ইভ্যালির রাসেলের রেঞ্জ রোভার নিলামে বিক্রি হলো প্রায় ২ কোটি টাকায়
হাইকোর্ট-নিযুক্ত পরিচালনা পর্ষদ পরিচালিত নিলামে ইভ্যালির প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও মোহাম্মদ রাসেলের মালিকানাধীন রেঞ্জ রোভার গাড়িটি বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এ নিলাম।
পাশাপাশি নিলামে ইভ্যালির মালিকানাধীন আরও ছয়টি গাড়িও বিক্রি হয়েছে। ইভ্যালির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ব্যবহৃত একটি টয়োটা সিএইচআর হাইব্রিড, একটি হোন্ডা ভেসেল, একটি টয়োটা প্রিয়স, একটি টয়োটা মাইক্রোবাস ও দুটি টয়োটা এক্সিও বিক্রি হয়েছে গতকালের নিলামে।
বিশাল অঙ্কের ঋণ থাকা সত্ত্বেও কোম্পানির সিইও ও অন্যান্য কর্মকর্তারা বিলাসবহুল জীবনযাপন করছিলেন, ব্যবহার করছিলেন ব্যয়বহুল যানবাহন।
রেঞ্জ রোভারের ক্রয়মূল্য সর্বনিম্নে ২ কোটি ৩ লাখ টাকা। টয়োটা সিএইচআর এর দাম প্রায় ৬০ লাখ টাকা। অপরদিকে হোন্ডা ভেসেলের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা এবং একেকটি এক্সিওর দাম ছিল ১৭ লাখ টাকা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৫ জুলাই পর্যন্ত ইভ্যালির ঋণ ছিল ৫৪৩ কোটি টাকা।
তবে মন্ত্রণালয়ের ধারণা, ঋণের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
নিলামে বিক্রি হওয়া সাতটি গাড়ি থেকে আয় হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৯০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরি মানিক বলেন, "ইভ্যালির গাড়ি বিক্রির টাকা দিয়ে পাওনাদারদের ঋণ পরিশোধ করা হবে। তবে ইভ্যালির পাওনাদারের সংখ্যা অনেক বেশি। তাই আমরা শুরু থেকেই চেষ্টা করছি ইভ্যালির পুঁজি বাড়াতে।"
"পুঁজি বাড়লে পাওনাদারদের টাকা ফেরত দিতে পারবো। গাড়ি বিক্রির অর্থ ইভ্যালির আ্যকাউন্টে যাবে। ভবিষ্যতেও যেগুলো বিক্রি করা হবে তার একটাই উদ্দেশ্য, পুঁজি বাড়ানো।"
ধানমন্ডির ভিক্টোরিয়া কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত নিলাম শেষে তিনি বলেন, "এছাড়া কিছু লোক ইভ্যালির কিছু গাড়ি আটকে রেখেছেন, যা আইনের ভাষায় চুরি। আমরা আগামী রোববার পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। এরমধ্যে গাড়িগুলো ফেরত না দিলে পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।"
এখন পর্যন্ত এরকম চারটি গাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। তবে এর বাইরে আরও কয়েকটি গাড়ি রয়েছে, যোগ করেন চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, "এই গাড়িগুলো ইভ্যালির সাবেক এমডি রাসেল তাদের দিয়েছিলেন। আমরা তাদের ঠিকানা পেয়েছি। তারা গাড়ি লুকিয়ে রেখে বাঁচতে পারবেন না। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে চুরির মামলা করবো।"
তাদের গাড়ি উদ্ধার করে ভবিষ্যতেও নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রি করা হবে বলে জানান এই চেয়ারম্যান।
ক্রেতাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যপারে তিনি বলেন, "এই মুহুর্তেই কারও টাকা দেয়া সম্ভব হবে না। কারণ অডিট করার আগ পর্যন্ত আমরা পাওনার সঠিক সংখ্যাটা বলতে পারছি না। অডিটে কমপক্ষে ৬ মাস লাগবে।"
অডিটে ২৭ লাখ টাকা খরচ হবে বলেও তিনি জানান।
নিলামে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হওয়া রেঞ্জ রোভারের নূন্যতম মূল্য ধরা হয়েছিল ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা। হাবীবুর রহমান নামক এক প্রকৌশলী গাড়িটি ১ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনে নেন।
বাকি গাড়িগুলো যারা কিনেছেন তারা হলেন, রিপন ইসলাম তারা (১৭ লাখ ৩০ হাজার টাকায়), প্রশান্ত ভৌমিক (২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায়), আবুল হাসনাত রাসেল (১৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকায়), প্রশান্ত ভৌমিক (১৫ লাখ টাকায়), কানিজ ফাতেমা (১৭ লাখ ৬০ হাজার টাকায়) এবং মো. রিয়াজ উদ্দিন (২০ লাখ টাকায়)।
বিচারপতি মানিক বলেন, "এসব গাড়ি ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হয়নি। এগুলোর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাদের ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন।"
ইভ্যালির নামে নিবন্ধিত গাড়িগুলো ৭ দিনের মধ্যে ফেরত দিতে সংশ্লিষ্টদেরকে ১৩ জানুয়ারি নির্দেশ দিয়েছিল গভর্নিং বোর্ড।