ব্যাংক ঋণ ছাড়াও এসক্রো থেকে নগদ অর্থ চায় আলেশা মার্ট
পেমেন্ট গেটওয়ে এসএসএল কমার্জের এস্ক্রো সার্ভিসে আটকে থাকা গ্রাহকের টাকা নিজেদের ব্যাংক একাউন্টে নিতে চায় বিতর্কিত ই-কমার্স প্লাটফর্ম আলেশা মার্ট লিমিটেড। ব্যাংক একাউন্টে টাকা নেওয়ার অনুমতি চেয়ে এবং ঋণের জন্য সহযোগিতা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে কোম্পানিটি।
আলেশা মার্টের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জুর আলম সিকদার বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষকে এ বিষয়ে পৃথক দুটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
আলেশা মার্টে পণ্য অর্ডার করে গ্রাহকদের অগ্রিম পরিশোধ করা অর্থ পেমেন্ট গেটওয়ে এসএসএল কমার্জের এস্ক্রো সার্ভিসে আটকে আছে।
নিয়মানুযায়ী যেসব অর্ডারের বিপরীতে আলেশা মার্ট পণ্য ডেলিভারি করেছে, শুধু সেসব অর্ডারের অর্থই আলেশা মার্টের একাউন্টে স্থানান্তর হবে, বাকি টাকা এস্ক্রো সার্ভিস থেকেই ক্রেতাদের ফেরত পাওয়ার কথা।
চিঠিতে মঞ্জুর আলম দাবি করেন, আলেশার গ্রাহকদের 'বিশাল পরিমাণ অর্থ' এসক্রো পরিষেবা প্রদানকারী এসএসএল কমার্জে আটকে আছে। গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে নিজেদের অ্যাকাউন্টে এই টাকা স্থানান্তর করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এসক্রো পেমেন্ট ব্যবস্থা অনুযায়ী, অগ্রিম অর্থ মূলত তৃতীয় পক্ষের কাছে যাবে। ডেলিভারি সম্পন্ন হওয়ার পরই বিক্রেতার কাছে অর্থ প্রদান করা হবে। ডেলিভারি সম্পন্ন না হলে গ্রাহকদেরকে এই অর্থ ফেরত দিবে এসএসএল কমার্জ।
এসক্রো তহবিল থেকে টাকা ফেরতের কোনো অনুমতি নেই তাদের।
অযৌক্তিক এ দাবি ছাড়াও মঞ্জুর আলম আলেশার জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়ে লিখেন, নিরবচ্ছিন্ন ব্যবসার স্বার্থে ব্যাংক ঋণের কোনো বিকল্প নেই।
ই-ফার্মগুলোকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের 'অনিচ্ছা'র কথাও উল্লেখ করেন তিনি। আলেশা মার্টের কর্মীদের কর্মসংস্থান বিবেচনায় ঋণের ব্যবস্থা করে দিতে অনুরোধ করেছেন তিনি।
এর আগে, গত ডিসেম্বরে ৩০০ কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছিল আলেশা মার্ট।
কিন্তু মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সরকার ই-কমার্স কোম্পানিকে কোনো আর্থিক সহায়তা দেবে না।
ঢাকায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করার পর আলেশা মার্ট ব্যাংকের পাওনা কিভাবে পরিশোধ করবে?"
এখন সরকারের অনুরোধে ব্যাংক ঋণ দিলে ঋণের অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য ব্যাংকও সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে।
"তখন হয়তো জনগণের করের টাকায় তা পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু এটা তো সিস্টেম হতে পারে না," বলেন তিনি।
জাহিদ হাসান আরও বলেন, "আলেশা মার্টের যে সম্পদ আছে, সেখান থেকেই গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে। কোনো কোম্পানির দায় মেটানোর দায়িত্ব কখনও সরকার বা ব্যাংকের উপর আসতে পারে না।"
মার্চ থেকে এস্ক্রোর টাকা ফেরত পেতে পারেন গ্রাহকরা
গত ৩০ জুন এস্ক্রো সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা ২১৪ কোটি টাকা আগামী মার্চ থেকে পুরোদমে ক্রেতাদেরকে ফেরত দেওয়া শুরু হতে পারে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও ডিজিটাল কমার্স সেলের কর্মকর্তা মো. সাইদ আলী।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ২৪টি ই-কমার্স কোম্পানির নামে মামলা হয়েছে, তাদের তালিকা পুলিশ সদর দপ্তর পাঠিয়েছে।
যেসব কোম্পানির নামে মামলা নেই তাদের গ্রাহকদের পাশাপাশি মামলা থাকা কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের টাকাও ফেরত দেওয়া হবে। তবে ইভ্যালির জন্য আদালত বোর্ড গঠন করে দেওয়ায় কোম্পানিটির গ্রাহকদের পাওনা ফেরত দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় আপাতত কোনো উদ্যোগ নেবে না।