করোনা ভাইরাসের শহরে কেমন আছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা
চীনজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন সংক্রমণের কেন্দ্রস্থল উহানসহ অন্য শহরগুলোতে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা দেশে ফেরত আসতে চাইছেন। তারা চীনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
চীনে চান্দ্র নববর্ষের প্রাক্কালে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে সোমবার পর্যন্ত ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশজুড়ে ভাইরাসে দুই হাজার ৭৪৪ জনের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে চীন কর্তৃপক্ষ।
এমন অবস্থায় প্রথম সংক্রমণস্থল হুবেই প্রদেশের উহান শহর কার্যত ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে। শহরের রাস্তা জনমানবশূন্য।
ক্যাম্পাসের আশপাশে সুপার শপগুলো বন্ধ হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। চীনে নববর্ষের কারণে সরবরাহ কম থাকায় সব ধরনের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে বেগ হতে হচ্ছে তাদের।
উহান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ড. মো. এনামুল হক বলেন, "সন্দেহ নেই বর্তমানে আমরা কঠিন সময় অতিবাহিত করছি। এরপরও বলব বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা যারা উহান শহরে আছি, তাদের জন্য উহান শহরই করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহর। কারণ, এটি মোকাবেলা করার জন্য এই শহরে যে পরিমাণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বিশ্বের অন্য কোথাও এত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।"
তিনি বলেন, "চায়নার অন্য শহরগুলো থেকে উহানে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার জন্য স্পেশালিস্ট ডাক্তার নিয়ে আসা হয়েছে।"
বাংলাদেশি এ গবেষক জানান, চিকিৎসাকর্মীরা তাদের সবচেয়ে বড় উৎসবে (নববর্ষ) বাড়িতে না গিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালগুলোর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এই পরিস্থিতি প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করতে নির্দেশিকা নিয়মিতভাবে জানানো হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
উহানের সেন্ট্রাল চায়না নরমাল ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত শামিমা সুলতানা বলেন, "এখানের অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমি আতঙ্কের মধ্যে আছি। দুই বাচ্চা নিয়ে আমি উহানে আছি; আমার বিষয়টা ডিফিকাল্ট। রাস্তাঘাটে কোনো মানুষ নেই। কিছুদিন পর আমার খাবার-দাবারের সংকট দেখা দিবে।"
তিনি বলেন, "সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ, এখানে আমরা যারা বাংলাদেশিরা আছি, তারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই ব্যবস্থা নিলে ভালো হয়।"
জিংচু ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজিতে ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারিতে অধ্যয়নরত টুম্পা প্রামানিক বলেন, "নিঃসন্দেহে আমরা করোনা ভাইরাসের জন্য খুবই খারাপ সময় পার করছি। এর তুলনা করার সাধ্য নাই আমার। আপনারা দয়া করে ফেসবুকে করোনা ভাইরাস নিয়ে প্যানিক (আতঙ্ক) না করে করোনা ভাইরাসের জন্য সতর্ক থেকে মাস্ক ব্যবহার করুন। সাবধানে থাকুন।"
তিনি বলেন, "আমরা এখনো ভালো আছি, বেঁচে আছি। আমরাও দেশে যেতে চাই, তবে ভাইরাস নিয়ে নয়। আমরা নিয়ম মানছি, সতর্ক আছি।"
চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি বলে জানান বাংলাদেশ-চায়না ইয়ুথ স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এএএম মুজাহিদ। তিনি বলেন, "আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলটি উহানসহ অন্যান্য সিটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে তাদেরকে উদ্বিগ্ন না হয়ে নিজ নিজ বাসস্থানে নিরাপদে থাকতে বলা হচ্ছে।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চীনে বাংলাদেশ দূতাবাসের উপপ্রধান মাসুদুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, "আমাদের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী উহানে প্রায় ৩৫০ জন বাংলাদেশি আছেন। উহানে এখনো অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে বা চীনের অন্য কোনো স্থানে বাংলাদেশি কেউ করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের খবর নেই। আমি ইতিমধ্যে ঢাকায় জানিয়েছি এখানকার পরিস্থিতি।"
বাংলাদেশ দূতাবাস কোনো খোঁজ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি অনেক ছাত্র। এ বিষয়ে তিনি বলেন, "আমরা বেশিরভাগ অভিযোগ পাচ্ছি উহান শহর থেকে। কিন্তু শহরটি অচলাবস্থায় আছে। দূতাবাসে ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা দিচ্ছি। দূতাবাস কর্মকর্তারা পালাক্রমে ডিউটি দিচ্ছেন। আমরা উহানসহ অন্যান্য শহরের লোকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছি।"
তিনি আরও বলেন, "এখানে ওইচ্যাটে বাংলাদেশি গ্রুপ আই এম ইন উহান নাউ খোলা হয়েছে। এই গ্রুপে আমরাও আছি এবং সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা বাংলাদেশ সরকার, চীন সরকার স্থানীয় প্রশাসনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।"
মাসুদুর বলেন, অনেকে অভিযোগ করেছে যে উহানে দোকানপাট বন্ধ। কিন্তু আসল ঘটনা হচ্ছে ওই শহরে কয়েকটি বড় শপিং মল খোলা, যেখানে সব ধরনের জিনিস পাওয়া যাচ্ছে। ওই মলগুলোতে যাওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে শাটল বাসেরও ব্যবস্থা আছে।
তিনি বাংলাদেশিদের দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়েছেন। হুবেই প্রদেশের উহান শহর ছাড়া অন্য শহর থেকে বিমানে দেশে ফেরার সুযোগ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ
এদিকে চীনে থাকা বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশিদের একটা তালিকা করা হচ্ছে। দেশটি থেকে ফিরতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে আনার ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফেসবুকে তার ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোস্টে এ তথ্য জানান।