পৃথিবী বদলে গেছে, তবু একই রকম আছে ১৯০ বছর বয়সী জোনাথন!
আর দশটা সাধারণ কচ্ছপের মতো নয় সে। গালভরা একটা নাম রয়েছে তার : জোনাথন দ্য জায়ান্ট টরটয়েজ। তবে এ তো কেবল শুরু। তার অসাধারণত্বের তালিকাটা এত লম্বা যে, শুনে হয়তো ভিমড়ি খাওয়ার জোগাড় হবে আপনার।
জোনাথন যখন জন্মাল, রানী ভিক্টোরিয়া তখন নিছকই এক কিশোরী। কিন্তু সেই কিশোরীও বার্ধক্যে উপনীত হয়ে ৮১ বছর বয়সে মারা গেছেন। তারপর কেটে গেছে ১২০ বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু এখনো বহাল তবিয়তে পৃথিবীর আলো-বাতাস উপভোগ করে চলেছে জোনাথন।
বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম দ্বীপগুলোর একটি, সেইন্ট হেলেনায় বাস করে জোনাথন। সম্ভবত এ দ্বীপের জনপ্রিয়তম অধিবাসী সে। আর এ বছরই সে পালন করছে তার ১৯০তম জন্মদিন, যার মাধ্যমে সে বনে গিয়েছে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক কচ্ছপ।
শুধু তা-ই নয়, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মতে জোনাথন সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বয়স্ক কেলোনিয়ানও -- যে গোত্রের অন্তর্ভুক্ত সকল সমুদ্রবাসী, নদীচর ও স্থলচর কচ্ছপই।
অনুমান করা হয়, জোনাথনের জন্ম হয় ১৮৩২ সালের দিকে। ১৮৮২ সালে সিসিলি থেকে সেইন্ট হেলেনায় আগত স্যার উইলিয়াম গ্রে-উইলসনকে উপহার দেওয়া হয় এই কচ্ছপটি। স্যার উইলিয়াম পরবর্তীতে গভর্নরও হন। এরপর থেকে সেইন্ট হেলেনায় আরো ৩১ জন গভর্নর এসেছেন, চলেও গিয়েছেন। কিন্তু থেকে গেছে শুধু জোনাথন।
অবশ্য অনেকেরই দাবি, জোনাথনের বয়স আসলে ১৯০-এরও বেশি। যেমন সেইন্ট হেলেনার ট্যুরিজম হেড ম্যাট জশুয়ার মতে, কেউ জোনাথনের প্রকৃত বয়স না জানলেও, সে এমনকি ২০০ বছর বয়সীও হতে পারে।
জোনাথনের বয়স সম্পর্কে আরো প্রশ্ন উঠেছে ১৮৮২ থেকে ১৮৮৬ সালের মধ্যে তোলা একটি পুরনো ফটোগ্রাফের কারণে। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, পুরোপুরি বেড়ে ওঠা জোনাথন সেইন্ট হেলেনার গভর্নরের বাসস্থান প্ল্যান্টেশন হাউজের বাগানে চরে বেড়াচ্ছে। মূলত এই বাড়িতেই জোনাথন তার জীবনের সিংহভাগ সময় কাটিয়েছে।
জোনাথনের আগে সবচেয়ে বেশি বয়স্ক কেলোনিয়ান ছিল তুই মালিলা নামের একটি রেডিয়েটেড কচ্ছপ। সেটি অন্তত ১৮৮ বছর বেঁচে ছিল। ১৭৭৭ সালের দিকে ব্রিটিশ অভিযাত্রী ক্যাপটেন জেমস কুক টোঙ্গার রাজ পরিবারকে উপহার হিসেবে দেন তুই মালিলাকে। সে মৃত্যুবরণ করে ১৯৬৫ সালে।
জোনাথনের জন্মের পর থেকে গত অন্তত ১৯০ বছরে পৃথিবী বদলে গেছে অনেক দিক থেকেই। প্রথম কোনো ব্যক্তির ফটোগ্রাফ তোলা হয় ১৮৩৮ সালে, ইনক্যান্ডিসেন্ট লাইটবাল্ব আবিষ্কৃত হয় ১৮৭৮ সালে, প্রথম শক্তিচালিত বিমান আকাশে উড়াল দেয় ১৯০৩ সালে, এবং ১৯৬৯ সালে প্রথম দুই মানবসন্তান হিসেবে চাঁদের বুকে পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অল্ড্রিন। এছাড়াও ভুলে গেলে চলবে না, পৃথিবীবাসী সাক্ষী হয়েছে দুইটি বিশ্বযুদ্ধের, এবং আবির্ভাব ঘটেছে ইন্টারনেটেরও।
এই এতটা সময় পরও, জোনাথনের জগৎ সীমাবদ্ধ কেবলই তিনটি আগ্রহে : খাওয়া, ঘুম ও সঙ্গম।
তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কিছু শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছে জোনাথন। তার বাঁ চোখটা অন্ধ হয়ে গেছে। নাক দিয়ে কোনো কিছুর ঘ্রাণও নিতে পারে না। তাই তার একদম সামনেও যদি খাবার রেখে দেওয়া হয়, তবু সেটা বুঝতে পারে না সে। ফলে অন্য কাউকে হাত দিয়ে তুলে খাবার খাইয়ে দিতে হয় তাকে।
অবশ্য জোনাথনের শ্রবণশক্তি চমৎকার বলে জানাচ্ছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস। তার চিকিৎসকের ডাকে নাকি খুব ভালোভাবেই সাড়া দিতে পারে সে।
চিকিৎসক জো হলিনসের মতে, জোনাথনের কয়েকটি ইন্দ্রিয় নিঃশেষের পথে হলেও, তার শরীর এখনো শক্তি ও প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর। যদিও আবহাওয়াভেদে শরীরের অবস্থার তারতম্য হয়ে থাকে।
"নরম রোদের দিনগুলোতে সে হয়তো সানবাথ করবে -- খোলস থেকে সে তার লম্বা ঘাড় ও পাগুলো বের করে দেবে তাপ গ্রহণ করে সেগুলো নিজের সারাশরীরে পৌঁছে দিতে।
কিন্তু অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়ায় সে পাতা বা ঘাস খুঁড়ে সারাদিন তার ভেতরেই বসে থাকবে।
তিনটি প্রকাণ্ড কচ্ছপ -- ডেভিড, এমা ও ফ্রেডের সঙ্গে বাস করে জোনাথন। তার প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে বাঁধাকপি, শসা, গাজর, আপেল ও অন্যান্য মৌসুমী ফল।
চলতি বছরের আগেও, ২০১৬ সালে একবার বিশ্বব্যাপী সংবাদের শিরোনাম হয়েছিল জোনাথন। সে এক বড় অদ্ভুত কারণে। সেবার ১৮৪ বছর বয়সে জীবনে প্রথমবারের মতো গোসল করেছিল সে!
এই মুহূর্তে সেইন্ট হেলেনা দ্বীপের কর্মকর্তারা পরিকল্পনা করছেন জোনাথনের জন্মদিন উদযাপনের। এ বছরই পরে কোনো এক সময় পালিত হবে তার জন্মদিন। সে উপলক্ষ্যে জোনাথনের নাম ও ছবি সম্বলিত স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করা হবে। দ্বীপের প্রত্যেক পর্যটককেই দেওয়া হবে একটি সার্টিফিকেট, যেখানে থাকবে জোনাথনের পায়ের ছাপের প্রথম ছবি।
- সূত্র: সিএনএন