২৩৩ বড় প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১,৬৭৬ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ মিলেছে
গত অর্থবছরে ব্যাংক-বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারিসহ ২৩৩টি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এসব প্রতিষ্ঠান সরকারকে ১,৬৭৬ কোটি টাকা ভ্যাট দেয়নি বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এনবিআর- এর নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (মূসক) এর মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো হিসাবে গড়মিল করে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অডিট করে এই ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অডিট ছাড়াও জরিপ করে ১,৯৭৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১,৪৫৮টিরই নিবন্ধন নেই- বলে প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা, যোগ করেন ড. মইনুল।
রাজস্ব ফাঁকির উদঘাটন ২০১৯-২০২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৫গুণ বেশী বলেও জানান তিনি।
এদিকে ভ্যাট গোয়েন্দা সূত্র জানায়, অডিটে সর্বোচ্চ রাজস্ব ফাঁকির প্রমাণ পাওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (পিসিএ) ৪৬২ কোটি টাকা।
এরপর প্রিমিয়ার ব্যাংক ১৪৫ কোটি, ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক ১২৬ কোটি, বেসিক ব্যাংক ১০১ কোটি, জনতা ব্যাংক ৫০ কোটি এবং আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ৪৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি দেয়।
সোনালী ব্যাংক ফাঁকি দেয় ৪৪ কোটি টাকা। আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ২৬ কোটি, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২৫ কোটি, ডিপিএসএসটিএস স্কুল ২৩ কোটি, কারিশমা সার্ভিসেস ২১ কোটি এবং লংকাবাংলা ফাইন্যান্স ২০ কোটি টাকা ।
তবে নিজস্ব জনবল, সোর্স, পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ, ব্যক্তি-বিশেষের গোপন অভিযোগপত্রের সূত্র থেকে ভ্যাট ফাঁকির প্রাথমিক প্রমাণ হওয়ার পর নগদ আদায় করা হয় ১৩৪.৬ কোটি টাকা।
এর মধ্যে আখতার ফার্নিচার ৪০ কোটি, মোহাম্মদী ট্রেডিং ৩৯ কোটি, চারুতা প্রাইভেট লিমিটেড ৩০ কোটি, উজালা পেইন্টস ২৭ কোটি, হোটেল লেকশোর ১৭ কোটি, ফুড ভিলেজ প্লাস ১৩ কোটি, ফুড ভিলেজ লিমিটেড ১৩ কোটি, ডিবিএল সিরামিক্স ৭ কোটি এবং খান কিচেন ৩ কোটি টাকা আদায় করা হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, গেল অর্থবছরে এ অধিদপ্তর কর্তৃক বিভিন্ন মার্কেটে খুচরা পর্যায়ে বিশেষ জরিপ পরিচালনা করা হয়। এসময়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিশেষ নির্দেশে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সর্বমোট ২৫টি মার্কেটে অবস্থিত ১৫,৪৮২টি দোকানে জরিপ পরিচালনা করা হয়। জরিপে দেখা যায়, নতুন আইন অনুযায়ী ১৩ ডিজিটের ভ্যাট নিবন্ধনের সংখ্যা খুবই কম।
বিশেষ করে, চলতি বছরের মে ২৪-৩১ তারিখ এক সপ্তাহের ১৭টি মার্কেট জরিপে দেখা যায়- মোট ১,৯৭৪ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নিবন্ধন পাওয়া যায় ৫১৬টির। বাকি ১৪৫৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কোন ভ্যাট নিবন্ধন নেই।
অর্থাৎ অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের হার প্রায় ৭৭.৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে, নিবন্ধিত ব্যবসার হার ২২.৬৪ শতাংশ। জরিপ অনুযায়ী মাসে ৫ হাজার টাকার উপরে ভ্যাট প্রদান করে মাত্র ১১৩টি প্রতিষ্ঠান। বাকি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিয়েছে, তবে তারা নামমাত্র ভ্যাট প্রদান করে।