দেশে সৌদি জাতের খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের তরুণ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা ওবায়দুল ইসলাম রুবেল (৩২) বাংলাদেশে সৌদি জাতের খেজুর চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। তার সাফল্যের সেই গল্প প্রকাশ পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আরব নিউজে।
৪ বছর আগে যখন তিনি প্রথম সৌদি জাতের খেজুর চাষের ধারণা নিয়ে আসেন, তখন তার সেই পরিকল্পনায় কেউ বিশ্বাস রাখেনি। এখন প্রায় ৪ বছর পর, তার গাছে শত শত কেজি আরবীয় খেজুর ঝুলতে দেখে অবাক হচ্ছেন স্থানীয়রা; বিদেশি সংবাদমাধ্যমও দিয়েছে তার এই সাফল্যের স্বীকৃতি।
রুবেল, তার বাবা মোকসেদুল মণ্ডলের খামার থেকে চাষাবাদের প্রাথমিক অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। তবে, খেজুর চাষ সম্পর্কে তার কোনো ধারণা ছিল না বলেই তিনি জানান।
ইউটিউবের ভিডিও থেকে তিনি এ সম্পর্কে প্রথম জানতে পেরেছিলেন এবং ২০১৭ সালে দেড় বিঘা জমিতে আরবীয় এই খেজুর চাষের সিদ্ধান্ত নেন।
রুবেল বলেন, "আমার আশেপাশের সবাই আমাকে এখানে সৌদি জাতের খেজুর চাষে নিরুৎসাহিত করেছিল। একমাত্র ব্যক্তি যিনি আমাকে এই প্রচেষ্টায় সমর্থন করেছিলেন তিনি হলেন আমার বাবা, মোকসেদুল মণ্ডল।"
তার এই পরিকল্পনায় স্থানীয়রা, তার প্রতিবেশীরা হাসাহাসি করতো বলেও তিনি জানান। এ কারণে তার বাবা স্থানীয় বাজারে অন্যান্যদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎও বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, সৌদি প্রবাসী এক বন্ধুর সহযোগিতায় প্রাথমিকভাবে ৮৩০টি চারা এনে চাষ শুরু করেন রুবেল।
তিনি বলেন, "এটি হাজারো প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের মতোই ছিল।"
বর্তমানে তার বাগানে ১৯ ধরনের প্রায় তিন হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। এরমধ্যে বিখ্যাত সুখারি, আম্বার, বারহির মতো জনপ্রিয় খেজুরও রয়েছে। চলতি বছরের ভরা মৌসুমে, আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর মিলিয়ে ২০০ কেজিরও বেশি খেজুর বিক্রি করেছেন তিনি।
এছাড়া, আগামী বছর ফলন চারগুণ হবে বলে তিনি আশা করছেন।
রুবেল জানান, "যদি ফুল আসার সময়ে গাছের সঠিক পরিচর্চা করা হয়, তাহলে ফলন ভালো হয়। আমার বাগানে সামনের বছরগুলোতে আরও বেশি খেজুর উৎপাদন হবে, কারণ গাছগুলো এখন বড় হচ্ছে।"
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আবহাওয়া এবং মাটি খেজুর চাষে যথেষ্ট উপযোগী। তাই রুবেল চান, এই অঞ্চলের আরও মানুষ বিদেশি খেজুর চাষে এগিয়ে আসুক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নজরুল ইসলাম বলেন, "এলাকাটি সৌদি খেজুর চাষের জন্য উপযোগী; কারণ এর জলবায়ু অনেকটা মধ্যপ্রাচ্যের মতো। এছাড়া সৌদি জাতের খেজুর কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রেও বেশি প্রতিরোধী।"
তবে এই প্রকল্পে সফল হতে রুবেল ও তার বাবার মতো সময় এবং ধৈর্য প্রয়োজন।
রুবেল বলেন, "সৌদি খেজুরের চাষাবাদ থেকে ভালো ফল পাওয়ার জন্য কৃষকদের ধৈর্য ধরতে হবে; কারণ খেজুর বাড়াতে একটু বেশি সময় লাগে। আর এই খেজুরে পোকামাকড়ের আক্রমণের সম্ভবনাও কম।"
- সূত্র: আরব নিউজ