রাঙামাটি পর্যটনে আশার আলো
চট্টগ্রামে পাহাড়ি এলাকায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র দলগুলোর কর্মকাণ্ডের ফলে এককালে অনিশ্চিত ছিল রাঙামাটির পর্যটন। এমনকি বেশি লোকের ভিড়ে তাদের সংস্কৃতি ও স্বতন্ত্র বিপন্ন হবে ভেবে পর্যটনের বিরোধীতা করতো স্থানীয়রাও।
কিন্তু ১৯৯৭ সালে সরকার ও স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্যে শান্তিচুক্তি সাক্ষরিত হওয়ায় ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হয়। বর্তমানে ভ্রমণ মৌসুমে রাঙামাটিতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। সরকারের অনেক উদ্যোগের পাশাপাশি এখন বেসরকারিভাবে তরুণরাও এগিয়ে আসছে।
রাঙামাটিতে ইতোমধ্যে ছোট-বড় অন্তত ১০টি রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। সম্প্রতি ৯ সদস্যের কমিটি নিয়ে গঠিত হয়েছে রাঙামাটি রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশন। সাজেকের বাইরে এটি রাঙামাটিতে রিসোর্ট মালিকদের নতুন উদ্যোগ। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণরাই।
শুধু রিসোর্ট নয়, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কাপ্তাই লেকে হাউসবোটেও বিনিয়োগ করছেন তরুণ উদ্যোক্তারা।
রাঙামাটির প্রথম হাউজবোট 'প্রমোদিনী'র উদ্যোক্তা দীপাঞ্জন দেওয়ান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের জায়গা আমরা যতটা সুন্দর করে গড়ে তুলতে পারব, বাইরের আর কেউ সেটা পারবে না। আমরা যা করব তা ভালোবেসেই করবো। আমরা রক্ষা করতে চাইব আমাদের পরিবেশ, অন্যরা হয়তো ব্যবসাতেই বেশি মনোযোগ দেবে।"
কাপ্তাই লেককে ঘিরে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেওয়ার কথা জানান তিনি। হাউজবোট তারই অংশ। তিনি বলেন, "ভারতের কাশ্মীর বা কেরালায় যেমনটা দেখা যায়, তেমনই হাউসবোট নির্মাণের পরিকল্পনা করি আমরা। এতে সাড়াও পাওয়া যাচ্ছে ভালো।"
হাউজবোট 'মাওরুম' এর পরিচালক অজয় চাকমা বলেন, "পাহাড়ঘেরা কাপ্তাই হ্রদ দারুণ সুন্দর। এখানে হাউজবোটে ভেসে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা কেউ ভুলবে না। হাউজবোট পর্যটনের সম্ভাবনাও এখানে দারুণ।"
এদিকে রাঙামাটিতে বর্তমানে সবচেয়ে বড় ইকোরিসোর্ট রাইন্যাটুগুন। প্রায় ২৫ একর এলাকা জুড়ে অবস্থিত এই রিসোর্টে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য দেশী-বিদেশী ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের বিশাল সমাহার রয়েছে।
রিসোর্টের মালিন ললিত সি চাকমা বলেন, "স্থানীয়দের মধ্যে অনেকেই নিজস্ব সংস্কৃতি-ঐতিহ্য নিয়ে এগিয়ে আসছে পর্যটন শিল্পে। এটা একটি নতুন আশা জাগায়। এখন প্রয়োজন আন্তরিক সরকারি সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।"
চলতি বছরের ১৭ অক্টোবর চালু হয় বার্গি রিসোর্ট। এর পরিচালক বাপ্পী তংচঙ্গ্যা বলেন, "নতুন প্রজন্ম ট্যুরিজমে এগিয়ে আসছে।"
পাহাড়ি পর্যটন খাত বিকাশে তিনি কিছু বিষয়ে জোর দেন। স্থানীয় মানুষকে পর্যটনে সম্পৃক্ত করা, স্থানীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে সামনে নিয়ে আসা, স্থানীয়দের আচরণ ও অভ্যাসকে পর্যটকবান্ধব করা, ট্যুরিস্টদের জন্য স্থানীয় ও বিদেশী লিকার নিশ্চিত করতে লাইসেন্স প্রদান করা এবং ব্যাংকগুলোর ঋণদান প্রকল্প চালু করার কথা উল্লেখ করেন তিনি।
আইএফআইসি ব্যাংক রাঙামাটি শাখার ব্যবস্থাপক শোয়েব রানা টিবিএসকে বলেন, "ট্যুরিজমের জন্য আলাদাভাবে ঋন দেওয়ার কোন খাত আমাদের নাই। তবে জায়গা-জমির বৈধ কাগজপত্র থাকলে তার বিপরীতে ঋন পাওয়ার সুযোগ আছে।"
রাঙামাটি রিসোর্ট ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুমেত চাকমা বলেন, "পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা বিপুল। আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য এ সম্ভাবনাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তরুণ উদ্যোক্তারা আমাদের নিজস্বতার ব্যাপারে সচেতন আর তার সঠিক ব্যবহারও নিশ্চিত করতে পারবেন। এখন আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাই যাতে তারা এই উদ্যোক্তাদের পাশে দাঁড়ান এবং রাঙামাটিকে পর্যটকবান্ধব করার ক্ষেত্রে আন্তরিক হোন।"