ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শুঁটকি উৎপাদনে ধস, দাম বাড়লেও ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা
শুটকি তৈরির জন্য বিখ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার লালপুর শুঁটকি পল্লীতে মাছের যোগান কম থাকায় আর দাম বেশি থাকায় শুটকি উৎপাদন কমে গেছে।
শুটকি ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, লালপুর থেকে প্রতি বছর ১০০ কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয়। পল্লীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ব্যবসায়ী আছেন প্রায় ৩০০'র মতো।
শুঁটকি ব্যবসায়ী উৎপল চন্দ্র দাস জানান, গত ১০ বছরে ধরে তিনি শুঁটকি ব্যবসা করছেন। বিক্রির জন্য এবার ২ কোটি টাকা মূল্যের বিভিন্ন মাছের শুঁটকি বানাচ্ছেন। তবে করোনা মহামারি শুরুর আগের সময়গুলোতে ৪-৫ কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি করতেন।
বিগত দুই মৌসুমে করোনার অন্তত ৪০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে তার। এবার পুঁজি স্বল্পতার কারণে শুঁটকি উৎপাদন কমেছে বলে জানান তিনি।
আরেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বিনোদ চন্দ্র দাস বলেন, মৌসুমে সব খরচ বাদ দিয়ে ১০-১২ লাখ টাকা আয় হয়। প্রতি মৌসুমেই প্রায় দেড় কোটি টাকার শুঁটকি তৈরি করেন তিনি। কিন্তু এবার মাছের যোগান কম এবং দাম বেড়ে যাওয়ায় শুঁটকির উৎপাদন কমেছে। এর ফলে এবার শুঁটকির দামও বাড়বে।
লালপুর শুঁটকি পল্লীতে মাছ সরবরাহকারী মো. সেলিম মিয়া জানান, এবছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের হাট-বাজারগুলোতে মাছের আমদানি কম। চাহিদার তুলনায় কিছুটা সংকট থাকায় দাম বেড়েছে। শুঁটকি ব্যবসায়ীরা গত মৌসুমে যে মাছ নিয়েছিলেন, সেই টাকা এখনও পর্যন্ত পুরোপুরি শোধ করতে না পারায় মাছ ব্যবসায়ীরাও পুঁজি সংকটে আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাজমহল বেগম বলেন, প্রাকৃতিক কারণ এবং অতিরিক্ত মাছ শিকারের কারণে মাছ কম পাওয়া যায়।
"গতবছর বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় নদী, খাল-বিলে পানি কম ছিল। সেজন্য মাছও কম হয়েছে। এছাড়া পোনা ও ডিমওয়ালা মাছ শিকারও মাছ কম হওয়ার কারণ।"
গত দুই মৌসুমে করোনার কারণে প্রত্যেক ব্যবসায়ী বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। করোনাঘাতের ফলে বিগত মৌসুমে বিক্রিত শুঁটকির সম্পূর্ণ মূল্য এখনও পাননি ব্যবসায়ীরা। এর ফলে ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ অর্থ কম।
ফলে চাহিদা মতো কাঁচা মাছ কিনতে না পারায় শুঁটকির উৎপাদন কমেছে। মাছের যোগান কম থাকায় প্রত্যেক প্রজাতির মাছের দাম কেজিতে অন্তত ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে।
এবার প্রতি কেজিতে শুঁটকির দাম অন্তত ৭০-৮০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশপাশ এলাকার হাট-বাজার থেকে কাঁচা মাছ কিনে এনে লালপুর গ্রামে মেঘনা নদীর পাড়ে তৈরি করা হয় দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছের শুঁটকি। মাছ কেটেকুটে প্রক্রিয়াজাত করে মেঘনা নদীর পাড়ে মাচায় শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি।
এখানে তৈরি ও বিক্রি শুঁটকির মধ্যে ৫০ ভাগ পুঁটি শুঁটকি, বাকি ৫০ ভাগ অন্যান্য মাছের।
বর্তমানে শুঁটকি পল্লী থেকে আকার ও মান ভেদে পুঁটি শুঁটকি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-৮০০ টাকায়।
এছাড়া, ট্যাংরা কেজি প্রতি ২০০-৬০০ টাকা এবং চান্দা শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫৫০ টাকা কেজি দরে। আর বাইম শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০-১৫০০ টাকায়, কাইক্কা ৮০০-১৫০০ টাকা এবং গইন্না শুঁটকি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৮০০ টাকা দামে।