বার্লিন উৎসবে শীর্ষ পুরষ্কার পেল মৃত্যুদণ্ড নিয়ে নির্মিত ইরানি চলচ্চিত্র
বার্লিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এবার সেরার পুরষ্কার লাভ করেছে ইরানি পরিচালক মোহাম্মদ রাসলৌফ পরিচালিত 'দেয়ার ইজ নো ইভিল।' সর্বোচ্চ দণ্ড হিসেবে মৃত্যুর শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত এবং এর পেছনে মানবিক দ্বন্দ্ব ও অবস্থানকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে চলচ্চিত্রটির গল্প।
২০১৭ সাল থেকেই ইরান সরকার রাসলৌফ এর ওপর চলচ্চিত্র নির্মাণের নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই অবস্থায় নিজের ষষ্ঠ চলচ্চিত্র 'দেয়ার ইজ নো ইভিল' খুবই গোপনীয়তার বজায় রেখে নির্মাণ করেন।
ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাসলৌফ অবশ্য পুরষ্কার নিতে বার্লিন যেতে পারেননি। তার পরিবর্তে 'গোল্ডেন বিয়ার' পুরষ্কার গ্রহণ করেন কন্যা বারান। বাবার নির্মিত চলচ্চিত্রে কন্যা বাড়ান নিজেও অভিনয় করেছেন। খবর বিবিসির।
এদিকে ইরানি চলচ্চিত্রটিকে সেরা ছবি নির্বাচিত করার বিষয়ে জুরি প্যানেল প্রেসিডেন্ট জেরেমি আয়রন বলেন, 'দেয়ার ইজ নো ইভিলে' স্থান পেয়েছে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে চারটি গল্প। একটি কর্তৃত্ববাদি সরকার কিভাবে জন-মানসে প্রভাব বিস্তার করে, তাদের বিভাজিত করে এবং সবশেষে তাদের অমানবিক করে তোলে সেটা এখানে সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
তবে বার্লিনে স্বশরীরে উপস্থিত হতে না পারলেও সেখানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্কাইপ ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে যোগ দেন মোহাম্মদ রাসলৌফ।
পুরষ্কারজয়ী চলচ্চিত্রের দর্শন ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, 'দেয়ার ইজ নো ইভিল' আসলে মানুষের প্রতি তাদের কৃতকর্মের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান। এখানে যেসব ব্যক্তি তাদের কৃতকর্মের দায় এড়িয়ে বলেন এসব সিদ্ধান্ত আসলে ওপর মহলের নির্দেশে নেওয়া হয়েছে, আমি দায় এড়িয়ে যাওয়া সেসব ব্যক্তিদের কথা বলতে চেয়েছি।
মোহাম্মদ রাসলৌফ বলেন, দায় এড়িয়ে যাওয়াটা আসলে তাদের অপরাধবোধ লাঘব করেনা। যাদের সহযোগিতায় কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর মতো সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হয়, তাদেরকে এই দায় নিতে হবে। এটাই হতে পারে তাদের আত্মিক শক্তির জায়গা।
এভাবে নিজ কৃতকর্মের দায় নিতে থাকলেই মানুষ পূর্ব-বিবেচনা ছাড়া কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে সাহায্য করবে না বলে মনে করেন তিনি। কারণ তিনি মনে করেন যারা কর্তৃত্ববাদি সরকার ও প্রশাসনকে সহযোগিতা করছেন ব্যক্তি জীবনে তাদের প্রায় সকলেই সাধারণ ও নিরীহ মানুষ।
এই বিষয়ে নিজ অভিজ্ঞতার কথা বলেন ইরানি এই পরিচালক। এই অভিজ্ঞতাই তাকে চলচ্চিত্রটি গোপনে নির্মাণের সাহস যুগিয়েছে।
রাসলৌফকে এর আগে ২০১০ সালে সরকারি অনুমতি ছাড়া শুটিং করায় গ্রেফতার করা হয়। প্রায় ৬ বছরের জেল হয় তার। এসময় কারাগারে তাকে যে ব্যক্তি জেরা করেছিলেন ছাড়া পাওয়ার পরেই একদিন ওই ব্যক্তিকে এক ব্যাংক থেকে বেড়িয়ে আসতে দেখেন তিনি। এরপর তিনি ওই ব্যক্তির পিছু নেন এবং তার কর্মকাণ্ড দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন।
আর এখানেই অপেক্ষা করছিল বিস্ময়। জেলের যে জেরাকারীকে ভয়ঙ্কর কোনো ব্যক্তিত্ব ভেবেছিলেন, দেখা গেলো ব্যক্তি জীবনে সে নিতান্তই নিরীহ এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ।
এই অভিজ্ঞতা থেকে রাসলৌফ বুঝতে পারেন আসলে স্বৈরাচারী সরকারের শাসনে সাধারণ মানুষেরাই অমানবিক হয়ে ওঠেন। সেই দায় এড়াতে তারা নিজেদের কাছেই মিথ্যে বলতে থাকেন। এরা নিজ কৃতকর্মের দায় নিলে তাই সমাজে মানবাধিকার লঙ্ঘন বহুলাংশে কমবে। আর এটাই ছিল তার চলচ্চিত্রে বলা চারটি মৃত্যুদণ্ডের গল্পে মূল উপজীব্য।