পুকুরে গোসল করে চর্মরোগে আক্রান্ত দেড় শতাধিক মানুষ
চুয়াডাঙ্গার দুটি গ্রামের দেড় শতাধিক মানুষ চর্ম রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকা চাকা হয়ে ঘা তৈরি হচ্ছে। তিন-চার বছর একটানা চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হচ্ছেন না তারা। গ্রাম জুড়ে মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এখন পর্যন্ত এ রোগে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। গ্রামবাসীর দাবি, এ রোগে এক নারী মারা গেছেন। গ্রামের একটি পুকুরে গোসল করার কারণে এ রোগ হচ্ছে বলে ধারণা এলাকাবাসীর।
চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই চর্মরোগকে ‘ইরিট্যান্ট কন্টাক্ট ডারমাটাইটিস’ হিসাবে শনাক্ত করেছেন চিকিৎসকরা। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আক্রান্ত রোগিরা দ্রুত চিকিৎসা নিলে এ রোগ থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব। রোগ প্রতিরোধের জন্য সিভিল সার্জন অফিসের পক্ষ থেকে গ্রাম দুটিতে কাজ করবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
জানা গেছে, প্রায় চার-পাঁচ বছর আগে চুয়াডাঙ্গার রতিরামপুরে এক নারী ছত্রাকজনিত চর্ম রোগে আক্রান্ত হন। তিনি বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা নেওয়ার পর মারা যান। এরপর রতিরামপুর ও রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক শিশু, নারী ও পুরুষ ছত্রাক জনিত এ চর্মরোগে আক্রান্ত হন। শরীরের বিভিন্ন স্থানে চাকাচাকা হওয়ার পর ঘা হয়ে যায়। রতিরামপুর গ্রামের মাঝে রয়েছে একটি বড় পুকুর। এ পুকুরে দুটি গ্রামের সাধারণ মানুষ নিয়মিত গোসল করেন। পুকুরে মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুর বিষ্ঠা ফেলার কারণে পানি দূষিত হয়েছে। দূষিত পানি দিয়ে গোসল করার কারণে খুব সহজে মানুষ ছত্রাক জনিত চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
রতিরামপুর গ্রামের বাসিন্দা মিনহাজুল আবেদিন জানান, ‘‘আমার মা প্রায় পাঁচ বছর আগে চর্মরোগে আক্রান্ত হয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা করানোর পরও ভাল হয়নি। এ বছর মা মারা গেছেন। তবে আমি চর্মরোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়ে গেছি।’’
রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রামের ফাতেমা খাতুন বলেন, ‘‘শরীরে প্রথম ফুসকুড়ি বের হয়। এরপর চাকা চাকা হয়ে ঘা হয়। যা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। শরীর চুলকায়, গরম কালে বেশি সমস্যা হয়, শীতকালে অল্প সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খেলেও ভাল হয় না এ রোগ।’’
রতিরামপুর গ্রামের করিম শেখ বলেন, ‘‘ছয় মাস আগে আমার হাতে এ রোগ দেখা দেয়। পরে তা সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হয়। গরিব মানুষ হওয়ায় নিয়মিত ওষুধ কিনে খেতে পারি না। শরীরে ঘা নিয়ে বাইরে বের হওয়া যায় না। অনেকে মিশতে চায় না আমাদের সঙ্গে। তাই বাধ্য হয়ে বাড়িতেই থাকতে হয়।’’
বিনামূল্যে ওষুধের দাবি জানিয়ে রতিরামপুর গ্রামের বৃদ্ধা হালিমা খাতুন বলেন, ‘‘সরকারিভাবে আমাদের চিকিৎসা দেওয়া হোক। আমাদের মত গরিব মানুষের ওষুধ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই।’’
সিভিল সার্জন ড. এ এস এম মারুফ হাসান জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রাঙ্গিয়ারপোতা গ্রাম ও জীবননগর উপজেলার রতিরামপুর গ্রামের শিশু, নারী ও পুরুষ এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। চর্ম রোগে সাধারণ মানুষ কেন আক্রান্ত হচ্ছে এ বিষয়ে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধান করে গ্রামের একটি পুকুরের গোসল করার কারণে ছত্রাক জনিত এ চর্মরোগ হচ্ছে বলে প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। এ রোগ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। নিয়মিত চিকিৎসা করালে ভাল হয়ে যায়। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। চর্মরোগের কারণে শরীর চুলকায়। চুলকানোর কারণে কসানি ঝড়ে ও ঘাঁ হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ‘‘চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’’
জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ড. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘হাসপাতালে চর্মরোগে আক্রান্ত রোগিদের নিয়মিত চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকায় তাদের দিতে পারি না। তবে অতি সত্ত্বর ওষুধের সংকট কেটে যাবে।’’
জীবননগর উথলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, দুটি গ্রামের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। গ্রামের মানুষদের পুকুরে গোসল করতে নিষেধ করা হয়েছে। বিষয়টি আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।