বন্ধ পাঁচ পাটকলের ইজারা পেল পাঁচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান
পাটকল বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়া চলছে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে। অবশেষে গত বছর বন্ধ হওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি পাটকল ইজারা দিতে পাঁচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)।
নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ইউনিটেক্স গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, মিমু জুট মিল, বিদেশি বিনিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বে গ্রুপ এবং যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক।
ইজারা দেওয়া পাটকলগুলো হলো: চট্টগ্রাম অঞ্চলের হাফিজ জুট মিলস ও কেএফডি জুট মিলস, ঢাকা অঞ্চলের বাংলাদেশ জুট মিলস এবং জাতীয় জুট মিলস এবং খুলনা অঞ্চলের ক্রিসেন্ট জুট মিলস।
পাটকলগুলোর মধ্যে কেএফডি জুট মিলসের অন্তর্ভুক্ত কর্ণফুলী জুট মিলস, কর্ণফুলী কার্পেট কারখানা এবং ডাইভারসিফাইড ডেকোরেটিভ ফেব্রিক্স- এই তিনটি ইউনিট রয়েছে।
ইজারার চুক্তি পাঁচ থেকে ২০ বছর মেয়াদী হবে। পরবর্তীতে চুক্তির সময়সীমা বাড়ানো যাবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কারখানার জমি, যন্ত্রপাতি এবং সুবিধাদি কেবলপাত্র পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারবে।
ইজারার শর্ত অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণের জন্য পাটকলের সম্পত্তি বন্ধক রাখতে পারবে না।
বিজেএমসির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রউফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সরকারি অনুমোদন পাওয়ার পর নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ফল প্রকাশের প্রজ্ঞাপন পাঠিয়েছি। চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে ২৪ মাসের অগ্রীম ভাড়া দিতে হবে।"
সাদ মুসা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং চেয়ারম্যান মো. মোহসিন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা স্থানীয় ও অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য পাট এবং পাটজাত পণ্য উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উৎপাদন পুনরায় চালু করতে কী পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে, তা কলগুলো পরিদর্শন ও বিচারের পর বলতে পারব।"
মুসা গ্রুপের পাটকল চালানোর পূর্ব-অভিজ্ঞতা আছে বলেও উল্লেখ করে মো. মোহসিন বলেন, এখন আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ পাটজাত পণ্য উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
"আমাদের পুরোনো বিদেশি ক্রেতাদের মধ্যে পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ দেখে আমরা কলগুলো ইজারায় নিয়েছি," বলেন তিনি।
বিজেএমসি কর্মকর্তারা জানান, জাতীয় জুট মিলস, ক্রিসেন্ট জুট মিলস এবং বাংলাদেশ জুট মিলস এই তিনটি কলের প্রস্তাব ও দরপত্র মূল দরের চেয়ে বেশি থাকলেও অপর দুই কলের দরপত্র বিজেএমসির প্রত্যাশার চেয়ে কম ছিল।
দর কম থাকা সত্ত্বেও কল দুটো ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কর্মকর্তারা।
বছরের পর বছর ধরে লোকসান গুনতে থাকা ২৫টি পাটকলগুলো গতবছর বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ফলে প্রায় ২৫ হাজার কর্মী কাজ হারায়।
পরবর্তীতে, ২০১৮ সালের বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন অনুযায়ী কলগুলো বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
চলতি বছরের এপ্রিলে বিজেএমসি বন্ধ পাটগুলোর মধ্যে ১৭টি পাটকল ইজারা দানের জন্য দরপত্র আহ্বান করে।
দুইটি ভারতীয় ও একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানসহ ২৪টি প্রতিষ্ঠান ইজারা গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৪টি কলের বিরপরীতে ৫৯টি প্রস্তাবনা জমা পড়ে। তবে, খুলনার তিনটি কল কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়া পায়নি।
পরবর্তীতে বিজেএমসি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা আহ্বান করে। তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি জুট মিল বাদ দিয়ে ১২টি কলের জন্য প্রস্তাবনা জমা দেয়। এর মধ্যে কমিটি ২৫টি প্রস্তাব বাছাই করে।
বাছাইকৃত ২৫টি প্রস্তাবনা চূড়ান্তভাবে বাছাইয়ের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়।
পাঁচটি কলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও দরপত্রে তোলা বাকি ১২টি কলের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছে পাটকল করপোরেশন।