চাঁপাইনবাবগঞ্জে গড়ে উঠছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ প্রথম পর্যটন কেন্দ্র
আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে বদলে যাচ্ছে সুস্বাদু ও উন্নতমানের আমের জন্য বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এ পর্যটন কেন্দ্রে একটি ছয়তলা আবাসিক হোটেল, আমবাগান, ম্যাঙ্গো মিউজিয়াম, অ্যাম্ফিথিয়েটার, সুইমিংপুল, টেনিস কোর্ট, পিকনিক স্পট ও শিশুদের খেলার উপযোগী বিভিন্ন রাইড গড়ে তোলা হবে।
প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্পন্ন এ পর্যটন কেন্দ্র। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে উত্তর-পশ্চিমের জেলাটি। স্থানীয়রা মনে করছেন, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের ফলে অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল হবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
পর্যটন কেন্দ্রটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা সেতুসংলগ্ন এলাকায় ৪৪.৫ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে।
নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য প্রাথমিক অবস্থায় ৪৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চাহিদা মোতাবেক আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানান বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা) ও প্রকল্প পরিচালক মো. জিয়াউল হক হাওলাদার।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এখন মাটি ভরাটের কাজ চলছে। আশা করি সামনের মাসের মধ্যে শতভাগ মাটি ভরাটের কাজ শেষ হবে। আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এই প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে।'
জিয়াউল হক জানান, ৪৪.৫ একর জমির ওপর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যেহেতু জায়গাটি অনেক বড়, তাই পর্যটন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) সংশোধন করে পর্যটকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ডিপিপিতে নতুন নতুন বিষয় যুক্ত করা হচ্ছে। এর ফলে পর্যটন কেন্দ্র আরও আধুনিক ও উন্নত হবে।
তিনি আরও বলেন, 'অনুমোদনের সময় ২০১৮ সালে প্রকল্পটির বরাদ্দ ছিল ৪৬ কোটি টাকা। যেহেতু প্রকল্পে নতুন নতুন আরও অনেক বিষয় যুক্ত করে ডিপিপি সংশোধন করা হয়েছে, তাই প্রকল্পের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।'
তবে প্রথম পর্যায়ে বরাদ্দকৃত ৪৬ কোটি টাকার ডিপিপি অনুযায়ী যে কাজগুলো কার্যকরী ও ব্যবসা-সম্পর্কিত এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়ক হবে, সেই কাজগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
প্রথম পর্যায়ে পর্যটন কেন্দ্রে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ছয়তলা আবাসিক হোটেল, ছয় একর জমির ওপর আম বাগান, স্টাফ কোয়ার্টার, পিকনিক শেড তৈরি করা হবে বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
তিনি জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রকল্পটিতে একটি সিনেপ্লেক্স, সুইমিংপুল, ইকো মিউজিয়াম, ম্যাংগো মিউজিয়াম, অ্যাম্ফিথিয়েটার, শিশুদের খেলার জন্য বিভিন্ন রাইড ও একটি টেনিস কোর্ট থাকবে—যাতে পর্যটকরা এসে টানা তিন-চার দিন থাকতে পারেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জকে আমের রাজধানী বলা হয়। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রচুর পুরার্কীতি ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। অথচ এ জেলায় সে অর্থে কোনো পর্যটন কেন্দ্র নেই। নতুন এই পর্যটন কেন্দ্র পর্যটকদের টানবে। আবার যেখানে পর্যটন কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে, সেটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে। পদ্মা নদীর পাশে ও মহানন্দা নদীর তীরে হওয়ায় পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দেবে।
ওয়াহেদ বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মৌসুমে ৮ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রি হয়। প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার মানুষ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রবাসী হয়ে প্রচুর রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। এই জেলায় রহনপুর রেল পোর্ট ও সোনা মসজিদ স্থল বন্দর রয়েছে। এছাড়া জেলার সুগন্ধি চালের সুনাম দেশজুড়ে রয়েছে।
এরকম একটা শক্তিশালী অর্থনীতির জেলায় একটি পর্যটন কেন্দ্র খুব দরকারি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যটন কেন্দ্রটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাস্তবায়নে বিলম্ব
প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুনে। তবে এখনও শুরু হয়নি প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ। কয়েক বছরে শুধু সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ হয়েছে। এখন চলছে ভূমি উন্নয়নের কাজ।
প্রকল্পটির নির্মাণকাজ হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের অধীনে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ এম ইফতেখার মজিদ বলেন, 'প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (আরডিপিপি) মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলে বাকি কাজ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।'
প্রকল্পটির ধীরগতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল ওদুদ।
তিনি বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক উন্নয়ন প্রকল্প। ২০১৫ সালে মহানন্দা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা সেতু উদ্বোধনে এসে প্রধানমন্ত্রী এ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ এখনও প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়নি।
এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তা এ অঞ্চলের উন্নয়নে সহায়ক হবে। তাই দ্রুত এ প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি করেন ওদুদ।