মুস্তাফিজ জাদুও যথেষ্ট হলো না, ম্যাচ জিতল অস্ট্রেলিয়া
১০৪ রানের ছোট পূঁজি। এমন ম্যাচে সাকিব আল হাসানের এক ওভারে পাঁচ ছক্কায় ৩০ রান তুললেন ড্যান ক্রিশ্চিয়ান। ওই ওভারটিই ম্যাচের ফল নির্ধারণ করে দিতে পারতো। কিন্তু পরে বল হাতে জাদু দেখালেন মুস্তাফিজুর রহমান। অবদান রাখলেন নাসুম আহমেদ, মাহেদী হাসানরাও।
প্রাণপণ লড়াই করলো বাংলাদেশ, কিন্তু সেই লড়াই এবার আর যথেষ্ট হলো না। হারতে হারতে ক্লান্ত অস্ট্রেলিয়া পেল জয়ের স্বাদ। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৩ উইকেটে হারিয়েছে সফরকারীরা। সিরিজের স্কোর লাইন দাঁড়ালো ৩-১।
প্রথম তিন ম্যাচের তিনটিতেই বাংলাদেশের জয়। দুই ম্যাচ হাতে রেখেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে ছন্দময় বাংলাদেশের দেখা মেলেনি। প্রথম তিন টি-টোয়েন্টির মধ্যে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ১৩১। চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে আরও ছোট হয় বাংলাদেশের স্কোর।
শনিবার পাঁচ ম্যাচ সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে ৯ উইকেটে ১০৪ রান তোলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যান ৩০ রানের কোটাও পেরোতে পারেননি। সর্বোচ্চ ২৮ রান করেন নাঈম শেখ। বাংলাদেশের পাঁচজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রানও করতে পারেননি।
জবাবে বাজে শুরু হলেও ঝড় তুলে রান এগিয়ে দিয়ে যান ড্যান ক্রিশ্চিয়ান। এরপর আরও কয়েকটি উইকেট হারালেও জয়ের পথ ভোলেনি অস্ট্রেলিয়া। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের খুব কাছে পৌঁছে দেন অ্যাস্টন অ্যাগার। বাকি কাজটুকু সারেন অ্যাস্টন টার্নার ও অ্যান্ড্রু টাই। ১ ওভার বাকি থাকতে ৩ উইকেটের জয় তুলে নেয় অজিরা।
জয়ের লক্ষ্যে বাটিং করতে নেমে দলীয় ৩ রানেই অধিনায়ক ম্যাথু ওয়েডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। শুরুর ধাক্কার চাপ অবশ্য কাটিয়ে ওঠে তারা। শুধু কাটিয়ে ওঠাই নয়, ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ড্যান ক্রিশ্চিয়ান। সাকিব আল হাসানের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ৫টি ছক্কা মারেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
৪.৪ ওভারে ৪৭ রানে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। তখন মনে হয়েছিল ম্যাচটি সহজেই জিততে যাচ্ছে তারা। কিন্তু তখনই বেন ম্যাকডারমটকে ফেরান নাসুম আহমেদ। ক্রিশ্চিয়ানকেও আর ঝড়ের গতিতে ব্যাটিং করতে দেননি মুস্তাফিজ। ১৫ বলে একটি চার ও ৫টি ছক্কায় ৩৯ রান করা ক্রিশ্চিয়ানকে ফিরিয়ে দেন তিনি।
১১ রান পর ময়জেস হেনরিকস রান আউট হয়ে থামেন। এরপর দ্রুতই অ্যালেক্স ক্যারি ও মিচেল মার্শকে ফেরান মুস্তাফিজ ও মাহেদী হাসান। অ্যাস্টন অ্যাগার ও অ্যাস্টন টার্নার দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন।
সপ্তম উইকেটে ৩৪ রানের জুটি গড়েন তারা। জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে আউট হন অ্যাগার। এর আগে ২৭ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২৭ রান করেন তিনি। দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছানোর কাজটি সারেন টার্নার ও টাই। টার্নার ৯ ও টাই ৪ রানে অপরাজিত থাকেন।
এই ম্যাচেও অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন মুস্তাফিজ। প্রথম ওভারে মেডেনসহ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি এই পেসার ৪ ওভারে ৯ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন। মাহেদী হাসানের শিকারও ২ উইকেট। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নেন নাসুম আহমেদ শরিফুল ইসলাম। খরুচে সাকিব এদিন কোনো উইকেট পাননি। ৪ ওভারে ৫০ রান দিয়েছেন তিনি, টি-টোয়েন্টিতে এটাই তার সবচেয়ে খরুচে বোলিং।
এর আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশকে এদিনও ভালো শুরু এনে দিতে পারেননি দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার। দলীয় ২৪ রানে ফেরেন ব্যর্থতার বৃত্তে আটকে যাওয়া সৌম্য। আগের তিন ম্যাচে ৪ রান করা বাঁহাতি এই ওপেনার এদিন ৮ রান করে আউট হন।
আগের দুই ম্যাচে ১৭ বলে ২৬ রান করে করা সাকিব আল হাসান এদিন উইকেটে ধুঁকেছেন। ২৬ বলে একটি চারে ১৫ রান করে আউট হন তিনি। এরপর দ্রুতই ফেরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ৩ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি।
নুরুল হাসান সোহানও পারেননি দলের বিপদে ব্যাট চালাতে। মাহমুদউল্লাহর মতো তিনিও শূন্য রানে বিদায় নেন। এরপর সাজঘরের পথ ধরেন সর্বোচ্চ ২৮ রানের ইনিংস খেলা নাঈম। ছন্দে থাকা আফিফ হোসেন ধ্রুব এই ম্যাচেও দারুণ ব্যাটিং করতে শুরু করেন। কিন্তু ২০ রান করেই থামতে হয় তরুণ এই ব্যাটসম্যানকে। শেষের দিকে ২৩ রান করেন মাহেদী হাসান।
বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন ম্যাচ সেরা মিচেল সোয়েপসন। অ্যাডাম জ্যাম্পার বদলে একাদশে সুযোগ পাওয়া এই লেগ স্পিনার ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন। ডানহাতি পেসার অ্যান্ড্রু টাইও ৩টি উইকেট নেন, তার খরচা ১৮ রান। ২টি উইকেট নেন জস হ্যাজেলউড, একটি উইকেট পান অ্যাস্টন অ্যাগার।