ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের অগ্রগতিও দ্রুত নয়
চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী গত ডিসেম্বরের মধ্যে মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের নির্মাণ কাজের ভৌত অগ্রগতির লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৮.৯৪ শতাংশ। কিন্ত এ সময়ে ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৪.৮৩ শতাংশ।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রূপপুর প্রকল্পে ব্যয়ের লক্ষ্য ছিল ৮ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। কিন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা।
একই অবস্থা ফাস্ট ট্র্যাকের অন্যান্য প্রকল্পেও। অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থব্যয় করা করা যাচ্ছে না ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে। এতে বেশির ভাগ ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী পদ্মা সেতুর নদী শাসনের কাজ, রূপপুর প্রকল্পের অবকাঠামো , দোহাজারী –কক্সবাজার রেলের অবকাঠামো নির্মাণ, মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের যে অগ্রগতি হবে বলে আশা করা হয়েছিল- তা হয়নি।
তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে নির্মাণ কাজ কিছুটা বেশি হয়েছে।
ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে থেকে কোভিড পরিস্থিতিতে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোর গতি টেনে ধরছিল। এর প্রভাব এখনো রয়েছে।
কোভিডের কারণে বৈদেশিক পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞরা প্রকল্প এলাকায় আসা যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়। আবার একই কারণে বিদেশ থেকে প্রকল্পের মালামাল আনতে বিলম্ব হচ্ছে।
এদিকে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী কোভিডের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণেও নতুন করে ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজে বাধা তৈরি করছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলেন, কোভিড ছাড়াও কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সময় মতো পরামর্শক ও ঠিকাদার নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ বিলম্ব, যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করা, নকশার ভুল এবং বাস্তবায়ন সক্ষমতার অভাবে কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে।
এদিকে আগামী জুনে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মোক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এছাড়া আগামী ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের (এমআরটি -৬) উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ট্রেন চালুরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
কিন্ত অর্থ ব্যয় করা যাবে না এ বিবেচনায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) দুটি প্রকল্পের বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো।
অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্থব্যয় করতে না পারলেও; অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ স্থাপন প্রকল্পে।
অন্যদিকে বাস্তবায়ন কাজে গতি বাড়ায় পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পেও সংশোধিত এডিপিতে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে রেলওয়ে।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করতে সরকার বেশ কিছু অবকাঠামো প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে তদারকি করছে। তদারকির সুবিধার্থে এসব প্রকল্পকে ফাস্ট ট্র্যাক তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে প্রতি অর্থবছর চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দও দেওয়া হলেও প্রকল্পগুলোতে তা ব্যয় করা সম্ভব হয় না।
রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বা মৈত্রী সুপার থার্মাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাদ দিয়ে, চলতি অর্থবছরের ৮টি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পে মোট ৩৮ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ব্যয় হয়েছে ৩১.৬২ শতাংশ বা ১২ হাজার ১৮০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম টিবিএসকে বলেন, সরকারের অগ্রাধিকার দেওয়া ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোতে সরকারের সব মহলের নজরদারি রয়েছে। কিন্তু, মূলত কোভিড পরিস্থিতির কারণেি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পগুলোয় কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।
এ বিষয়ে নিজ প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বুয়েটের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক অবশ্য মন্তব্য করেন, 'আমাদের দেশে প্রকল্পে জড়িত ব্যক্তিদের যথেষ্ট দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। ঠিকাদাররা যখন দেখে প্রকল্পে পরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তারা খুব একটা অভিজ্ঞ নন, তখন তারা বিভিন্ন উপায়ে নির্মাণ কাজ দীর্ঘায়িত করে।'
তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশের পরে শুরু করেও ইতোমধ্যেই বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) ও মেট্রোরেল অবকাঠামো নির্মাণ শেষ করেছে পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া।
তার মতে, কোভিড বিশ্বের সব দেশকেই প্রভাবিত করছে তাই 'উন্নয়ন প্রকল্পের মন্থর বাস্তবায়নের জন্য কোভিডের দোহাই দেওয়া যুক্তিপূর্ণ নয়।'
বিশিষ্ট এ যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনানুষ্ঠানিক ভাবে তৈরি হয়। 'এরপর যখন মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয় তখন মূল নকশায় অনেক পরিবর্তন আনতে হয়। ফলে কর্মপরিকল্পনা অনুসারে নির্মাণ কাজ করাও সম্ভব হয় না।'
ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পও এই সমস্যায় ভুগছে বলে জানান তিনি।