৪ দশক পর বিদ্যুৎ যাচ্ছে চর সোনারামপুরে
- মেঘনার বুকে অবস্থিত চরসোনারামপুরের বাসিন্দা প্রায় ৬ হাজার
- বিদ্যুৎ কেন্দ্রের খুব কাছে থেকেও ৪ দশক ধরে বিদ্যুতহীন চরসোনারামপুর
- সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে
- আগামী ৪ মাসের মধ্যেই বিদ্যুৎ সংযোগ পাবে চরবাসী
আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে চরসোনারামপুর গ্রামের দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। বিদ্যুতের এতো কাছে থেকেও চরসোনারামপুরবাসীর বিদ্যুৎ না পাওয়ার আক্ষেপ ৪ দশকেরও বেশি সময়ের। বিদ্যুৎ আসছে-আসবে; এই আশাতেই বছরের পর বছর কেটে গেছে। কিন্তু বিদ্যুতের আলোর দেখা পাননি চরবাসী। এর মাঝেই চরসোনারামপুরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
তবে এবার বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হওয়ার অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে চরবাসীর। মেঘনা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবলের মাধ্যমে চরে বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজ শুরু হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদীর দুই প্রান্তে ১১ হাজার ভোল্টের প্রয়োজনীয় ওভারহেড লাইন নির্মাণ করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, আশুগঞ্জ উপজেলা সদরের মেঘনা নদীর বিওসি ঘাট থেকে নদীর তলদেশ দিয়ে ১১ হাজার ভোল্ট সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল এইচডিডি (এইচডিডি) পদ্ধতিতে স্থাপন করা হবে। এ কাজের জন্য গত ৩০ জানুয়ারি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ড্রিলটেক ইন্টারন্যাশনালের চুক্তি হয়েছে। পুরো কাজের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১১ কোটি টাকা।
চরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শত বছর আগে মেঘনা নদীর বুক চিরে জেগে ওঠা চরে ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে মানুষজন বসবাস করছেন। আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়নের অন্তর্গত এ চরটির নামকরণ করা হয় চরসোনারামপুর। বর্তমানে চরের এই গ্রামটিতে প্রায় ৬ হাজার মানুষের বসবাস। মূলত মেঘনা নদীতে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন চরের বাসিন্দারা। অবশ্য কেউ কেউ আবার বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যও করছেন এখন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১টি ইউনিট উৎপাদনে রয়েছে। এ সব ইউনিট থেকে প্রতিদিন দেড় হাজারেরও বেশি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয় জাতীয় গ্রিডে। ফলে আশুগঞ্জকে বলা হয় বিদ্যুতের শহর। কিন্তু এই বিদ্যুতের শহরে বাস করেও দীর্ঘ চার দশকেও বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি চরসোনারামপুরে। অথচ গত ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট আশুগঞ্জকে শতভাগ বিদ্যুতায়িত উপজেলা ঘোষণা করে বিদ্যুৎ বিভাগ।
চরবাসীর স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতের জন্য গ্রামে একটি কমিউনিটি ক্লিনিক এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। তবে স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পেলেও বিদ্যুতের জন্য সবসময়ই হাহাকার ছিল চরবাসীর। বিশেষ করে গরমের সময় বিদ্যুতের জন্য সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অবশ্য সরকারিভাবে বিদ্যুৎ না পেলেও চরের বাসিন্দাদের মধ্যে যারা অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছল, তারা নিজ উদ্যোগে সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির সময় সৌরবিদ্যুৎ নিয়েও দুর্ভোগের অন্ত থাকে না তাদের।
অবশেষে এবার চরসোনারামপুরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছানোর কাজ শুরু হচ্ছে। মেঘনার তলদেশ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। এজন্য ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রয়োজনীয় মালামাল মেঘনা নদীর বিওসি ঘাটে এনে মজুদ করা শুরু করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী দুই-তিনদিনের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে বিদ্যুৎ নিয়ে চরসোনামপুরবাসীর দীর্ঘ ৪ দশকের আক্ষেপ ঘুচতে যাচ্ছে।
চরসোনারামপুর গ্রামের বাসিন্দা শীতল বর্মণ বলেন, বছরের পর বছর কেটেছে শুধু বিদ্যুতের আশায়। বিদ্যুতের জন্য আমাদের দুঃখের শেষ নেই। ছেলে-মেয়েদের মোমবাতি-কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করতে হয়। এখন যদি আমরা বিদ্যুৎ পাই তাহলে আমাদের আর কোনো দুঃখ থাকবে না।
চরের আরেক বাসিন্দা সুমন দাস জানান, বিদ্যুতের জন্য তাদেরকে অনেক কষ্ট করতে হয়। এখন বিদ্যুৎ পাওয়ার খবরে চরবাসী অনেক আনন্দিত। দ্রুত সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপন কাজ শেষ করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আশুগঞ্জ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ বলেন, 'চুক্তি পরবর্তী ১২০ দিনের মধ্যে কাজ শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় মালামাল আসা শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সাবমেরিন পাওয়ার ক্যাবল স্থাপনের কাজ নির্ধারিত সময়েই শেষ করবে। আর কাজ শেষ হওয়ার পরপরই চরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া শুরু হবে'।