লবণ চোরাচালান ঠেকাতে ভারতবর্ষে ২৩০০ মাইল কাঁটাঝোপের বেড়া বানিয়েছিল ব্রিটিশরা!
১৯৯৪ সালের শেষভাগ। লন্ডনের একটি সেকেন্ড-হ্যান্ড বইয়ের দোকানে লেখক রয় মক্সহ্যামের হাত পড়ল এমন একটি বইয়ে, যা তাকে মোহাবিষ্ট করে রাখল জীবনের পরবর্তী তিনটি বছর।
মেজর জেনারেল ডব্লিউ এইচ স্লিম্যান রচিত বইটির নাম ছিল 'র্যাম্বলস অ্যান্ড রিকালেকশনস অব অ্যান ইন্ডিয়ান অফিসিয়াল'। সেই বইয়েরই একটি অধ্যায় 'ট্রানজিট ডিউটিজ ইন ইন্ডিয়া – মোড অব কালেক্টিং দেম', যেখানে 'কাস্টমস হেজ' বা কাস্টমের বেড়ার একটি রেফারেন্স মক্সহ্যামকে রীতিমতো চমকে দেয়।
বইয়ে 'কাস্টমস হেজ' বলতে বোঝানো হচ্ছিল এমন একটি প্রাকৃতিক বেড়াকে, যেটি নাকি ক্রমশ একটি রাক্ষুসে সিস্টেমে পরিণত হচ্ছিল, এবং অন্য কোনো সভ্য দেশেই এ ধরনের কোনো জিনিসের অস্তিত্ব চিন্তাও করা যায় না।
ওই বেড়া সম্পর্কে খুব বিশদে কিছু লেখা ছিল না বটে, কিন্তু যেটুকু যা লিপিবদ্ধ হয়েছিল বইয়ের পাতায়, তা-ই যথেষ্ট ছিল মক্সহ্যামের চিন্তাজগতে আলোড়ন তুলতে। ততদিনে মক্সহ্যাম নিজে পাঁচ-পাঁচবার ভারত ঘুরে এসেছেন। অথচ এমন কোনো কিছুর কথা তো তিনি শোনেননি!
মেজর জেনারেলের বইয়ে জানানো হচ্ছে, বেড়াটি একটি কাস্টমস লাইনের উপর গড়ে তোলা হয় ১৮৬৯ সালে, এবং সেটির বিস্তৃতি ছিল ২,৩০০ মাইল (৩,৭০১ কিলোমিটার) – অর্থাৎ লন্ডন থেকে ইস্তাম্বুল পর্যন্ত সমপরিমাণ দূরত্ব। ১২ হাজার ব্রিটিশ কর্মকর্তা প্রহরা দিতেন বেড়াটি, যার পেছনে বার্ষিক খরচ হতো ১,৬২০,০০০ রুপি (আজকের দিনের বিবেচনায় ২,২০,৭১৬ মার্কিন ডলার)।
গোটা বেড়াটিই তৈরি করা হয় কাঁটাযুক্ত স্থানীয় নানা ধরনের ঝোপ দিয়ে, যার ভেতরে কারো পক্ষেই প্রবেশ করা সম্ভব নয়। এটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল যেন চোরাকারবারিরা উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ব্রিটিশ-অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে লবণ নিয়ে ঢুকতে না পারে। বৈধভাবে লবণ নিয়ে ঢুকতে গেলে তখনকার দিনে প্রচুর পরিমাণে কর দিতে হতো, যার ফলে লবণের মতো জীবনধারণের অতি প্রয়োজনীয় একটি পণ্যের দামও হয়ে উঠত আকাশচুম্বী।
লবণ পাচারকে কেন্দ্র করে এ ধরনের এক ইতিহাস পড়ে ধাক্কা খান মক্সহ্যাম। তিনি বলেন, 'লবণ যে স্বাস্থ্যের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা লোকে খুব কমক্ষেত্রেই বুঝতে পারে। কিন্তু তারপরও, আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে ইতিহাসের এমন হৃদয়বিদারক একটি অংশ, এবং যে তীব্র অত্যাচার মানুষকে সহ্য করতে হয়েছে, সে-কথা আজ মানুষের মন থেকে পুরোপুরি মুছে গেছে।'
শুরুর দিকে মক্সহ্যাম ভেবেছিলেন বেড়ার উল্লেখটি বুঝি ভুলবশত এসেছে। কেননা ঝোপঝাড় দিয়ে এমন বিশাল ও শক্তিশালী বেড়া তৈরির ব্যাপারটি তার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকেছিল।
কিন্তু ১৯৯৬ সালের এপ্রিলে মক্সহ্যামের হাতে আসে 'দ্য ফাইন্যান্সেস অ্যান্ড পাবলিক ওয়ার্কস অব ইন্ডিয়া (১৮৬৯-৮১)' নামের আরেকটি বই। জন ও রিচার্স স্ট্র্যাচি নামের দুই ভাই এবং ব্রিটিশ ভারতের কর্মকর্তা ছিলেন বইটির লেখক। তারা ঝোপ দিয়ে তৈরি ওই বেড়ার ইতিবৃত্ত তুলে ধরেন তাদের বইয়ে। জানা যায়, বেড়াটি ছিল ১১০টি 'বিট'-এ বিভক্ত, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ৩০ মাইল (১৬ থেকে ৪৮ কিলোমিটার)। মোট ১,৭২৭টি গার্ড পোস্ট থেকে বেড়াটিকে পাহারা দেওয়া হতো।
পুরনো নথি ঘেঁটে মক্সহ্যাম আরো বের করেন, কাস্টমস লাইনের প্রতি মাইলেই ১০ জন প্রহরীর দরকার পড়ত বিভিন্ন শিফটে বেড়াটিকে পাহারা দিতে। তাছাড়া প্রত্যেক প্রহরীকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন শেষে বালুর মেঝে ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে যেতে হতো; কেননা কোনো প্রহরী দিনের কাজ শেষে চলে যাওয়ার পরও যদি তার অংশে কারো পায়ের ছাপ পাওয়া যেত, সেই দায় তার কাঁধেই বর্তাত।
মক্সহ্যাম তার বই 'দ্য গ্রেট হেরিটেজ অব ইন্ডিয়া'য় জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশরা যখন ভারতের নতুন নতুন অংশের অধিকার পেতে থাকে, একই সমান্তরালে বাড়তে থাকে বেড়াটির সীমানার দৈর্ঘ্যও।
এই সময়ে ভারতের সবচেয়ে বিখ্যাত 'প্রশাসনিক-ইতিহাসবিদ'দের একজন জেমস গ্র্যান্ট ডাফ এই দৈত্যাকার বেড়া বা গ্রেট হেজকে তুলনা করেন চীনের মহাপ্রাচীরের সঙ্গে। এই বেড়াই ব্রিটিশ অধ্যুষিত রাজ্যগুলোকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় লবণ উৎপাদনকারী উপকূলীয় এলাকাগুলোর থেকে।
১৬০০ সালের এক শীতল নিউ ইয়ার'স ইভে প্রতিষ্ঠিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে আখ্যা দেওয়া হয় বিশ্বের একদম প্রথম দিককার মাল্টি-ন্যাশনাল কর্পোরেশনগুলোর একটি হিসেবে। আর লবণই ছিল তাদের আয়ের অন্যতম বড় উৎস, যার বদৌলতে তারা কেবল নিজেদেরকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করেনি, পাশাপাশি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রেখেছে, এশিয়াজুড়েও নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন, সামগ্রিকভাবে ভারতীয় উপমহাদেশসহ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ব্রিটিশদের স্বতন্ত্র অবস্থান গড়ে তোলার নেপথ্যে কী অনন্য অবদান ছিল এই বেড়া বা গ্রেট হেজের!
এই মহাগুরুত্বপূর্ণ বেড়াটি নির্মাণের পেছনে সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব ছিল নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির। ১৮৬৭ সালে, যখন ব্রিটিশ কর্মকর্তা ও বোটানিস্ট অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমকে কাস্টমসের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তিনি কাস্টমস লাইনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন, এবং নিজের চেনা-পরিচিত জনশক্তি ও উদ্ভিদবিদ্যার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে চোরাচালানের বিরুদ্ধে একটি কার্যকর প্রতিবন্ধক তৈরি করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
১৮৬৯ সাল নাগাদ বেড়াটি হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উড়িষ্যা পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এরপর আবার মাঝপথে থেমে গিয়ে সেটি বঙ্গোপসাগরের দিকে এগিয়ে যায়। এর পেছনে উদ্দেশ্য ছিল গুজরাট ও উড়িষ্যার লবণ উৎপাদনকারী উপকূলীয় অঞ্চলের সঙ্গে ব্রিটিশ রাজের আওতাধীন অন্যান্য রাজ্যগুলোকে আলাদা করে ফেলা। এভাবে কৌশলে লবণকে একটি মূল্যবান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কাতারেই রেখে দেওয়া হয়। এত বেশি পরিমাণে কর আরোপ করা হয় যার ফলে অধিকাংশ ভারতীয়রই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায় লবণ। অন্যদিকে ১৮৮২ সালের 'দ্য ইন্ডিয়ান সল্ট অ্যাক্ট'-এর মাধ্যমে আরো নিশ্চিত করা হয় যেন লবণের উপর ব্রিটিশদের পূর্ণাঙ্গ মনোপলি চলে আসে।
মক্সহ্যাম তার বইয়ে বর্ণনা দেন যে বেড়াটি তৈরি হয়েছিল স্বদেশী নানা জাতের কাঁটাযুক্ত ঝোপঝাড় দিয়ে। শুষ্ক অঞ্চলগুলোতে মাটির উপরের সম্পূর্ণ পাথুরে স্তরই উপড়ে ফেলা হতো যেন ঝোপগুলো টিকে থাকতে পারে।
বেড়াটি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছিল ফণিমনসা (Opuntia ficus-indica), কাঁটাময় বাবলার গুচ্ছ (Vachellia nilotica) এবং বরই গাছ (Ziziphus mauritiana).
কিন্তু উদ্ভিদবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে, গ্রেট হেজ তৈরিতে ব্যবহৃত সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ উপাদানটি হলো Carissa carandas, হিন্দিতে যাকে বলে কারোন্ডা।
উত্তর ভারতে একসময় কারোন্ডা পাওয়া যেত প্রচুর পরিমাণে। এটিকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করে মা-দিদিমারা আচার বানাতেন। কিন্তু সেই বেড়া তৈরিতে কারোন্ডার ভূমিকা সম্পর্কে খুব কম মানুষই জানে। এমনকি ভারতজুড়ে অর্গানিক ফলমূল, শাকসবজির চাষীরাও বেশিরভাগই এ ব্যাপারে অন্ধকারে রয়েছেন।
শক্তপোক্ত গড়নের ঝোপ ছিল এটি। খুব দ্রুত বেড়ে উঠত, ছড়িয়েও পড়ত। কাঁটাগুলো ছিল খুবই ভয়ংকর। নিয়মিত না ছাঁটলে চলত না।
কিন্তু কীভাবে হারিয়ে গেল গ্রেট হেজ?
মক্সহ্যামের মতে, রাজাস্থানের সম্ভার সল্ট লেক দখলের মাধ্যমে ব্রিটিশরা যখন পুরো ভারতজুড়েই লবণ উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়, তখন বেড়াটির প্রয়োজনীয়তাও হ্রাস পেতে থাকে। লবণের কর তখন উৎপাদনের সময়ই যুক্ত করা যেত, যে কারণে চোরাকারবারি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কাস্টমস লাইন বা ব্যয়বহুল বেড়ারও আর কোনো দরকার ছিল না। ১৮৭৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে বেড়াটি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কিন্তু বেড়াটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলেই কেন ঝোপটির প্রজাতিও হারিয়ে যাবে? এর একটি কারণ হতে পারে এই যে, স্থানীয় ভারতীয়রা এই ঝোপের কার্যকারিতা সম্পর্কে অবগত ছিল না। তাই ব্রিটিশদের বেড়া বিলুপ্ত হওয়ার পর দেশী কেউ আর নিজেদের স্বার্থেও এটিকে কোনোভাবে কাজে লাগাতে পারেনি।
১৯৯০-র দশকের মাঝামাঝি মক্সহ্যাম তিনবার ভারতে আসেন। তার লক্ষ্য ছিল অন্তত এমন দুই-একজনের সঙ্গে দেখা করা, যারা বেড়াটির কথা মনে রেখেছে। বেড়াটির কোনো শারীরিক অস্তিত্বের প্রমাণ অবশিষ্ট রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখেন তিনি। এজন্য তিনি পুরনো সব মানচিত্র ও স্যাটেলাইট ইমেজ ঘাঁটেন, ছোট-বড় নানা শহরে ঘুরে বেড়ান, গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাও বলেন।
বেশিরভাগ জায়গাতে গিয়েই মক্সহ্যাম দেখতে পান বেড়াটির অস্তিত্ব একদম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাছাড়া বেড়ায় ব্যবহৃত উদ্ভিদগুলোর আয়ুষ্কাল ছিল ষাট বছরের মতো, তাই ততদিনে এমনিতেও সেগুলোর কোনো অস্তিত্ব আর অবশিষ্ট থাকার কথা নয়। রাস্তাঘাট নির্মাণের জন্যও অনেক জায়গার ঝোপঝাড় কেটে সাফ করে ফেলা হয়। বেড়া ছিল এমন অনেক জায়গায় ততদিনে লোকজন তাদের কৃষিজমিরও সম্প্রসারণ করে ফেলেছে।
অবশেষে ১৯৯৮ সাল মক্সহ্যামের জন্য সুখবর বয়ে আনে, যখন তিনি গ্রেট হেজের কিছু ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পান। ভারতের সবচেয়ে জনবহুল জেলা উত্তর প্রদেশের এটাবাহ জেলার ৪০ ফুট উচ্চতার বাঁধ ঘেঁষে তিনি একটি কাঁটাঝোপের বেড়া দেখেন। সেখানকার বেশ কিছু ঝোপঝাড় তখন ২০ ফুট উচ্চতার। তাই এ কথাও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে এগুলো আসল বেড়ারই অংশ ছিল, নাকি পরবর্তীতে জন্মেছে।
তবে ওই জায়গাতেই যে গ্রেট হেজ ছিল, সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। কেননা ভারতের ১৮৭৬ সালের যে মানচিত্রে প্রথম গ্রেট হেজের কথা নথিভুক্ত করা হয়, সেখানে উল্লিখিত স্থানের সঙ্গে উত্তর প্রদেশের এই জায়গাটির অবস্থান মিলে যায়।
এই একই বেড়ার সন্ধানে চেষ্টা চালিয়েছেন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজের বার্টলেট স্কুল অব আর্কিটেকচারের ল্যান্ডস্কেপ আর্কিটেকচারের লেকচারার ও পিএইচডি প্রার্থী আইজলিং ও'ক্যারলও। এ বিষয়ে ও'ক্যারলের আগ্রহের শুরুটা হয় একটি সীমান্ত হিসেবে দ্য গ্রেট হেজের ভূমিকা কেমন ছিল তা জানার উদ্দেশ্যে। তাছাড়া বর্তমানে এর নিজস্ব ধ্বংসাবশেষসহ কতটুকু অবকাঠামোগত বা সাংস্কৃতিক চিহ্ন অবশিষ্ট রয়েছে, তা-ও জানতে চেয়েছেন তিনি।
'আমি বোঝার চেষ্টা করেছিলাম কীভাবে সীমান্ত হিসেবে এত বড় একটি জীবান্ত বেড়ার রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়, এবং সাধারণ বেড়ার কার্যকারিতার সঙ্গে এটি কতটুকু সাংঘর্ষিক,' ও'ক্যারল বলেন।
ড্যানিশ আর্টস কাউন্সিলের অর্থায়নে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে উত্তর প্রদেশে গবেষণাটি চালানো হয়। এ গবেষণা করতে গিয়ে ও'ক্যারল বিভিন্ন ইন্টারেস্টিং জিনিসেরই সন্ধান পান। তবে তিনি সবচেয়ে বেশি চমৎকৃত হন এটি দেখে যে বেড়ার লাইন, যেটি আগে ব্যবহৃত হতো একটি প্রতিবন্ধক হিসেবে, তা বর্তমানে কীভাবে বিভিন্ন অংশের সংযোগের রোড করিডর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
সম্প্রতি মক্সহ্যামকে ফ্রান্সের ভার্দুনে নিউক্লিয়ার এনার্জির আয়োজিত একটি সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয় গ্রেট নিয়ে কথা বলার জন্য।
'তারা এটি জানতে খুবই আগ্রহী ছিল যে এত বিশাল একটি প্রকল্প কীভাবে এত কম সময়ের মধ্যে মানুষের স্মৃতি থেকে হারিয়ে গেছে,' মক্সহ্যাম জানান। সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধি দলের মতে এটিই যথেষ্ট প্রমাণ যে এই বিশ্ব যেকোনো জিনিসকেই কত সহজে ভুলে যেতে পারে।
গেলানি ও পালমারের মতে বেড়াটির ব্যাপারে মানুষের পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব আরো একটি উদাহরণ যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য সম্পর্কে শিক্ষাদানে কতটা ঘাটতি রয়েছে। এ কারণেই গ্রেট হেজের ব্যাপারে ব্রিটেনের ইতিহাস বইগুলোতে কিছুই লেখা নেই, এমনকি ছোটখাট কোনো রেফারেন্সও আসেনি।
গ্রেট হেজের এই মুমূর্ষু ইতিহাসকে জনমনে জীবন্ত রাখা একটি সার্বক্ষণিক চ্যালেঞ্জ, কিন্তু পালমার ও গেলানি সেই চ্যালেঞ্জ জয়ের লক্ষ্যেই প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো, তারা সম্প্রতি পারফর্ম করেছেন লন্ডন বোটানিক্যাল ইনস্টিটিউটে, যেটি নির্মাণ করেছেন গ্রেট হেজের নেপথ্য কারিগর, অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমই!
'তার এই একটা ব্রিটিশ অবসেশন ছিল বেড়াটিকে পারফেক্ট ও অভেদ্যভাবে গড়ে তোলার,' পালমার বলেন। 'যখন আমরা পারফর্ম করছিলাম, ওয়ালে ঝুলছিল তার পোর্ট্রেট। বিষয়টি অনেকটা এমন যে, এই এত বছর পরেও, আমাদেরকে সেই অতীতের কথা স্বীকার করতে হবে। আমাদের এ ব্যাপারে শুনতে হবে।'
- সূত্র: বিবিসি