন, প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার যে প্রকল্পের কাজ চলছে তার আওতায় ২২/২৩ কেভি সাব স্টেশন বসবে, আড়াই হাজার কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন টানা হবে, সাড়ে তিন হাজার ট্রান্সফরমার বসানোসহ পুরো বিভাগে আরও অনেক কাজ হবে। এই প্রকল্পের আওতায়ই ভূগর্ভস্থ সঞ্চালন লাইনের কাজ চলছে।
তিনি বলেন, সরকার সব নগরীরই বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। অন্যান্য শহরে জরিপ চলছে। সিলেটে কাজটি শুরু হয়েছে। সিলেট নগরীতে প্রায় ৭০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় ৭ কিলোমিটার বৈদ্যুতিক তার ভ’-গর্ভে নেওয়া হয়েছে। এই পাইলট প্রকল্পের আওতায় নগরীতে মোট ১১ কেভি ২৫ কিলোমিটার, শূন্য দশমিক ৪ কেভি ১৮ কিলোমিটার ও ৩৩ কেভি ২ কিলোমিটার ভূ-গর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হবে।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, হযরত শাহজালাল (রা.) মাজার এলাকা থেকে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুতায়ন প্রকল্পের সরবরাহ চালু হয়েছে। উন্নত রাষ্ট্রের আদলে দেশের প্রথম ভূ-গর্ভে বিদ্যুৎ লাইন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। তুলে নেওয়া হচ্ছে রাস্তার দুপাশের বিদ্যুতের খুঁটিসহ টেলিফোন, ইন্টারনেট, ক্যাবল অপারেটরসহ অন্যান্য সেবা প্রতিষ্ঠানের তার। ফলে তারের জঞ্জাল থেকে মুক্ত হয়েছে শাহজালাল মাজার এলাকা। বেড়েছে এই এলাকার সৌন্দর্য।
মেয়র বলেন, এখন থেকে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিভাগ ও সিটি করপোরেশনকে অবিহিত না করে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন গিয়েছে এমন রাস্তা খুঁড়াখুঁড়ি করতে পারবে না।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ লাইন চালু করা একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ ছিল। দেশে প্রথমবারের মতো সিলেটে এটি চালু হলো। যা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগ সম্পন্ন করতে পেরেছে।