প্রণোদনার ২২০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন ৮৪% গ্রামীণ উদ্যোক্তা
দেশে কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর বগুড়ার উদ্যোক্তা রেবেকা মরিয়মের ব্যবসার বিক্রি কমতে কমতে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। তার প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছিল ১০০ জন।
কৃষ্ণচূড়া ফ্যাশন হাউসের মালিক রেবেকা। গার্মেন্টস এবং নিটওয়্যার পণ্য উৎপাদন করে তার প্রতিষ্ঠান। ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি মেটাতে এবং মহামারির আঘাত কাটিয়ে ওঠার আশায় ব্যাংক ঋণ পাওয়ার চেষ্টা করেন রেবেকা।
অবশেষে গত বছরের নভেম্বরে তিনি একটি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এসএমই) ফাউন্ডেশনের সহায়তায় আইপিডিসি ফাইন্যান্স থেকে ৪ শতাংশ সুদে ৩ লাখ টাকা ঋণ পান।
রেবেকা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মহামারির কারণে বিক্রি একেবারে তলানিতে নেমে যায় এবং উৎপাদিত পণ্য জমা হতে থাকে। এর ফলে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়।'
তিনি আরও বলেন, 'লোকসান কাটিয়ে উঠতে আর্থিক সহায়তা আবশ্যক ছিল। আমি ব্যাঙ্ক লোন পাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছিলাম না। কপাল ভালো, আইপিডিসি ফাইন্যান্স থেকে ঋণ পাওয়ার পর আমি আবার পণ্য উৎপাদন করতে পারছি এবং বিক্রি আবার বাড়ছে।'
মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে একটি প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ৩ হাজার ১০৬ জন ক্ষুদ্র ও অতি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৮৪ শতাংশ, অর্থাৎ ২ হাজার ৬১৯ জন উদ্যোক্তা ছিলেন গ্রামীণ অঞ্চলের।
মোট ঋণ গ্রহীতার মধ্যে ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ, অর্থাৎ ৪৮৭ জন উদ্যোক্তা ছিলেন ঢাকার।
গত বছরের জানুয়ারিতে মহামারির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার দ্বিতীয় দফায় কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) উদ্যোক্তাদের জন্য ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করে।
আটটি প্রতিষ্ঠানকে—এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক), সামাজিক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, পল্লী দরিদ্র বিমোচন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, ক্ষুদ্র কৃষক উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, জয়িতা ফাউন্ডেশন এবং বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন—প্রান্তিক পর্যায়ে ঋণ বিতরণ ও প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এর মধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের অনুমোদন পায় অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে।
১৮টি ব্যাংক ও ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম দফায় গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে এসএমই ফাউন্ডেশন এবং চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ করতে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে অর্থছাড় পায়।
প্রথম দফায় এসএমই ফাউন্ডেশন দেশজুড়ে জুন পর্যন্ত ৯২৫ জন উদ্যোক্তার মাঝে ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করে। আর দ্বিতীয় দফায় চলতি অর্থবছরের অক্টোবর-ডিসেম্বরে মাসে ২ হাজার ১৮১ জন উদ্যোক্তার মাঝে ২০০ কোটি টাকা বিতরণ সম্পন্ন করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।
মহামারিকালে লোকসানে পড়া বিপুলসংখ্যক ঋণপ্রার্থীদের মধ্যে এসএমই ফাউন্ডেশন গ্রামীণ এলাকার ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দিয়েছে।
ফাউন্ডেশনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের ৬০টি জেলার ৩ হাজার ১০৬ জন সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে ৩০০ দশমিক ১৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ সম্পন্ন করেছে ফাউন্ডেশন। বিতরণকৃত ঋণের মধ্যে নারী উদ্যোক্তারা পেয়েছেন প্রায় ২৬ শতাংশ আর পুরুষ উদ্যোক্তারা পেয়েছেন প্রায় ৭৪ শতাংশ।
ঢাকায় সর্বোচ্চ সংখ্যক উদ্যোক্তা ঋণ পাওয়ার পর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ঋণ পেয়েছেন বগুড়া জেলার উদ্যোক্তারা। এই জেলার ১৯৭ জন উদ্যোক্তা ঋণ পেয়েছেন ১১ দশমিক ৫৯ কোটি টাকা। এরপর চট্টগ্রাম, কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে ঋণ পেয়েছেন যথাক্রমে ১৭৩ জন, ১১৬ জন, ১৬১ জন ও ১১৮ জন উদ্যোক্তা।
এসএমই ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মোট ৩ হাজার ১০৬ জনের মধ্যে এই ঋণ বিতরণ করা হলেও পাঁচ লাখের নিচে ঋণ নিয়েছেন ১ হাজার ৫৫৩ জন উদ্যোক্তা।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মাসুদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'মহামারিতে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে সরকারের উদ্দীপনা প্যাকেজের দ্বিতীয় পর্যায়ে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের টার্গেট করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন যে, ফাউন্ডেশন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মালিকদের দাবি অনুযায়ী যথেষ্ট ঋণ সহায়তা দিতে পারেনি।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানিয়ে তিনি অনুরোধ করেন, 'মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে উদ্যোক্তাদের সাহায্য করার জন্য আরও ঋণ সহায়তা প্রয়োজন।'