সবুজ চোখের সেই ‘আফগান মেয়ে’ আশ্রয় নিল ইতালিতে
শরবত গুলাকে মনে পড়ে! সবুজ চোখের অধিকারিণী সেই আফগান মেয়েটি, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রচ্ছদ কন্যা হয়ে যিনি দুনিয়াজোড়া খাতি লাভ করেন।
মার্কিন ফটোগ্রাফার স্টিভ ম্যাককারি গুলার সে ছবিটি তুলেন। গুলা তখন পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে একটি শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছিলেন। মাত্র দশ বছর বয়সে তোলা শরবত গুলার ঐ এক ছবিই যুদ্ধপীড়িত আফগান শরণার্থীদের প্রতীক হয়ে ওঠে।
তালেবানরা আফগানিস্তানের দখল নেবার পর এবার অন্য অনেকের মতো দেশ ছেড়েছেন শরবত গুলাও। ইতালিতে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির দপ্তর থেকে বৃহস্পতিবার এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তালেবানের পুনরুত্থানের পর গুলা আফগানিস্তান ছেড়ে যেতে সহায়তার আবেদন করলে ইতালি সে আবেদনে সাড়া দেয়।
ইউরোপের দেশটিতে নতুনভাবে জীবন গড়ে তুলতে ইতালি সরকার তাকে সাহায্য করবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
১৯৮৪ সালে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রচ্ছদে ছবি প্রকাশের পর 'আফগান গার্ল' নামে আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতি অর্জন করেন এই নারী।
২০০২ সালে ছবিটির আলোকচিত্রী স্টিভ ম্যাককারি আবারও তাকে খুঁজে বের করেন এবং একটি প্রামাণ্যচিত্রে তার সাক্ষাৎকার নেন।
শত শত আফগান যুদ্ধপীড়িতের মত শরবত গুলা পাকিস্তানে আশ্রয় চান এবং জীবনের দীর্ঘ ৩৫টি বছর সেখানেই বাস করেন।
কিন্তু ২০১৬ সালে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ তাকে ধরে জেলে পাঠায়, কারণ তার কাগজপত্র 'অবৈধ' ছিল। মিথ্যা নাম-পরিচয়ে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব পেতে আবেদন করেছিলেন গুলা।
সে সময় বিবিসিকে গুলা বলেন, "আমি পুলিশকে বলেছিলাম এই আইডি কার্ডটি আমি বানিয়েছি সন্তানদের লেখাপড়া করাতে আর আমার বাড়ি বিক্রি কবার জন্য। আইডি ছাড়া এর কোনটিই সম্ভব নয় পাকিস্তানে"।
আটকের পর তাকে দুই সপ্তাহের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এর এক সপ্তাহ তিনি ছিলেন কারাগারে, আরেক সপ্তাহ কারা হাসপাতালে। তার হেপাটাইটিস সি ধরা পড়ে।
পরে তাকে কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তান।
কাবুলে পৌঁছানোর পর আফগান প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে তার জন্য একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয় এবং তার হাতে নতুন ফ্ল্যাটের চাবি তুলে দেওয়া হয়।
তৎকালীন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি শরবত গুলাকে 'স্বদেশে মর্যাদা ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস' করতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
শরবত গুলার কোন ছেলেমেয়ের চোখের রঙই কিন্তু মায়ের মত হয় নি। তবে তিনি জানান, তার নানীর চোখ নাকি ঠিক একই রকম ছিল।
তার স্বামী ও এক মেয়ের কবর রয়েছে পকিস্তানের পেশোয়ারে।
মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর এ বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের দখল নিজেদের হাতে তুলে নেয় তালেবান।
ক্ষমতা দখলের পর থেকে, তালেবান নেতারা জানিয়েছে, তারা শরিয়াহ বা ইসলামিক আইন অনুযায়ী নারীদের অধিকার কায়েম রাখবে। এর আগে ১৯৯৬ সালে প্রথমবার আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করেছিল তারা।
সে সময় নারীদের বাড়ির বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ ছিল, এমনকি মেয়েদের স্কুলেও যেতে দেওয়া হয়নি। নারীদের মুখ ঢেকে রাখতে হতো এবং বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় অবশ্যই কোনো পুরুষ আত্মীয়ের সাথে থাকতে হতো। ফলে তালেবানের দ্বিতীয় দফায় আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত দেশটির নারীরা।
তালেবান দখলদারিত্বের পর আফগানিস্তান থেকে এখন পর্যন্ত শত শত আফগানকে আশ্রয় দিয়েছে ইউরোপীয় দেশ ইতালি। এত বছর পর সেখানেই আবারও শরণার্থীর জীবন বেছে নিলেন শরবত গুলা।
- সূত্র- দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি