শিরোপা কার, বরিশাল নাকি কুমিল্লার?
প্রায় মাস খানেক ধরে চলা লড়াই শেষের পথে। আর মাত্র একটি ম্যাচের অপেক্ষা। যে ম্যাচ শেষে মিলতে পারে নতুন চ্যাম্পিয়ন। অথবা রেকর্ড শিরোপা জিতে নিজেদের অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে আরেক দল। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ফাইনালে আজ মুখোমুখি হচ্ছে ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। ম্যাচটি মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিকাল সাড়ে ৫টায় শুরু হবে। সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টেলিভিশন ও টি-স্পোর্টস।
ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি এই আসরে দুবার ফাইনাল খেলেছে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি। উদ্বোধনী আসর ২০১২ সালেই ফাইনালে ওঠে বরিশাল বার্নার্স। এরপর ২০১৫ সালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে ফাইনাল খেলে বরিশাল বুলস। কিন্তু একবারও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয়নি তাদের। নাম বদলালেও ফাইনাল ভাগ্য পক্ষেই আছে তাদের। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে এবার প্রথমবারের মতো শিরোপার আশায় ফরচুন বরিশাল।
অন্য দিকে রেকর্ড শিরোপা জেতার হাতছানি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের সামনে। দুইবার ফাইনাল খেলে দুইবারই শিরোপা জেতা দলটি এবার তৃতীয় শিরোপা জয়ের অপেক্ষায়। সেটা হলে কুমিল্লা হবে একমাত্র দল, যাদের ট্রফি কেসে শোভা পাবে তিনটি শিরোপা। বিপিএলে দুটি করে শিরোপা জিতেছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।
কেবল ফাইনালে উঠেছে বলেই নয়, আক্ষরিক অর্থেই এবারের বিপিএলের সেরা দুই দল ফরচুন বরিশাল ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। তারকা বিদেশি ক্রিকেটার দলে ভিড়িয়ে আসরের জৌলুশ বাড়িয়েছে তারা। পাশাপাশি দেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে তাদের সমন্বয়ও দারুণ।
দল দুটির হয়ে খেলেছেন ক্রিস গেইল, ডোয়াইন ব্রাভো, মুজিব-উর-রহমান, মঈন আলী, ফাফ ডু প্লেসি, সুনিল নারাইনদের মতো বিশ্ব তারকারা। বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মাতিয়ে বেড়ানো এসব ক্রিকেটারের দারুণ পারফরম্যান্স ফাইনালে দেখতে মুখিয়ে আছে ক্রিকেট ভক্তরা। টেলিভিশন ছাড়াও মাঠে এসে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন কয়েক হাজার দর্শক।
কুমিল্লার হয়ে খেলা মঈন আলী, ফাফ ডু প্লেসি, সুনীল নারাইনরা দারুণ ছন্দে আছেন। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তো তাণ্ডব চালিয়ে বিপিএলের ইতিহাসের দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন নারাইন। আরেক ক্যারিবীয় ক্রিস গেইলের ব্যাটেও এমন ঝড় দেখার আশায় ছিলেন অনেকে। কিন্তু এখনও তাকে চেনা ছন্দে দেখা যায়নি।
বরিশালের প্রধান কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন অবশ্য ফাইনালে গেইলের জ্বলে ওঠার ব্যাপারে আশাবাদী। মুজিব-উর-রহমান, ডোয়াইন ব্রাভোদের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। বরিশালের কোচ বলেন, 'জানি না ওর (ক্রিস গেইল) পারফরম্যান্স ফাইনালের জন্যই রয়ে গেছে কিনা। ও তো বড় খেলোয়াড়, বড় খেলায় জ্বলে উঠবে। আশা করছি, ক্রিস কিংবা মুজিব জ্বলে উঠবে, ব্রাভো তো ভালো করছেই।'
ফরচুন বরিশালের দেশি ক্রিকেটাররাও আলো ছড়িয়েছেন। ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার খেলেছেন কয়েকটি দূর্দান্ত ইনিংস। বল হাতে মেহেদী হাসান রানা, শফিকুল ইসলামরাও অবদান রেখে এসেছেন। অধিনায়ক সাকিব ব্যাটিং-বোলিংয়ে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন। বিপিএলে টানা ৫ ম্যাচে সেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার জিতে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। টুর্নামেন্ট সেরার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে তিনিই। ১০ ম্যাচে ৩টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩০.৭৭ গড়ে করেছেন ২৭৭ রান। যা এখন পর্যন্ত আসরের সপ্তম সর্বোচ্চ। বল হাতেও অনবদ্য সাকিবের শিকার ১৫ উইকেট, যা তৃতীয় সর্বোচ্চ।
পিছিয়ে নেই কুমিল্লাও। দলটির তিন বিদেশি ক্রিকেটার মঈন আলী, ফাফ ডু প্লেসি, সুনিল নারাইন তাদের বড় শক্তি। যদিও কুমিল্লার জন্য চিন্তার কারণ টপ অর্ডারে লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, মাহমুদুল হাসান জয়ের অধারাবাহিকতা। টুর্নামেন্ট বিচ্ছিন্নভাবে তিনজনই দুই-একটি ভালো ইনিংস খেলেছেন। বোলিংয়ে মেহেদী হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান, তানভীর ইসলাম, শহিদুল ইসলামরা দারুণ করেছেন। অবদান আছে মঈন, নারাইনদেরও।
এবারের বিপিএলে তিনবার মুখোমুখি হয়েছে বরিশাল-কুমিল্লা। এর মধ্যে দুইবার কুমিল্লাকে হারিয়েছে বরিশাল। কুমিল্লার হারা চার ম্যাচের দুটিই বরিশালের বিপক্ষে। কুমিল্লার অধিনায়ক ইমরুল কায়েস অবশ্য শিরোপার লড়াইয়ে দুই দলকেই সমান বলছেন। তার ভাষায়, 'দুই দলই ডিজার্ভ করে ফাইনাল খেলার জন্য। আমি বলব যে দল হিসেবে আমরা কেউ কারও থেকে কম না। প্রত্যেকটা দলই শক্তিশালী। ফাইনাল ম্যাচে যারা ভালো ক্রিকেট খেলবে, আগেও বলেছি যারা সাহস নিয়ে খেলবে, অনেক শান্ত থাকবে তাদেরই সম্ভাবনা বেশি থাকবে জেতার।'
কুমিল্লার কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চোখ রাখছেন সাকিবের দিকে। তার মতে সাকিবের মাথার সঙ্গে খেলতে হবে তাদের। তিনি বলেন, 'আমার কাছে মনে হয় বরিশালের যে শক্তিমত্তা, সেটা সাকিব আল হাসান। আমার মনে হয় সাকিবের মাথার সঙ্গে আমাদের খেলতে হবে। সে খুবই ভালো অধিনায়কত্ব করছে। তার সামর্থ্য যতটা, সেটাই কাজে লাগাচ্ছে। বিশেষ করে তার বোলিং বিভাগ নিয়ে। চারটা-পাঁচটা ম্যাচে খুব কম রান ডিফেন্ড করেছে।'
করোনাকালের কঠিন সময়ে ম্যানেজড ইভেন্ট ইনভাইরোমেন্ট (এমইই) প্রটোকলে ২৮ দিনে ৬ দল নিয়ে ৩ ভেন্যুতে মোট ৩৪ ম্যাচ খেলার মধ্য দিয়ে পর্দা নামছে বিপিএলের।