জাফর ইকবালের আশ্বাসে অবশেষে অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2022/01/26/271880490_620378272591735_5900777314001645445_n.jpg)
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা করতে সিলেট গেছেন। তাদের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে আজ ৭ দিন পর অনশন ভাঙলেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার সকাল ১০টার দিকে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল পানি খাইয়ে তাদের অনশন ভাঙান।
ভোর ৪টার দিকে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ড. ইয়াসমিন হক শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে পৌঁছান। সেখানে প্রায় দুই ঘণ্টা তারা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করেন। জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙার জন্য অনুনয় করেন।
অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের জানান, তাদের দাবিগুলো সবই পূরণ করা হবে। একই সঙ্গে তিনি আরও আশ্বাস দেন, যে মামলাগুলো করা হয়েছে, তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাউকে হয়রানি করা হবে না।
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/26/271925249_645496806763473_3568106410059411710_n.jpg)
তাছাড়া আন্দোলনে অর্থ অনুদানের জন্য গতকাল শাবিপ্রবির যে পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়, তাদেরও আজ আদালতের মাধ্যমে জামিন দেওয়া হবে বলে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছেন জাফর ইকবাল।
এসব আশ্বাসের ভিত্তিতেই শিক্ষার্থীরা আজ অনশন ভাঙতে রাজি হয়েছেন।
অনশন ভাঙতে সম্মত হলেও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবির আন্দোলনে ইস্তফা দিচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে শাবিপ্রবির শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম অপূর্ব বলেন, "এই উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ একদিনের নয়। তিনি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তালেবানি শাসন কায়েম করেছেন। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রোড পেইন্টিং বন্ধ করেছেন। মেয়েদের সন্ধ্যার মধ্যে হলে যাওয়ার নির্দেশনা জারি করেছেন। ক্যাম্পাসের ভেতরে দোকানপাট বন্ধ করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের খাদ্য সংকটে ফেলেছেন। তার বিরুদ্ধে প্রায় চার বছর ধরেই আমাদের ক্ষোভ। তিনি ছাত্রদের একটি নিরীহ আন্দোলনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে স্বপদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন।"
![](https://947631.windlasstrade-hk.tech/bangla/sites/default/files/styles/infograph/public/images/2022/01/26/270171373_656997415339536_5574878643446166488_n.jpg)
গত ১৩ জানুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন লিজার বিরুদ্ধে খাবারের খারাপ মান, অব্যবস্থাপনা ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ এনে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে।
১৬ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও হামলায় কমপক্ষে ৩০ জন বিক্ষোভকারী গুরুতর আহত হওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দ্রুত উপাচার্যবিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
দাবি মানায় বাধ্য করতে সেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. ওয়াজেদ মিয়া আইসিটি ভবনের ভেতর উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা। তাকে মুক্ত করতে উপাচার্যের নির্দেশে পুলিশ এই হামলা চালায় বলে অভিযোগ ওঠে।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ চেয়ে ১৯ জানুয়ারি থেকে অনশনে বসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। তবে অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ অবনতি হতে থাকলে তাদের অনশন ভাঙার অনুরোধ জানিয়ে আসছিলেন আন্দোলনকারী অন্য শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ সোমবার বিকেল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ঢাকা থেকে শাবিপ্রবির ৫ সাবেক শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই পাঁচজন আন্দোলনকারীদের অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন, এমন অভিযোগে তাদের আটক করা হয়।
সেদিন থেকে আন্দোলনকারীদের কাছে টাকা পাঠানোর সবগুলো বিকাশ, নগদ ও রকেট অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। এছাড়া ক্যাম্পাসের ভেতরের সবগুলো খাবারের দোকান ও টং দোকান মঙ্গলবার থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতেও বিপাকে পড়েন শিক্ষার্থীরা।