নওগাঁয় বৃষ্টিতে ইটভাটার ৬০ কোটি টাকা পানিতে
বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে নওগাঁ জেলার প্রায় ১৫৭টি ইটভাটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এতে ভাটার খলিয়ানে থাকা অধিকাংশ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে প্রায় ৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভাটার মালিকরা।
নওগাঁ জেলা ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, জেলায় বর্তমানে পরিবেশবান্ধব ও স্থায়ী চিমনির ১৫৭টি ইটভাটা রয়েছে। বছরে প্রতি ভাটায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ ইট পোড়ানো হয়।
নওগাঁর ১১টি উপজেলায় ইট ভাটার খলিয়ানে পোড়ানোর অপেক্ষায় তৈরী প্রায় ১৫ কোটি কাঁচা ইট বৃষ্টির পানিতে গলে গেছে। প্রতিটি ইট তৈরিতে খরচ ৪ থেকে ৫ টাকা হিসাবে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০ কোটি টাকার।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া শনিবার ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় কয়েক দফা বৃষ্টি হয়। এত গলে গেছে ইটভাটায় পোড়ানোর অপেক্ষায় খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট।
ইটভাটাগুলোতে কোনো পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় খলিয়ানে রাখা ইট রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আবার কোনো কোনো ইট ভাটায় খামাল করে রাখা ইট পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখায় সেগুলো কিছুটা রক্ষা পেয়েছে।
বৃষ্টির পানিতে ইট নষ্ট হওয়ায় এখন বাড়তি সময়, শ্রমিক ও টাকা গুনতে হবে মালিকদের। নষ্ট ইটগুলো আঙিনা থেকে সরিয়ে পুনরায় পানি দিয়ে নরম করে ইট তৈরি করতে হবে। এছাড়া বৃষ্টিতে আঙিনা নষ্ট হলে কয়েকদিন শ্রমিকদের বসিয়ে রেখেও পারিশ্রমিক দিতে হবে মালিকদের।
সরেজমিনে শনিবার সদর উপজেলার বরুনকান্দি, শিবপুর, বোয়ালিয়া পাহাড়পুর, কীর্তিপুর ও শশীর মোড় এলাকার বিভিন্ন ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, খলিয়ানে শুকানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখা কাঁচা ইট বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। গলে কাঁদা হয়ে গেছে ইটগুলো। কিছু কাঁচা ইট খামাল করে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এছাড়া, চুল্লিতে পোড়ানোর জন্য সাজানো ইটও গলে গেছে।
সদর উপজেলার শশীর মোড় এলাকায় মেসার্স ভাই ভাই ব্রিকস (বিবিসি) ইটভাটার মালিক মাজেদুর রহমান বলেন, "আমার পাঁচটি ইটভাটা আছে। হঠাৎ বৃষ্টিতে খলিয়ানে থাকা কাঁচা ইট পলিথিন দিয়ে ঢাকা সম্ভব হয়নি। বৃষ্টিতে খলিয়ানে থাকা প্রায় এক কোটি কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে কাঁদা হয়ে গেছে। এতে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।"
এসব মাটি খলিয়ান থেকে সরিয়ে আবারও শোধন করে ইট তৈরী করতে বাড়তি টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলার পাহাড়পুর এলাকায় অবস্থিত মেসার্স ডলি ব্রিকস ফিল্ড (ডিবিএফ) ভাটার ম্যানেজার তসলিম উদ্দিন জানান, ভাটায় চুল্লিতে প্রতি রাউন্ডে প্রায় ছয় লাখ ইট পোড়ানো যায়। প্রতি বছর ইট পোড়ানো হয় প্রায় ৫০ লাখ পিস।
"গত বছর বৃষ্টিতে সামান্য পরিমাণ কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে। তবে এ বছর হঠাৎ বৃষ্টিতে চারটি খলিয়ানে থাকা প্রায় ১৬ লাখ পিস কাঁচা ইট কাঁদা হয়ে গেছে। শ্রমিক, মাটি ও বালুসহ প্রতি ইট তৈরীতে আনুষঙ্গিক খরচ পড়েছে প্রায় ৫-৬টাকা। সে হিসেবে প্রায় ৮০ লাখ টাকার কাঁচা ইট নষ্ট হয়েছে," বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "পোড়ানোর জন্য চুল্লিতে সাজিয়ে রাখা কিছু ইটও গলে গেছে। পলিথিন দিয়ে খামাল করে রাখায় রক্ষা পেয়েছে প্রায় ২ লাখ কাঁচা ইট। গত দুই দিন থেকে শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে মজুরি ও খাবার দিতে হচ্ছে।"
খলিয়ান শুকাতে আরও ৮ দিন লাগবে জানান তিনি।
"প্রতিদিন ১২ হাজার টাকা মজুরিসহ খরচ হচ্ছে। সে হিসেবে ১০ দিনে মজুরিসহ খরচ হবে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এ মৌসুমে হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় প্রায় এক কোটি টাকার লোকসান হচ্ছে," যোগ করেন তসলিম উদ্দিন।
এদিকে বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এছাড়া শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সর্বনিম্ন ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তবে বৃষ্টির কারণে শীতের তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
নওগাঁ জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ রফিকুল ইসলাম বলেন, "প্রতিটি কাঁচা ইটের উৎপাদন খরচ চার টাকা ধরা হলেও ভাটার মালিকদের প্রায় ৬০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হবে। বৃষ্টিতে প্রতিটি ইটভাটা মালিকের সর্বনিম্ন ২০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।"