বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের জন্য প্রস্তুত নয় অবকাঠামো
বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের অধীনে সম্প্রতি পাইলট রুটের খসড়া নীতি এবং বাসের নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে ঘাটারচর-কাঁচপুর রুটে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের পাইলটিং শুরু হবে। ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রুটে ৩৬ আসন বিশিষ্ট ১২০টি বাস চলবে।
তবে রুটের উভয় প্রান্তে দুটি বাস ডিপো এবং বাস বে (যাত্রীদের ওঠা-নামার সুবিধার্থে ট্রাফিক লেন সংলগ্ন বাঁকানো স্থান)-এর মতো অবকাঠামো এখনো রয়েছে অসম্পূর্ণ অবস্থায়। কিন্তু প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাস বে এবং ডিপো অপরিহার্য। এমনকি প্রকল্পের নিয়মে স্পষ্টভাবে এসব নির্দেশনা দেওয়া আছে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাস পার্কিং বা রাতের পার্কিং করতে হবে বাস টার্মিনাল বা ডিপোতে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, নীতিমালা মেনে চলার ব্যাপারে তারা আশাবাদী এবং সে অনুযায়ী সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে বাস রুট র্যাশনালাইজেশনের প্রকল্প পরিচালক এবং ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) উপ-পরিবহন পরিকল্পনাকারী ধ্রুব আলম বলেন, বাস বে না থাকায় বাস চলাচলে কোনো বাধা আসবে না। বে তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সড়কে সাদা রঙ দিয়ে বাস স্টপেজ আউটলাইন করা হবে।
তিনি বলেন, 'আমাদের প্রায় ১৬টি বাস বে এবং ৪০টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এই কাজ শেষ হতে কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।'
বাস ডিপো সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘাটারচরে জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। শিগগিরই সেটি চূড়ান্ত হবে। এই জমিতেই সব বাস পার্ক করা হবে বলে জানান তিনি। এছাড়াও, দ্বিতীয় ডিপোর জন্য কাঁচপুর এলাকায় একটি জমি ঠিক করা হয়েছে। তবে জমিটি প্রস্তুত হতে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে যোগ করেছেন ধ্রুব।
নীতিতে কী বলা হয়েছে?
২০১৯ সালের পর কেনা বাসগুলোকে প্রস্তাবিত নকশা অনুযায়ী রঙ করে সেগুলোকে প্রস্তুত করছেন পরিবহন মালিকরা। ১ ডিসেম্বর থেকে এই রুটে কেবল নতুন বাসগুলোই চলাচল করতে পারবে।
এই রুটটি 'গ্রিন ক্লাস্টার'-এ থাকায় বাসগুলোর মূল রং হবে সবুজ। তার ওপরে থাকবে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বেনারসি শাড়ির আদলে আঁকা লাল ফিতে।
এসব বাসের মালিকরা একটি যৌথ উদ্যোগ চুক্তির অধীনে বাস পরিচালনা করবেন। তাছাড়া, বাস পরিচালনা বিষয়ক সকল পদ্ধতি ঠিক করার জন্য ডিটিসিএ ইতোমধ্যেই একটি খসড়া নীতি চূড়ান্ত করেছে।
এমনকি, স্টাফ ও যাত্রীদের আচার-আচরণ, যাত্রী নিরাপত্তা, দায়িত্ব, সুবিধা, নিষেধাজ্ঞা, বাসের ফিটনেস এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ও উল্লেখ করা হয়েছে নীতিতে।
পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ ১০ মিনিটের মধ্যে এবং অফ-পিক আওয়ারে ১৫ মিনিটের মধ্যে বাসগুলো টার্মিনাল ছেড়ে যাবে। প্রতিটি স্টপেজে সর্বোচ্চ দুই মিনিট অপেক্ষা করবে বাসগুলো। এর বাইরে অন্য কোথাও বাস থামানো যাবে না।
তাছাড়া, প্রতিটি স্টপে টিকিট কাউন্টার থাকবে। কাউন্টার ছাড়া কোনো টিকিট কেনা বা বিক্রি করা যাবে না। বাসে ভ্রমণের জন্য যাত্রীদের অবশ্যই টিকিট থাকতে হবে। প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ধার্য করা হবে ২ টাকা ২০ পয়সা।
নতুন নিয়ম অনুসারে, যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর সুবিধার্থে এসব বাসে একটি হটলাইন নম্বরও দেওয়া থাকবে। এছাড়া, বাসের ভেতরে ভিক্ষা করা এবং পণ্য বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতি ব্যতীত কোনো বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা হবে না বাসে। যদি কোনো বাসে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়, তাহলে সেই বাসের রুট পারমিট প্রত্যাহার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে। পাশাপাশি, এসব বাসের চালক ও হেলপারদের আলাদা ইউনিফর্ম থাকতে হবে।
ডিটিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রকিবুর রহমান বলেন, 'এটি শুধুমাত্র একটি প্রাথমিক পদক্ষেপ এবং একটি অস্থায়ী নীতি। আমাদের নগর পরিবহনে একটি সুশৃঙ্খল সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।'