চীনের সিআইপিএস রাশিয়ার জন্য হতে পারে সুইফটের বিকল্প, দুর্বল হবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রভাব
প্রচলিত নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে দমাতে পারবে না ওয়াশিংটন। প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে শেষপর্যন্ত আন্তর্জাতিক আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বার্তা ব্যবস্থা- সুইফট থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করতেই হতো।
এনিয়ে ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে মার্কিন প্রশাসন ঐক্যমত্যেও পৌঁছেছে বলে বৈশ্বিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। তারা একযোগে সুইফট থেকে রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে বহিস্কারের ঘোষণাও দেয় রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি)। বহিষ্কৃত ব্যাংকের সংখ্যা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এই সুইফট আসলে ভার্চুয়াল বার্তার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের ব্যাংকের মধ্যে প্রকৃত অর্থের বিনিময়, যার পুরো নাম- সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টারব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন্স।
তবে এনিয়ে হয়তো রাশিয়ার খুব বেশি বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। চীনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা ব্যবহার করে পশ্চিমাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা থেকে অনেকটাই রক্ষা পেতে পারে মস্কো। বিকল্প ব্যবস্থাটিতে মার্কিন ডলারের বদলে রাশিয়াকে তার বেশিরভাগ বাণিজ্য চীনা মুদ্রা ইউয়ানে করতে হবে।
২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করে চীনের এই ক্রস-বর্ডার ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেম (সিআইপিএস)। এখনও এটির পরিধি বিস্তারের কাজ চলছে। যুক্ত হয়েছে মাত্র ৮০টি বিদেশী ব্যাংক।
কিন্তু, তাই বলে সিআইপিএস সুইফটের বিকল্প হতে পারবে না এমন ধারণা ভুল। তাছাড়া, রাশিয়া যদি বাণিজ্যের পেমেন্ট বা মূল্য পরিশোধ/ গ্রহণে সম্পূর্ণভাবে মার্কিন ডলার নির্ভর ব্যবস্থা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়—তাহলে বিশ্বব্যাপী আমেরিকার মর্যাদা ও আর্থিক শক্তিতে তা বড় আঘাত হানবে।
বাণিজ্যকে 'ডি-ডলারাইজেশন' বা ডলার নির্ভরতা থেকে সরিয়ে আনার বিষয়ে পশ্চিম ইউরোপেও আইনপ্রণেতাদের মধ্যে বিতর্ক চলেছে আগেও। তবে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে এবার ফুঁসে উঠেছে ইউরোপ। গণমাধ্যম ও জনগণ রাশিয়াকে কঠোরতম নিষেধাজ্ঞা দিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
জার্মানির ম্যানেজার ম্যাগাজিন রুশ হামলার আগেই গত ১৪ ফেব্রুয়ারি এক সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করে, "সুইফট থেকে রাশিয়াকে বহিস্কারকেই পশ্চিমা বিশ্বের হাতে থাকা সবচেয়ে ধারালো অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার তলোয়ার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।"
"তবে এই তলোয়ার দ্বিধারী: এর অর্থনৈতিক পরিণতি কেবল রাশিয়ার ক্ষেত্রেই মারাত্মক হবে না, বরং তা পশ্চিম ইউরোপেও পড়বে। তাছাড়া, এতে রাশিয়া ও চীনের মার্কিন ডলার ভিত্তিক বিনিময় ব্যবস্থা থেকে সরে যাওয়া নতুন গতি পাবে। দেশদুটি এরমধ্যেই প্রতিযোগী পেমেন্ট ব্যবস্থা তৈরির কাজ করছে।"
রাশিয়া নিজস্ব একটি আন্তঃব্যাংক বার্তা ব্যবস্থা তৈরি করেছে। এর মাধ্যমেই বর্তমানে দেশটির স্থানীয় ব্যাংকগুলো তাদের ২০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ লেনদেন করছে।
ডলারের বিকল্প হিসেবে চীনা মুদ্রা ইউয়ানের রয়েছে বেশকিছু সুবিধা ও অসুবিধা। এর আগে ২০২০ সালের শুরুতে মহামারিজনিত মন্দার সময় মুদ্রাটি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ৮ শতাংশ বিনিময় মূল্য বৃদ্ধি অর্জন করে।
চীনে ভোক্তাপর্যায়ে মূল্যস্ফীতির হার বর্তমানে বার্ষিক ১ শতাংশ । আর যুক্তরাষ্ট্রে তা সাড়ে ৭ শতাংশ। ফলে বর্তমান অবস্থানে শক্তিশালী ইউয়ান ডলারের ভালো বিকল্প হওয়ার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।
- সূত্র: এশিয়া টাইমস