সাকিব-মুশফিকবিহীন বাংলাদেশের এবার টেস্ট পরীক্ষা
ওয়ানডেতে চোখে চোখ রেখে লড়াই করা, হোক সে যে প্রতিপক্ষই। টি-টোয়েন্টিতে লড়াইয়ের ধার কিছুটা কমে যায়। আর টেস্ট এলেই গড়বড় অবস্থা। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বহু পুরনো চেহারা এটা। মাঝে মাঝে সম্ভাবনা উঁকি দিলেও বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেট ঝলমলে হয়ে ওঠেনি এখনও। সর্বশেষ ভারত সফরে রীতিমতো নাজেহাল (২-০ ব্যবধানে হার) হতে হয়েছে মুমিনুল হকের দলকে।
সর্বশেষ সিরিজ থেকে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে তেমনও নয়। বরং, রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টের আগে বাংলাদেশ শিবিরে না পাওয়ার বেদনা ভর করেছে। আইসিসির নিষেধাজ্ঞার কারণে দলে নেই প্রাণ ভোমরা সাকিব আল হাসান। নিরাপত্তা ইস্যুতে পাকিস্তান সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ব্যাটিং অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম।
দীর্ঘদিন পর এই দুই ক্রিকেটারকে ছাড়া মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সময়টা এমন যে, তাঁদের না থাকা রীতিমতো আফসোসে পরিণত হয়েছে। সাকিব-মুশফিকের অনুপস্থিতিতে ওলট-পালট হয়ে যাচ্ছে ব্যাটিং অর্ডার, সাজাতে হচ্ছে নতুন পরিকল্পনা। যদিও পেছন ফিরে দেখছে না মুমিনুল হকের দল। পিন্ডি টেস্ট দিয়ে ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে প্রস্তুত বাংলাদেশ।
দল টানা হারের মধ্যে থাকলেও পিন্ডি টেস্টের আগেরদিন আশার কথাই শোনালেন মুমিনুল হক। টানা হারের বৃত্ত ভাঙার ব্যাপারে টেস্ট অধিনায়ক বলছেন, ‘দেখুন এক সময় না এক সময় তো ব্রেকটা ভাঙতেই হবে। ইনশাআল্লাহ এই ব্রেকটা ভাঙতে সবাই প্রস্তুত। দল খুব ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। ওই হিসেবে চিন্তা করলে আমরা আশাবাদী ম্যাচটি নিয়ে।’
বিদেশের মাটিতে যে বাংলাদেশের টেস্ট পারফরম্যান্স যে মনে রাখার মতো নয়, সেটাও মাথায় আছে মুমিনুলের। ভালোর শুরুটাও এই টেস্ট থেকে করতে চান তিনি, ‘বিদেশের মাঠে আমাদের ভালো পারফর্ম হয়নি। চেষ্টা করছি এই জিনিসটি এখান থেকে শুরু করার জন্য। সব মিলিয়ে আমরা ভালো ফোকাসে আছি। আশা করছি আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব।’
বিসিএলে ট্রিপল সেঞ্চুরি করে পাকিস্তানে গেছেন অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। পাকিস্তানের কন্ডিশনে তামিমের সমস্যা হবে না বলে বিশ্বাস মুমিনুলের। তামিমে আস্থা রাখা বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকের অভাবের কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
মুমিনুল বলছেন, ‘তামিম ভাই ওয়ার্ল্ড ক্লাস প্লেয়ার। মনে হয় না উনার জন্য খুব বেশি সমস্যা হবে। বিসিএলে উনি অনেক ভালো একটি ইনিংস খেলেছেন। আমার মনে হয় বিশ্বমানের একজন খেলোয়াড় হিসেবে খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবেন। মুশফিক ভাই নেই, তাঁকে আমরা মিস করব। আমার মনে হয় জুনিয়র প্লেয়ারদের জন্য এটা বড় সুযোগ।’
মুশফিক না থাকায় ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন আনতেই হচ্ছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের প্রধান কোচ রাসেল ডমিঙ্গো দুদিন আগে জানিয়েছেন, মুশফিকের জায়গায় (চার নম্বরে) ব্যাটিং করবেন অধিনায়ক মুমিনুল। তিনে নাজমুল হোসেন শান্ত, পাঁচে মোহাম্মদ মিঠুন ও ছয়ে মাহমুদউল্লাহকে খেলানো হবে। সাতে লিটন দাসকে খেলানোর কথা জানিয়েছেন ডমিঙ্গো। এ ছাড়া ইনিংস উদ্বোধনের দায়িত্ব থাকবে তামিম ইকবাল ও সাইফ হাসানের ওপর।
তিনজন পেসার নিয়ে বাংলাদেশের মাঠে নামার সম্ভাবনা বেশি। ২০১৮ সালে জুলাইয়ে সর্বশেষ টেস্ট খেলা রুবেল হোসেনসহ টেস্টের অটো চয়েজ হয়ে ওঠা আবু জায়েদ রাহি ও এবাদত হোসেনকে নিয়ে মাঠে নামতে পারে বাংলাদেশ। স্কোয়াডে দুজন স্পিনার থাকলেও শুধু তাইজুল ইসলামকে খেলানো হতে পারে। এই মাচে নাঈম হাসানের সুযোগ না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
পাকিস্তানও তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামতে পারে। মোহাম্মদ আব্বাস, নাসিম শাহ ও শাহিন আফ্রিদিদের ওপর ভরসা রাখতে পারে স্বাগতিকরা। লেগ স্পিনার ইয়াসির শাহর একাদশে থাকা নিশ্চিত। বাঁহাতি স্পিনার হারিস সোহেলও থাকবেন একাদশে। ইনিংস উদ্বোধন করতে দেখা যেতে পারে শান মাসুদ ও আবিদ আলীকে। এরপর যথাক্রমে ব্যাটিং করবেন অধিনায়ক আজহার আলী ও বাবর আজম।
১৬ বছর পর পাকিস্তানের মাটিতে এবং পাঁচ বছর পর দলটির বিপক্ষে টেস্ট খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ২০১৫ সালের মে মাসে দেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষে ১০টি টেস্ট খেললেও কোনো ম্যাচে জেতা হয়নি বাংলাদেশের। ৯টিতে জিতেছে পাকিস্তান, একটি ম্যাচ ড্র হয়েছে।
সর্বশেষ পাঁচ টেস্টের সব কটি ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষেও হেরেছে তারা। অন্যদিকে পাকিস্তান তাদের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের একটিতে জয়, একটি ড্র ও তিন ম্যাচে হেরেছে। তবে এই ম্যাচের ভেন্যু থেকে কিছুটা আত্মবিশ্বাস নিতে পারেন মুমিনুল-তামিমরা। ২৩ বছর ধরে রাওয়ালপিন্ডিতে জয়ের মুখ দেখেনি পাকিস্তান। বাংলাদেশ সময় বেলা ১১টায় শুরু হবে রাওয়ালপিন্ডি টেস্ট।
বাংলাদেশ একাদশ (সম্ভাব্য): তামিম ইকবাল, সাইফ হাসান, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক (অধিনায়ক), মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), তাইজুল ইসলাম, রুবেল হোসেন, আবু জায়েদ রাহি ও এবাদত হোসেন।
পাকিস্তান একাদশ (সম্ভাব্য): শান মাসুদ, আবিদ আলী, আজহার আলী (অধিনায়ক), বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), হারিস হোসেল, আসাদ শফিক, ইয়াসির শাহ, মোহাম্মদ আব্বাস, নাসিম শাহ ও শাহিন আফ্রিদি।