অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারী জিয়া ও আকরামের তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের
আমেরিকান-বাংলাদেশি লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়ের দুই হত্যাকারী বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে আবির ওরফে আদনান সম্পর্কে তথ্য চেয়ে ৫০ লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটির 'রিওয়ার্ডস ফর জাস্টিস' কর্মসূচির আওতায় এ ঘোষণা দেয়।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই হত্যাকাণ্ডে ''বাংলাদেশের একটি আদালত ছয়জনকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেন। এই আসামীদের মধ্যে দু'জন সৈয়দ জিয়াউল হক (ওরফে মেজর জিয়া) এবং আকরাম হোসেনের অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছিল এবং তারা এখনও পলাতক রয়েছে। তাদের বা হামলায় জড়িত অন্য কারো সম্পর্কে আপনার নিকট কোনো তথ্য থাকলে, নিচের নম্বরটি ব্যবহার করে সিগন্যাল, টেলিগ্রাম বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে আমাদের কাছে পাঠান। সেক্ষেত্রে আপনি পুরস্কার পাবেন৷''
এদিকে বাংলাদেশ পুলিশের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন ইউনিট (সিটিটিসি) জানিয়েছে, বরখাস্ত মেজর জিয়া পালিয়ে বেড়াচ্ছে এবং তার অবস্থান সম্পর্কে তাদের জানা নেই।
পেশায় বায়ো-ইঞ্জিনিয়ার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট অভিজিৎ রায় ছিলেন একজন মার্কিন নাগরিক। ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে সাড়ে ৮টার দিকে তাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রধান প্রবেশদ্বারের কাছে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে আহত করে একদল জঙ্গি।
গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টায় তিনি মারা যান।
এ ঘটনায় মারাত্মক আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। অমর একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথেই হামলার শিকার হন এ দম্পতি।
এরপরের দিন শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন অভিজিতের বাবা ও বিশিষ্ট পদার্থবিদ অধ্যাপক অজয় রায়।
দুটি সংশ্লিষ্ট জঙ্গিগোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করে। এদের একটি হলো আল-কায়েদা দ্বারা অনুপ্রাণিত বাংলাদেশভিত্তিক আনসারুল্লাহ বাংলা টিম।
হত্যাকাণ্ডের পর পরই ভারতীয় উপমহাদেশে আল-কায়েদা শাখা (একিউআইএস) এর প্রয়াত নেতা আসিম ওমর একটি ভিডিও পোস্ট করে। ওই ভিডিওতে আল-কায়েদা সদস্যরাই অভিজিৎ রায় ও বন্যা আহমেদের ওপর হামলা করেছে বলে জানানো হয়।
এ ঘটনার চার বছর পর ২০১৯ সালের মার্চে ছয় জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। পরের মাসে একটি ট্রাইব্যুনাল সেটি গ্রহণ করে। এরপর আগস্টে বিচার শুরু হয়। তবে পলাতক থাকায় জিয়াউল হক এবং আকরামের অনুপস্থিতে তাদের বিচার হয়।
বিচারকার্য চলাকালে অজয় রায়সহ ২৮ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেন আদালত। তবে ওই বছরের ৯ ডিসেম্বরেই পুত্রশোকে কাতর অজয় রায়ের মৃত্যু হয়।
বিচারে মোট ছয় জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
অভিজিৎ হত্যার ছয় বছর পর চলতি বছরের গেল ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার একটি আদালত নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল-ইসলামের পাঁচ নেতা ও সদস্যকে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দেন। আরেকজনকে আজীবন কারাবাস দেওয়া হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এখনো চলছে।