সত্যজিতের খেরোর খাতা পড়তে পারবেন অনলাইনে
সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকীতে তার জীবন ও কাজের প্রতি অনেকে অনেকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিয়েছেন। নেটফ্লিক্সে তার গল্প থেকে অনুপ্রাণিত চারটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। তার লেখার নতুন অনুবাদ প্রকাশ হয়েছে। তার বহুমুখী কর্মকাণ্ড নিয়ে অসংখ্য প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে।
তবে সত্যজিতের স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সম্প্রতি চালু করা ওয়েব পোর্টাল এক্সপ্লোরারি.ওআরজি বাকি সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে।
কলকাতাভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান টিসিজি সেন্টারস ফর রিসার্চ অ্যান্ড এডুকেশন ইন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির পৃষ্ঠপোষকতায় অয়ংশু ব্যানার্জি ও অনুব্রত চক্রবর্তীর নেতৃত্বে একটি দল 'গুপি গাইন বাঘা বাইন' (১৯৬৯) চলচ্চিত্রের খেরোর খাতা ডিজিটাইজড করেছে।
সত্যজিৎ তার ছবির সমস্ত খুঁটিনাটি—সংলাপ থেকে শুরু করে নাচ-গানের দৃশ্য, বিশেষ আবহ—লিপিবদ্ধ করে রাখতেন খেরোর খাতায়।
'গুপি গাইন বাঘা বাইনে'র জন্য সত্যজিতের ব্যবহৃত দুটি খেরোর খাতা নিয়েই বানানো হয়েছে এক্সপ্লোরারি.ওআরজি। এ প্রকল্পের সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত আছেন সত্যজিৎ রায়ের ছেলে সন্দীপ রায় ও মৃণাল সেনের ছেলে কুনাল সেন। প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং পূর্ণিমা দত্তও যুক্ত আছেন এ প্রকল্পের সঙ্গে। তাদের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বাংলা চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত।
ভারতীয় ও বিশ্ব চলচ্চিত্র নিয়ে যারা কাজ করছেন, এ প্রকল্পটি তাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 'মহান চলচ্চিত্রকার' নিয়ে পুরনো সেই বিতর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ করে দিয়েছে এক্সপ্লোরারি.ওআরজি। চলচ্চিত্র একটি সম্মলিত পরিশ্রমের ফসল। প্রযোজক, পরিচালক, সংগীত পরিচালক, কোরিওগ্রাফার, কস্টিউম ডিজাইনার, মেকআপ আর্টিস্ট, নৃত্য পরিচালক, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারসহ অগুনতি মানুষের পরিশ্রম জড়িয়ে থাকে একটি চলচ্চিত্রের সঙ্গে।
কিছু চলচ্চিত্র পরিচালককে বাকি সবার চেয়ে আলাদা ও প্রভাবশালী মনে করা হয় কেন, তা নিয়ে নতুন করে ভাবার সুযোগ দিয়েছে সত্যজিৎ রায়ের খেরোর খাতা।
একটা ছবি বানানোর আগে সত্যজিৎ সেই ছবি নিয়ে তার সমস্ত চিন্তা-ভাবনা লিখে রাখতেন লাল কাপড়ের মলাটে বাঁধাই করা খাতায়। খেরোর খাতা নামটির উৎপত্তি 'খারুয়া' থেকে। খারুয়া শব্দের অর্থ লাল।
'গুপি গাইন বাধা বাইন' ছবিতে আট ধরনের ভূতের নাচ ছিল। এই ভূতগুলোকে সত্যজিৎ সৃষ্টি করেছিলেন রবার্ট ক্লাইভ, চার্লস কর্নওয়ালিস, ওয়ারেন হেস্টিংসের মতো ইংরেজদের মাথায় রেখে। এক্সপ্লোরারি'তে এ সম্পর্কে সত্যজিতের চিন্তা-ভাবনার বিস্তারিত জানা যাবে।
ছবির খুঁটিনাটির দিকে সত্যজিতের কড়া নজর থাকত। এরকম কিছু উদাহরণ পাওয়া যাবে 'গুপি গাইন বাঘা বাইনে'র খেরোর খাতায়। যেমন, রাজদরবারের একটি স্তম্ভের উচ্চতা ঠিক কতটুকু হবে, তা নিয়েও খেরোর খাতায় হিসেব কষেছেন সত্যজিৎ।
খেরোর খাতা থেকে সত্যজিতের আরেকটা বিচিত্র অভ্যাস সম্পর্কে জানা যায়। তার ছবির সেটে কেউ ঘুরতে গেলে তিনি তাদের স্কেচ এঁকে রাখতেন। তাদের নাম-ঠিকানাও টুকে রাখতেন। যদি পরের কোনো ছবিতে তাদের উপযুক্ত চরিত্র থাকতে, তাহলে তাদের দিয়ে অভিনয় করাতেন সত্যজিৎ।
এরকম দারুণ সব আয়োজন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে এক্সপ্লোরারি.ওআরজি। সত্যজিতের মনোজগতে উঁকি মারার জন্য তার ভক্তরা যেকোনো সময় ঘুরে আসতে পারেন এক্সপ্লোরারি.ওআরজি ওয়েব পোর্টাল থেকে।
-
সূত্র: স্ক্রল.ইন