এখনও এডিপি বাস্তবায়নে ধীর গতি
ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করা, যথাযথ ক্রয় পরিকল্পনা না থাকা প্রভৃতি কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ২৪ শতাংশ।
বিভাগগুলো। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এ সময়ে এডিপিতে বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশ অর্থও ব্যয় করতে পারেনি সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে—করোনার সংক্রমণ যখন তীব্র—তখন এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল ২৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর মহামারি শুরুর আগের অর্থবছরগুলোতে প্রথম ছয় মাসে গড়ে ২৭ শতাংশ করে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
আইএমইডির প্রতিবেদনে এডিপি বাস্তবায়ন বিলম্বিত হওয়ার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ না হওয়া, টেন্ডার ডকুমেন্ট ও কাঠামোগত ডিজাইন প্রস্তুতিতে অধিক সময়ক্ষেপণ, বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা না থাকা এবং পরিবেশ ও অন্যান্য বিষয়ে সম্ভাব্য প্রভাব সস্পর্কে সুস্পষ্ট চিত্র না থাকা।
আইএমইডির কর্মকর্তারা বলেন, কোভিডের কারণে বৈদেশিক পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞরা প্রকল্প এলাকায় আসা-যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয়। আবার একই কারণে বিদেশ থেকে প্রকল্পের মালামাল আনতেও বিলম্ব হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযাগ তৈরি করতে সরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর বিকল্প নেই। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতে এ সময় অর্থব্যয় করতে না পারার কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি রোধ করবে।
এখনই সরকারি বিনিয়োগ না বাড়লে বেসরকারি বিনিয়োগও বাড়বে না। এ কারণে কোভিড-পরবর্তী সময়ে আরও পরিকল্পিত ও মানসম্মতভাবে এডিপি বাস্তবায়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।
পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট-এর (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সাধারণত দেখা যায় অর্থবছরের শুরুতে প্রকল্পে অর্থ ব্যয় কম করে সংস্থাগুলো। অর্থবছরের শেষে বেশি অর্থ ব্যয় করে। এতে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থাকে এবং অর্থ অপচয় হয়।
'তবে বর্তমানে সময়ে রড সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়তি রয়েছে। এ কারণে অনেক ঠিকাদারই এখন ধীর গতিতে কাজ করছে। প্রকল্পের ব্যয় পুনর্মূল্যায়ন হবে, এই আশায় তারা বসে আছে,' বলেন তিনি।
ড. আহসান এইচ মনসুর আরও বলেন, 'আবার কোভিড পরিস্থিতির, রাজস্ব আহরণ কম হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে চলতি অর্থবছরের অনেক প্রকল্পে অর্থছাড় কমিয়ে দিয়েছে সরকার। এ কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ধীর গতিতে এগুচ্ছে।'
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, কোডিডের মধ্যে গুরুত্ব বিবেচনায় স্বাস্থ্য খাতে অর্থ ব্যয় হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তা হয়নি। সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অর্থ ব্যয় সব চেয়ে কম।
আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সবচেয়ে খারাপ পারফরম্যান্স স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের। এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বরাদ্দের মাত্র ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের বেশিরভাগই ডাক্তার। অর্থব্যয় বা ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে তাদের অভিজ্ঞতা কম। এ কারণে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং অর্থব্যয় সম্ভব হয় না।
সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া আরেকটি মন্ত্রণালয় হলো নৌপরিবহন মন্ত্রণলায়। পায়রা বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়নে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কিন্ত এ মন্ত্রণালয় মোট বরাদ্দের মাত্র ১১ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে।
পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেলের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। এ বিভাগ ডিসেম্বর পর্যন্ত বরাদ্দের ১৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে।
বড় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। শিল্প মন্ত্রণালয় বরাদ্দের ৫০ শতাংশের বেশি অর্থ ব্যয় করেছে।
এদিকে ১০ শতাংশের কম অর্থ ব্যয় করা মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গুলোর মধ্যে রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।