বালুচরে জন্মের পর সাগরে ফিরল ৭৫০ কাছিমছানা
সামুদ্রিক কাছিমের ডিম থেকে জন্ম নেওয়া ৭৫০টি ছানা সাগরে ফিরেছে। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় কক্সবাজারের বিভিন্ন উপকূলে এসব কাছিমছানা অবমুক্ত করা হয়।
এর মধ্যে রামু উপজলোর পেঁচার দ্বীপে ৩৫০টি, মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপে ২৫০টি এবং টেকনাফ উপজেলার মাদারবুনিয়ায় ১৫০টি কাছিমছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি নভেম্বর থেকে মার্চ মৌসুমে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩০ হাজারের মতো কাছিমের ডিম সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে পাঁচ হাজার কাছিমছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে।
ইউএসএইড ও সামিট-এর অর্থায়নে এবং পরিবেশ ও বন অধিদপ্তরের দিকনির্দেশনায় নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্ট (নেকম) নামক একটি অলাভজনক সংস্থা কাছিমের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে অবমুক্ত করার এ কাজ প্রায় ২০ বছর ধরে করে আসছে।
নেকমের ইকোলাইফ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক (ডিপিডি) ড. শফিকুর রহমান বলেন, গত তিন বছরে ২৯ হাজার ৪৫০টি ডিম সংগ্রহ করে ৮৫ শতাংশ বাচ্চা ফুটিয়ে সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। 'এ ধরনের প্রদ্ধতিকে এক্স-সিটু সংরক্ষণ [যথাস্থান-বহির্ভূত সংরক্ষণ] বলা হয়। এছাড়া গত তিন বছরে ১০টি সংস্থান বা ইন-সিটু পদ্ধতিতে ডিম সংরক্ষণ করে বাচ্চা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে,' বলেন তিনি।
সংস্থাটির একজন জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মী আবদুল লতিফ জানান, রামু উপকূলের পেঁচার দ্বীপ সমুদ্র সৈকতের ঝাউবিথীর বালুচরে রয়েছে সামুদ্রিক কাছিম সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্র। ডিম সংগ্রহের পর সেগুলো কাছিম সংরক্ষণ ও প্রজনন কেন্দ্রে বালুচরে গর্ত করে রাখা হয়।
বর্তমানে ৬০ দিন, ৭০ দিন বা ৮০ দিন অন্তর এসব গর্ত থেকে ডিমগুলো ফুটে কাছিমের ছানা বেরিয়ে আসছে। 'এরই মধ্যে আটশ ১৪টি কাছিমের ছানা সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ কাজ করতে খুবই আনন্দ লাগে,' বলেন আবদুল লতিফ।
নেকমের প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম বলেন, কাছিম এখন হুমকির মুখে। 'একদিকে সাগরে ট্রলিং জাহাজের কারণে কাছিম মারা পড়ছে, অন্যদিকে মা কাছিম উপকূলে ডিম পাড়তে এসে জেলেদের জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। এছাড়া কুকুরের কামড়েও কাছিমের মৃত্যু হচ্ছে।'
বর্তমানে কক্সবাজার সৈকতের মাত্র ৩৪টি স্থানে সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়তে আসে যা এক দশক আগেও ৫২টি ছিল বলে জানান ড. শফিকুর রহমান। 'সমুদ্রের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার, আগাছা পরিষ্কার এবং মাছের পোনাখাদক জেলিফিশ খেয়ে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য বজায় রাখতে অনন্য ভূমিকা রাখে এ কাছিম,' বলেন তিনি।
কাছিম প্রকৃতির 'সুইপার' অভিহিত করে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সারওয়ার আলম বলেন, 'সমুদ্রের আবর্জনা ভক্ষণ করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা রাখে কচ্ছপ। কিন্তু আমাদের অসচেতনতায় নিজের আবাসস্থল হারাচ্ছে এ উপকারী প্রাণীটি। নিষিদ্ধ জালে মাছ শিকারকালে আটকা পড়ে মারা যায় এটি।'
এছাড়া পর্যটন বিকাশের কারণে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে অতিরিক্ত আলোকায়নের ফলে তীরে ওঠার পর কুকুরের আক্রমণেও অনেক কাছিম মারা যাচ্ছে বলে জানান এ কর্মকর্তা। 'কাছিমসহ সামুদ্রিক প্রাণী রক্ষায় সরকার নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আশা করি, সামুদ্রিক কাছিমের জন্য উপকূলকে নিরাপদ করা হবে,' বলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে মা কাছিমের মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি। গেল তিনমাসে মৃত্যু হয়েছে ১০৩টি মা কাছিমের। এর জন্য ট্রলিং জাহাজ ও জেলেদেরকে দায়ী করা হলেও কাছিম রক্ষায় কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছার অভাব দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।