মরদেহ দ্রবীভূত করার বিশেষ পদ্ধতিতে সৎকার করা হবে ডেসমন্ড টুটুকে
দীর্ঘদিন ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে গত রোববার ৯০ বছর বয়সে চিরবিদায় নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু। এই কিংবদন্তি নেতার সৎকার করা হবে 'অ্যাকুয়ামেশন' নামক বিশেষ পদ্ধতিতে।
সিনিয়র পাদ্রী মাইকেল উইডার এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, "পরিবেশ-যোদ্ধা হিসেবে তিনি এমনটিই চেয়েছিলেন।"
'দ্য আর্চ' এর মৃত্যুতে গত এক সপ্তাহ যাবতই বিশ্বজুড়ে ভক্তদের মাঝে শোকের বন্যা বইছে।
বর্ণবাদী শাসনের অবসানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় ১৯৮৪ সালে ডেসমন্ড টুটু নোবেল শান্তি পরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি ছিলেন স্বদেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত ব্যক্তিত্বদের একজন। তিনি ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদী শাসনবিরোধী সংগ্রামের প্রধান নায়ক নেলসন ম্যান্ডেলার সমসাময়িক। ১৯৪৮ সাল হতে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকায় সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গরা গায়ের রঙের ভিত্তিতে মানুষে মানুষে যে ভেদাভেদ তৈরি করে বৈষম্যমূলক বর্ণবাদী শাসন চালিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে তিনি ছিলেন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
ডেসমন্ড টুটুর মরদেহ রাখা আছে কেপটাউনের সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রালে। সেখানে হাজারো দক্ষিণ আফ্রিকান প্রতিদিন তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হচ্ছে।
ওয়ালি এমডলুলি নামক এক ব্যক্তি ব্লুমফন্টেইন থেকে কেপটাউন পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে ডেসমন্ড টুটুকে শেষবার দেখতে এসেছেন। পথে তাকে একটি পেট্রোল স্টেশনেও রাত্রিযাপন করতে হয়েছে।
ওয়ালি বলেন, "(তার) কফিনটি দেখার পর আমি পরিপূর্ণ বোধ করছি। মনে হচ্ছে তার আত্মা আমার মধ্যেই আছে।"
দক্ষিণ আফ্রিকানদের সবারই টুটুর মূল্যবোধ অনুযায়ী জীবনযাপন করা উচিত উল্লেখ করে ওয়ালি বলেন, "এটি আমার বাকি জীবনের স্মৃতি হয়ে থাকবে।"
আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটুর শেষকৃত্য এই সপ্তাহেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে সেটি পরিবারের অভ্যন্তরেই থাকবে নাকি কোনো আয়োজন করা হবে সে বিষয়ে এখনও জানা যায়নি।
আর্চবিশপ টুটু আইপি ট্রাস্ট এবং ডেসমন্ড এন্ড লিয়াহ টুটু লিগ্যাসি ফাউন্ডেশন সূত্র জানিয়েছে, আর্চবিশপ তার শেষকৃত্যের আয়োজনে কোনো রকম বাহুল্য ব্যয় না করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন; সে আয়োজনে যেন কোনো রকম দাম্ভিকতার ছোঁয়া না থাকে।
মৃত্যুর পর নিজের কফিন নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আইকনিক এই আর্চবিশপ আগেই নির্দেশনা দিয়ে গেছিলেন। 'সবচেয়ে সস্তায় পাওয়া কফিন'য়ে তাকে বিদায় জানাতে হবে এবং সেখানে তার পরিবারের দেওয়া কার্নেশন ফুলের একটি তোড়া ব্যতীত আর কোনো ফুল থাকবে না।
তার দেহভস্ম কেপটাউনের সেন্ট জর্জ ক্যাথেড্রালের পেছনে সমাহিত করা হবে- যেখানে জীবনের ৩৫টি বছর আর্চবিশপের ভূমিকা পালন করেছেন টুটু।
কী এই অ্যাকুয়ামেশন
এ প্রক্রিয়ার মূল কথা হলো, একটি ক্ষারজাতীয় তরলের মধ্যে মৃতদেহ দ্রবীভূত করে ফেলা।
মৃতদেহ দাহ করার জন্য যেমন আগুন প্রয়োজন, তেমনি এই পদ্ধতিতে লাগে তরল দ্রবণ।
মৃতদেহ সৎকারের এ পদ্ধতিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ৯০% পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। ফলে অনেকেই একে পরিবেশ-বান্ধব সৎকার বা 'গ্রিন ক্রিমেশন' হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন।
পদ্ধতিটির আরেকটি খটমটে রাসায়নিক নামও আছে- অ্যালক্যালাইন হাইড্রোলাইসিস। প্রথমে মৃতদেহের ওজন নেওয়া হয়- তারপর পটাসিয়াম হাইড্রক্সাইড এবং পানির মিশ্রণে ৯০ মিনিট পর্যন্ত দেহকে ১৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে তাপ দেওয়া হয়।
এতে দেহের সমস্ত টিস্যু গলে যায়, শুধুমাত্র হাড়গুলো রয়ে যায়। সেই হাড় সংগ্রহ ও পরিষ্কার করে ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় শুকানো হয়। সবশেষে ক্রিমুলেটর নামক একটি যন্ত্রের মাধ্যমে সেগুলোকে চূর্ণে পরিণত করা হয়।
এ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষ হলে দেহাবশেষ সমাহিত বা মৃতের ইচ্ছা অনুযায়ী কোথাও ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে- যেমনটি সাধারণ সৎকারের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
- সূত্র- বিবিসি