রবীন্দ্রনাথের জীবনের যে কাহিনিগুলো আপনি আগে শোনেননি (পর্ব-১)
রবীন্দ্রনাথ বিপ্লবী ছিলেন এ নিয়ে অনেকের দ্বিমত থাকলেও, বিপ্লব বা বিপ্লবীর আটপৌরে সংজ্ঞা অনুযায়ী তিনি কিন্তু কিছু কম ছিলেন না! তার জীবনদর্শন বাঙ্গালীর মানসপটে যে এক গভীর বিপ্লব এনেছিল সে-কথা স্বীকার করতেই হবে।
রবীন্দ্রনাথকে জানা মানে নিজেকে চেনা। যত বেশি রবীন্দ্রনাথকে আমরা জানবো, ততবেশি আমরা নিজেকে ঢেলে নতুনরূপে সাজাতে পারবো। তার মানবতা, নম্রতা, জীবপ্রেম এমনকি কৌতুকরসও আমাদের জীবনের জন্য পাথেয়স্বরূপ।
তার জীবনের তেমনি কয়েকটি গল্প নিয়েই আমাদের এই ধারাবাহিক। আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
ঘটনা-১
তখন কলকাতা শহরে কংগ্রেসের অধিবেশন বসেছে। তারকনাথ পালিতের বাসায় ডিনার পার্টির আয়োজন। অনেক দূর দূরান্ত থেকেও নেতারা এসে পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। ইংরেজদের এ পার্টিতে ধুতি পাঞ্জাবী পড়ে পুরোদস্তুর বাঙ্গালিয়ানা ভাব নিয়ে বসে আছেন চারজন ব্যক্তি। এই চারজন হল জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির রবীন্দ্রনাথ, সমরেন্দ্রনাথ, গগনেন্দ্রনাথ এবং অবনীন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথ খেয়াল করলেন, পরস্পরকে সাধুবাদ দেয়া ছাড়া তেমন কোনো কর্মকান্ড নেই পার্টিতে। তাই বিনোদনের জন্য যখন গান গাইতে বলা হলো রবীঠাকুরকে, তখন তিনি গেয়ে উঠলেন,
এসেছি কি হেথা যশের কাঙালি
কথা গেঁথে গেঁথে নিতে করতাল…
আমায় বোলো না গাহিতে বোলো না।
কংগ্রেস অধিবেশনে নেমে এলো একরাশ নিস্তব্ধতা…
ঘটনা-২
অতীতে জমিদারকে খাজনা প্রদানের অনুষ্ঠান হিসেবে 'পূণ্যাহ' প্রচলিত ছিলো। বছরের প্রথম যেদিন জমিদারি কাছারিতে খাজনা জমা দেয়া হত সেদিন ছিল 'পূণ্যাহ'।
শিলাইদহের কাছারিতে তিনদিন ধরে এই উৎসব চলতো। পূণ্যাহের দিন জমিদারের সিংহাসনের সামনে জাত অনুসারে আলাদা আলাদা আসনে প্রজারা বসতেন। আসনব্যবস্থার এই বৈষম্য দেখে রবীন্দ্রনাথ আর আসরেই প্রবেশ করেননি। এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় আসরে। রবীন্দ্রনাথকে আসরে আনবার জন্য অনেক চেষ্টা করা হল। কিন্তু রবি ঠাকুরের একটাই দাবি, সবার জন্য একই ও সমান ব্যবস্থা থাকতে হবে।
অবশেষে জয় হল রবি ঠাকুরের মানবতার। অনেক কাহিনী পর সবাইকে একই জাজিমের ওপর বসতে দেয়া হল।
এভাবেই তার হাত ধরে শুরু হয় নতুন এক যুগের।
ঘটনা-৩
চোখের সামনে প্রাণী হত্যা রবীন্দ্রনাথ একেবারেই সহ্য করতে পারতেননা। শিলাইদহের চরে পাখি শিকার বন্ধ করে দিয়েছিলেন তিনি। পুত্র রথীন্দ্রনাথকেও পাখি শিকারে যথেষ্ঠ বাধা দিতেন।
ছোটবেলায় হিমালয়ে যাবার আগে বাবার সঙ্গে শান্তিনিকেতনে বেড়াতে গিয়েছিলেন রবীঠাকুর। সেখানে মহর্ষির পরিচালক হরিশ মালি তাকে শিকারে নিয়ে যান। শিকার করতে রবি ঠাকুর প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ। কিন্তু হঠাৎ হরিশ মালির একটি খরগোশ শিকারের দৃশ্য তার মনে আঘাত দেয়। এই আঘাত তার মনে ভীতির সঞ্চার করে। ভয় কাটাতে বড়ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ তাকে বাঘ শিকারেও নিয়ে যান। কিন্তু বাঘ শিকারেও তার মনের ভাবনা বদলায়নি।