শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা নিয়ে ফের অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেড় বছরের বেশি সময় দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। এতে করে বড় ধরণের ক্ষতির শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হলে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খুলে দেয়া হয়। সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে যখন শিক্ষার্থীদের এই লোকসান মোকাবেলার চেষ্টা করছে সরকার, সেই সময় আবারও সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ফলে আবারও অনিশ্চতায় পড়তে যাচ্ছে স্কুল খোলা থাকার বিষয়টি।
দেশে টানা তিনদিন ধরে দিনে ১১০০ এর বেশি কোভিড রোগী শনাক্ত হচ্ছে, পজিটিভিটি রেট ৫% ছাড়িয়েছে। দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জন। তবে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করলেও এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাচ্ছে না সরকার, বরং প্রত্যেক শিক্ষার্থী যেন করোনার টিকা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে সেটি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে। সংক্রমণ অনেক বেড়ে গেলে তবেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শনিবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। টিকা নিয়ে যেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসে, সেটিরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দেড় বছরে লেখাপড়ায় যে ঘাটতি হয়েছে, সেটি পূরণের জন্য রেমিডিয়াল ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করছি। কিন্তু আমাদের অনেক সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে। কারণ আবার করোনা সংক্রমণ বাড়ছে।
ডা. দীপু মনি আরো বলেন, গত দেড় বছর শিক্ষার্থীরা সরাসরি ক্লাস করতে পারেনি। শ্রেণিকক্ষে তাদের পাঠদান করানো যায়নি। অনলাইনে বা টেলিভিশনে করেছে, এতে যে ঘাটতি হয়েছে তা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে। করোনা সংক্রমণ বাড়লে শিক্ষার ক্ষতিটাই বেশি হবে, সেটা মাথায় রেখে, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, প্রত্যেককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের ধারণা ছিলো মার্চ-এপ্রিলে বাড়বে। কিন্তু জানুয়ারির গোড়ার দিকেই বাড়ছে, কাজেই আমাদের যে পরিকল্পনা তাতে কিছুটা সমন্বয় দরকার হবে। আমরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না। টিকা নিয়ে যেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসে, সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে রাখার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সাথে একমত স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
শনিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, "আপাতত স্কুল খোলা থাকবে। যদি সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পায়, তখন আমরা দেখব স্কুল নিয়ে কী করা যায়। যদি বেশি হারে বৃদ্ধি যায়, তাহলে স্কুল বন্ধ করার প্রয়োজন দেখা দেবে। তবে এখনও সেই অবস্থা হয়নি।"
তবে শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনার গতি অনেক ধীর। এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ১০% শিক্ষার্থীও ভ্যাকসিনের আওতায় আসেনি। গত বছরের ১লা নভেম্বর থেকে ১২-১৭ বছর বয়সী স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছে ৪৩.২৯ লাখ এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৬.৭৭ লাখ শিক্ষার্থী।
বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিয়ে, মাস্ক পরিয়ে, ফাঁকা ফাঁকা করে বসিয়ে আরো কিছুদিন ক্লাস করানো যাবে। এখন দ্রুত সব শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। দুই বছর তো শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হয়েছে, তাই সংক্রমণ আরো বাড়ার আগে কিছুদিন খোলা রেখে ঘাটতি কিছুটা পূরণ করা যাবে। তবে ফেব্রুয়ারিতে সংক্রমণ আরো বাড়লে তখন বন্ধ করে দিতে হবে।
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ রোববার কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
বার্ষিক পরীক্ষা শেষে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে স্কুলগুলোতে ক্লাস শুরু হয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সপ্তাহে প্রতিদিন ৪টি বিষয়ের ক্লাস নেয়া হবে। দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে প্রতিদিন ৩টি বিষয়ের, অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ২দিন ৩ বিষয়ের আর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ১ দিন ৩টি বিষয়ের ক্লাস নেওয়া হবে। নতুন রুটিনে প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুসারে পরিচালনা করার কথা বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।