অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক রাজস্ব আয়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের সংকেত
করোনা মহামারির মধ্যেই শুরু হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আহরণে ১৬.৭২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য আমদানি ও মানুষের ব্যক্তিগত আয়ের ওপর কর বাবদ এ রাজস্ব আহরণ করে সরকার। অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আহরণের এ প্রবৃদ্ধি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের চিহ্ন মনে করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
এনবিআরের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনার কারণে গত বছর এই সময় রাজস্ব আহরণ বেশ কম ছিল। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক হওয়ার পাশাপাশি রাজস্ব ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশন, উৎসে কর আহরণে জোরদার ও রাজস্ব বোর্ডের নজরদারি ব্যবস্থা দৃঢ়করণের ফলে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, "করোনার প্রথম ধাক্কা সামলে অনেকটাই গতি ফিরে পেয়েছিল অর্থনীতি। চলতি বছরের শুরু থেকেই আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে, স্থানীয় উৎপাদন ও সরবরাহ–শৃঙ্খলেও গতি এসেছে। ফলে, রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। তবে ছোট প্রতিষ্ঠান ও নিম্নআয়ের মানুষের আয় স্বাভাবিক হয়নি। রাজস্বে এর প্রভাবও সেভাবে থাকে না।"
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্যানুযায়ী রাজস্ব আহরণে সবচেয়ে ভালো করেছে পণ্য আমদানি পর্যায়ের কাস্টম রেভিনিউ আহরণ। সাময়িক হিসাবে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে এনবিআর। কাস্টমস খাতে তিন মাসে আহরণ ১৯,৩০৯ কোটি টাকা। যদিও, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১,৭২৭ কোটি টাকা।
কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে আগের অর্ডারের প্রচুর পণ্য দেশে প্রবেশ করেছে। সিমেন্টের ক্লিংকার, স্টিল সামগ্রী ও মেশিনারি আমদানি বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে।
কাস্টমের মতোই ভ্যাট খাতেও বেশি সফলতা এসেছে এনবিআরের। মূলত বৃহৎ কোম্পানির কাছ থেকে ভ্যাট সংগ্রহের জন্য গঠিত লার্জ ট্যাক্স পেয়ার ইউনিট (ভ্যাট) থেকেই বেশি সফলতা এসেছে।
রাজস্ব বোর্ড সূত্র বলছে, ভ্যাট খাতে ২৩,০৪০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২১,০৯২ কোটি টাকা রাজস্ব এসেছে প্রথম তিন মাসে। প্রবৃদ্ধি ১৬.৪৫ শতাংশ।
মূলত বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি ও নজরদারি ব্যবস্থা শক্তিশালী হওয়ার কারণে এ সফলতা বলে মনে করছেন ভ্যাট বিভাগের একজন কর্মকর্তা।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের উৎস খাত থেকেই করের ৮০ শতাংশ আহরণ করে এনবিআর। তবে এ খাতে অন্য দুটির তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে সংস্থাটি। প্রথম প্রান্তিকে আয়করে প্রবৃদ্ধি এসেছে ১২.৭৪ শতাংশ।
অর্থবছরের শুরুতে আয়কর খাতেই সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি থাকা উচিত ছিল বলে মনে করছেন আব্দুল মজিদ।
তিনি বলেন, "করের অংশই উৎস বাবদ কেটে রাখা হয়। এটার জন্য এনবিআরের মনিটরিং দরকার হয় না। করদাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি কেটে রাখায় এ খাতে আহরণ কিছুটা সহজ।"