বাঙালিদের সঙ্গে আমরা অন্যায় করেছি: পাকিস্তানি বিজ্ঞানী
পাকিস্তানি পরমাণু বিজ্ঞানী পারভেজ আমিরালি হুদভয় মনে করেন, তার দেশ বাংলাদেশিদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করেনি। বরং পাকিস্তানি শাসনামলে বাঙালিদের সব সময় বঞ্চিত করা হয়েছে। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে শোষণ ও অপমান করে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এদেশের মানুষকে পাকিস্তানি সেনারা নির্বিচারে হত্যা করেছে বলেও স্বীকার করেন তিনি।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এমন আচরণের প্রধান কারণ তাদের বর্ণবাদী মনোভাব। এই মনোভাব থাকার কারণেই তারা বাঙালিদের নিচু জাতি বলে মনে করতো। পাকিস্তানের বন্দরনগরী করাচিতে ‘আদাব ফেস্টিভ্যাল’ শীর্ষক একটি সাহিত্য উৎসবে অংশ নিয়ে হুদভয় এসব কথা বলেন। গত ৩১ জানুয়ারি শুরু হয়ে ২ ফেব্রুয়ারিতে পর্যন্ত চলে এই আয়োজন।
৬৯ বছরের পারভেজ আমিরালি হুদভয় একাধারে বিজ্ঞানী, লেখক এবং মানবাধিকার কর্মী। নিজ দেশে মৌলবাদ বিরোধিতা, বাক-স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িকতা এবং আধুনিক শিক্ষা প্রসারের স্বপক্ষে তিনি একজন বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর।
পাকিস্তানি জনতাকে ১৯৭১ সালের প্রকৃত পরিস্থিতি স্বীকার করার আহবান জানিয়ে পারভেজ হুদভয় বলেন, গত ৭৩ বছর ধরে আমরা নিজেদের কাছেই প্রকৃত সত্যকে লুকিয়ে রেখেছি। আমরা সেদিনও এই ব্যাপারে মিথ্যা ভেবেছি, আজকেও সেই মিথ্যে নিয়েই বেঁচে আছি।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের জনক খোদ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সমালোচনাও করেন তিনি। পারভেজ বলেন, জিন্নাহ দ্বিধাগ্রস্ত ব্যক্তি ছিলেন, তাই তার পক্ষে রাষ্ট্রের প্রকৃত লক্ষ্য এবং আদর্শ স্থির করা সম্ভব হয়নি। ফলে পাকিস্তানে আজ ব্যাপক সংশয় ও শঙ্কার পরিবেশ। কারণ পাকিস্তানের জন্মই হয়েছিল সংশয়ের মধ্য দিয়ে।
জিন্নাহর চিন্তাধারা দ্বিজাতি তত্ত্বের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই বিজ্ঞানী। এর সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, জিন্নাহ পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে। সেই রাজনীতির ফসল হিসেবে উপমহাদেশে চির বৈরী দুটি দেশের জন্ম হয়েছে। আজন্ম এই শত্রুতার কারণেই এই অঞ্চলে কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়।
জিন্নাহর রাষ্ট্রচিন্তায় থাকা দ্বিতীয় আরেক তত্ত্বের ব্যাখ্যাও করেন তিনি। যা প্রধানত শুধু মুসলমানদের নিয়ে একটি রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ হিসেবে কাজ করেছিল।
পারভেজ হুদভয় মনে করেন, শুধু ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্রগঠনের এই উদ্যোগ অমানবিক হলেও তা আসলে কার্যকর। বর্তমান ভারতে নরেন্দ্র মোদীর শাসনামলই এর প্রমাণ। কিন্তু বাঙালিদের তো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে অন্যায় আর বৈষম্যের শিকার হওয়ার কথা ছিল না। বৈষম্য না হলে আজ বাংলাদেশ নামক কোনো রাষ্ট্রও জন্ম নিতো না। ভুলটা তাহলে কোথায়?
তিনি বলেন, আসলে ভুল নয় বরং রাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিক ইতিহাসে মিথ্যে বলা হয়েছে। এই কারণেই আমি এই ইতিহাসকে চ্যালেঞ্জ করি। পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন এবং তা টিকিয়ে রাখার জন্য কিছু শক্তিশালি মৌলভিত্তির দরকার ছিল। ফেডারেশন রাষ্ট্র হবে নাকি হবে নন-ফেডারেশন সেটা নির্ধারণ করেননি জিন্নাহ। আরও প্রয়োজন ছিল আধুনিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি অগ্রসরের এই যুগে রাষ্ট্র কিভাবে টিকে থাকবে তার আলোচনা। কিন্তু এর কোনোটাই করা হয়নি। তাই পাকিস্তান এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে দিয়েই জন্ম নিয়েছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই।