চীনের কোভিড-১৯ লকডাউনে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে
দৈনিক সংক্রমণের সংখ্যা বাড়ায় কোভিড-১৯ সংক্রান্ত কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করছে চীন। এসব পদক্ষেপে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হবে, প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারেও।
ইতোমধ্যেই, প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর সরকারের কড়াকড়ির কারণে অস্থির চীনের পুঁজিবাজার। সম্প্রতি অনলাইন টিউশন ভিত্তিক কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপ দেশটিতে বিনিয়োগে অনুৎসাহিত করছে বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের। তার ওপর মহামারি মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপে অর্থনীতি প্রাণচাঞ্চল্য হারাচ্ছে। এতে করে আন্তর্জাতিক পুঁজিপ্রবাহ আরও বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন অভিজ্ঞ বাজার কৌশলবিদ ডেভিড রোচে।
গেল বছর মহামারির বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্বকে তাক লাগায় চীন। কিন্তু, এবার অতি-সংক্রামক ডেল্টা ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ায় বাড়ছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। গত সোমবার চীনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৪৩ জনের কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানায়। বার্তাসংস্থা রয়টার্স বলছে, গত জানুয়ারির পর এটিই ছিল সর্বোচ্চ দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা।
করোনাভাইরাস মহামারিতে বিশ্বে প্রথম প্রভাবিত অঞ্চল- উহান নগরেও বাড়ছে করোনা শনাক্ত রোগী। উহানে এখন করোনার গণ-টেস্টের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। এছাড়া, রাজধানী বেইজিংসহ প্রধান প্রধান শহরে আরোপিত হয়েছে চলাচলে কঠোর বিধিনিষেধ।
কঠোর লকডাউন ও গণ-টেস্টের মাধ্যমে এর আগে ভাইরাসের উঠতি প্রাদুর্ভাবগুলোকে নিয়ন্ত্রণে সফলতা পায় চীন। কিন্তু, কোভিডের বিরুদ্ধে চীনের এই 'শূন্য সহনশীলতা' নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন কিছু অর্থনীতিবিদ। তাদের আশঙ্কা, দেশটির সীমান্তের বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য স্থানেও অনুভূত হবে এর তীব্র প্রভাব।
তারা মনে করছেন, ডেল্টা ভেরিয়েন্ট সার্স কোভ-২ মূল ভাইরাসের তুলনায় অনেক বেশি মারাত্মক হওয়ায়- এটি নিয়ন্ত্রণে আনা বেশ কঠিন। আর সেজন্য ব্যাপক আকারে দেওয়া বিধিনিষেধের ফলে চীনা অর্থনীতি মন্দায় পড়তে পারে।
গত মঙ্গলবার অস্ট্রেলীয় ব্যাংকিং জায়ান্ট এএনজেড- এর অর্থনীতিবিদেরা এক প্রতিবেদনে জানান, "লকডাউন ও টিকাকরণের ফলে মধ্য-আগস্ট নাগাদ সংক্রমণ না কমলে এবং সংক্রমণ প্রভাবিত অঞ্চলের অর্থনীতি পুনঃউন্মুক্ত না করা গেলে; চলতি বছর চীনের অর্থনীতিতে ৮.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের যে আভাস আমরা দিয়েছি- তাতে পরিবর্তন আনতে হবে।"
বিশ্ব অর্থনীতিতে সামনেও দুর্দিন:
চীনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ার যেকোন ঘটনায় বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হোঁচট খাবে বলে উল্লেখ করেন ডেভিড রোচে।
তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, চীনজুড়ে লকডাউনের মতো পরিস্থিতি বৈশ্বিক সরবরাহ চক্রেও বাধা সৃষ্টি করবে। চীন শুধু সম্পূর্ণ পণ্য উৎপাদনেই এগিয়ে নেই বরং অসম্পূর্ণ পণ্যের উপকরণ রপ্তানিতেও সেরা। তাই এর নিশ্চিত আঘাত আসবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। পণ্যের দাম বাড়ার ফলে বিশ্বজুড়ে মুদ্রাস্ফীতি ধারণার চাইতেও অনেক গুণ বেশি হতে পারে।
রোচের ধারণা, বছরওয়ারি হিসাবে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিক শেষে চীনের অর্থনীতি ২-৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পতন লক্ষ্য করবে। আর দীর্ঘমেয়াদে প্রবৃদ্ধি নেমে আসতে পারে ৫-৬ শতাংশে।
"চীন কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শক্তিশালীভাবে উত্তরণের যে পথচলা শুরু করেছিল- তার সমাপ্তি ঘটবে। বিশ্বকেও দেখতে হবে একই নিয়তি। তাছাড়া, দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির এত কম গতি দেখে চীনা নাগরিকরাও অভ্যস্ত নন। বিশ্ববাসীর আগে তাদেরকেই নতুন বাস্তবতাটিকে গ্রহণ করতে হবে," যোগ করেন রোচে।
- সূত্র: সিএনবিসি