"৪২টা গরু এনেছিলাম, বিক্রি মাত্র ১টা!"
ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্যে সারাদেশে আজ বুধবার (২১ জুলাই) পালিত হচ্ছে ঈদুল আজহা। কিন্তু আশানুরূপ বিক্রয় আর লাভ তো দূরের কথা, লোকসান দিয়েও পশু বিক্রি করতে পারেননি অনেক খামারি ও বিক্রেতা। গাবতলীসহ রাজধানীর বেশিরভাগ পশুর হাটে দেখা গেছে একই চিত্র।
চুয়াডাঙ্গা থেকে ৭টি গরু নিয়ে হাটে আসেন হাবিবুর রহমান। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, প্রতিটি গরুই বিক্রি করতে হয়েছে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা লোকসানে।
"এখনও শেষ গরুটির জন্য ক্রেতা খুঁজে পাইনি আমি", বলেন হাবিবুর রহমান। ৪ মণ ওজনের ১ লাখ টাকায় কেনা গরুটির দাম ক্রেতারা বলছে ৭০ হাজার।
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের বাশার ডেইরি ফার্মের খামারি মতিয়ার রহমান গাবতলী পশুর হাটে আসেন ৪২টি গরু নিয়ে।
বুধবার দুপুরে হাটেই কথা হয় তার সঙ্গে। মতিয়ার রহমান বলেন, "ভাই কি কথা বলবো! মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। এতগুলো গরু আনলাম, অথচ বিক্রি করতে পেরেছি মাত্র ১টি। তাও লোকসানে বিক্রি করেছি শুধুমাত্র শ্রমিকদের খাবারের টাকা দেয়ার জন্য"।
গরু ফেরত নেয়ার জন্য ট্রাক খুঁজছিলেন মতিয়ার রহমান। বলেন, "ভাই, একে তো বৃষ্টি, তার উপর এতগুলো গরু ফেরত নিতে হবে অথচ হাতে সময় নেই"।
মতিয়ার রহমান বলেন, "ঈদের ২ দিন আগে দাম কমে গেছে গরুর। দেখলাম বিক্রি করলে প্রতি গরুতে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা লস হবে। তাই খামারে নিয়ে যাচ্ছি। এখানে বিক্রি করলে ৮০ লাখ টাকা লস হতো আর ফার্মে নিয়ে গেলে ৩ লাখ খরচ হবে। তাই চিন্তা করলাম গরু ফিরিয়েই নিয়ে যাই, পরে যদি বিক্রি করতে পারি"।
"খুব বিপদে পড়ে গেলাম। এক কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গরুগুলো পালন করেছি। এখন বিক্রি করতে পারলাম না। কিভাবে এ ঋণ শোধ করবো সেই চিন্তায় ঘুম আসে না"।
মতিয়ার রহমানের সব গরুই বড় আকারের। তিনি বলেন, "বড় আকারের গরুর মালিকেরাই এবার সবচেয়ে লোকসানে আছে"।
আরেক খামারি ফজলু রহমান ৩২টি গরু আনেন গাবতলী হাটে।
"২৪টি গরু বিক্রি করতে পেরেছি। প্রতিটিতে ১০ হাজার টাকার লোকসান হয়েছে। এখনও ৮টি গরু আছে, দামই বলছে না কেউ। এখন আবার পাবনা ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। বড় গরুর দাম এত কম কখনও দেখিনি", বলেন ফজলুর রহমান।
চুয়াডাঙ্গা থেকে আগত আরেক ব্যাপারি ইসরাফিল ৭টি গরু ৯ লাখ টাকায় কিনেছিলেন। বিক্রি হয়েছে ৭ লাখ টাকার। তিনিও ঋণ করেই গরুগুলো কেনেন। ইসরাফিল বলেন, "আজ ঈদের দিন ৩টি গরু বিক্রি করেছি। সকালবেলা ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় কেনা গরু এক লাখ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। কারণ, বাড়িতে ফিরিয়ে নিলে খরচ আরও বেশি হবে"।
এদিকে অবিক্রিত গরু ফিরিয়ে নিতে পর্যাপ্ত ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান হাটে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করা আশিক। তিনি জানান, গত রাতে ৫০০ ট্রাক গরু ফেরত গেছে।
সকালে ঈদের নামাজের পরই সারাদেশে শুরু হয়ে যায় পশু কোরবানি।
রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষ অলি-গলিতে অর্থাৎ নিজেদের বাসার সামনে কোরবানির পশু জবাই করছেন।
আজ সকাল ৭টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবারও গতবারের মতো রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় নি।