মিয়ানমার: জান্তা সরকারের ভয়ে নিজের সন্তানকে ত্যাজ্য করছেন বাবা-মা
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এমন আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছেদ করছে ভয়ার্ত পরিবারগুলো। শুধু দূরের আত্মীয়দের সঙ্গেই নয়, এমনকি নিজের সন্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক ছেদের ঘোষণা দিয়ে স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত দিচ্ছেন অনেক বাবা-মা।
গেল বছর শেষের দিকে মিয়ানমারের সামরিকবাহিনী ঘোষণা দিয়েছে, যারাই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া বিক্ষোভকারীদের আশ্রয় দেবে, তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করাসহ তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ঘোষণার পর থেকেই ভীত পরিবারগুলো তাদের ভিন্নমতাবলম্বী (জান্তা সরকারের বিরোধী) সন্তানদেরকে ত্যাজ্য করে দিচ্ছে।
বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, প্রতিদিন গড়ে সাতটি পরিবার থেকে ভিন্নমতাবলম্বী আত্মীয় ও সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কছেদের বিজ্ঞপ্তি আসছে পত্রিকায়।
গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংবাদপত্র 'দ্য মিরর'-এ নিজের ছেলেকে ত্যাজ্য করে বিজ্ঞপ্তি দেন এক বাবা-মা। তাদের সন্তান লিন লিন বো বো জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে একটি সশস্ত্র দলে যোগ দিয়েছেন। এ কারণেই বো বো'র বাবা-মা তাকে ত্যাজ্য করেছেন। পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, "আমরা ঘোষণা করছি যে, আমরা লিন লিন বো বোকে ত্যাজ্য করেছি, কারণ সে কখনই তার বাবা-মায়ের ইচ্ছা শোনেনি।"
এর প্রতিক্রিয়ায় তাদের ২৬ বছর বয়সী ছেলে বো বো বলেছেন, "আমার কমরেডরা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, চাপের কারণে আমার পরিবার এমন ঘোষণা দিতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু এটি শোনার পর আমার খুবই মন খারাপ হয়েছিল।"
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল করে নেয় দেশটির সেনাবাহিনী। তবে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী জনতা সেনাবাহিনীর এমন স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিতে পারেনি। আর এ থেকেই জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয় বিক্ষোভ। সেই বিক্ষোভ দমিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আরও পাকাপোক্তভাবে বসতে জান্তা সরকারও তার বিরোধীদের ওপর ব্যাপক দমন-পীড়ন চালাতে শুরু করে।
গত নভেম্বরে দমন-পীড়নের নতুন পদক্ষেপ হিসেবে আন্দোলনে অংশ নেওয়া ব্যক্তি ও আশ্রয়দানকারীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ঘোষণা দেয় দেশটির সেনাবাহিনী। এমনকি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চালানো হচ্ছে অভিযান। যারা জান্তা বিরোধীদের আশ্রয় দিচ্ছেন, বিমান হামলার মাধ্যমে তাদের ঘরবাড়িও পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। সেনাবাহিনীর এই নারকীয় কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষা পেতে তাই রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদপত্রে প্রতিদিনই নিজের সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্নের বিজ্ঞপ্তি দিচ্ছেন শত শত বাবা-মা।
জান্তা সরকারের ভয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও অভিভাবকরা এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হচ্ছেন হবে মনে করছেন দেশটির মানবাধিকার কর্মীরা।
তবে দেশটির সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জাও মিন তুন বলেছেন, শুধু পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েই নিজেদের গ্রেপ্তার এড়ায়ে পারবে না ষড়যন্ত্রকারীরা। কেউ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গোপনে বিরোধীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলে তাকেও শাস্তি পেতে হবে বলে জানান তিনি।
বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে এক অভিভাবক বলেছেন, "আমার মেয়ে যা বিশ্বাস করে তাই করছে; তবে আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত, আমরা সমস্যায় পড়লে সেও চিন্তিত হবে। আমি জানি, সে খুব ভালোভাবেই বুঝেছে আমি তার সঙ্গে কী করেছি।"
- সূত্র: দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট