অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যের দাম বেশি
ঢাকায় গড়ে এক ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০.৫৭ টাকায়, একই পরিমাণ ডিমের দাম মালয়েশিয়ার সাইবারজায়া শহরে ৮৫.৭২ টাকা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম ওহাইওর ডেটন শহরে ১০৩ টাকা। ডেটনের তুলনায় ঢাকায় ডিমের দাম ৭.৩৪% এবং সাইবারজায়ার তুলনায় ২৯% বেশি।
একইভাবে ঢাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৫৫.২২ টাকা, যা সার্বিয়ার বেলগ্রেডে ৪০.৯০ টাকা এবং আজারবাইজানের বাকুতে ৩৭.৪৬ টাকা। রান্নায় ব্যবহৃত অন্যতম এই মূল উপকরণটির মূল্য ঢাকায় বেলগ্রেডের তুলনায় ৩৫% এবং বাকুর তুলনায় ৪৭.৪১% বেশি।
আমদানিকৃত হোক কিংবা স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত, এভাবেই ঢাকার ভোক্তারা অন্যান্য দেশের তুলনায় নিত্যপণ্যের জন্য বেশি মূল্য দিতে বাধ্য হয় বলে নিজের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
রোববার সিপিডি আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা অযৌক্তিকভাবে বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে তুলছে।
তিনি বলেন, "কখনও কখনও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির মাত্রা বৈশ্বিক হারকেও ছাড়িয়ে যায়। দেখা যায়, এর জেরে যেসব পণ্য আমদানির বাইরে সেসবের দামও বেড়ে যায়।"
ড. ফাহমিদা বলেন, ২০১৭ সালে ঢাকায় কর্মচারীদের মাসিক গড় আয় ছিল ১৪৯ ডলার, যা ডেটনে ছিল ৩,৯৫৫ ডলার। মার্কিন শহরটির ভোক্তারা ২৬.৫৪ গুণ বেশি আয় করা সত্ত্বেও কম দামে ডিম কেনার সুযোগ পান।
বাংলাদেশে অস্বাভাবিক বেশি দামে পণ্যদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতি প্রতিবেদনে এর কোনো প্রতিফলন নেই।
তিনি আরও বলেন, খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের মূল্যের মধ্যে একটি জোরালো সম্পর্ক রয়েছে। ক্রমবর্ধমান খাদ্য মূল্যস্ফীতি খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতিকেও ত্বরান্বিত করবে।
ড. ফাহমিদা উল্লেখ করেন, বিবিএসের দাবি, গত চার মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫.৩ শতাংশের নিম্নে স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু কিছু পণ্যের মূল্য অত্যধিক বেশি, এমনকি ৩০% পর্যন্ত।
তার গবেষণাপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম অনেক বেশি।
জানুয়ারিতে ভিয়েতনামে প্রতি কেজি চাল ৩৪ টাকা এবং থাইল্যান্ডে ৩৫-৩৭ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু বাংলাদেশে চালের দাম ছিল কেজিপ্রতি ৫১-৬৯ টাকা।
ময়দার ক্ষেত্রেও তিনি একই চিত্র খুঁজে পেয়েছেন।
গত বছরের মে মাসে বিশ্ব ও স্থানীয় উভয় বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ছিল ১৩৪ টাকা। বিশ্ববাজারে তা ১২৬ টাকায় নেমে গেলেও স্থানীয় বাজারে এর দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ টাকায়।
ঢাকার গ্রাহকরা এক কেজি চিনি কিনতে ৮৫ টাকা মূল্য পরিশোধ করেন। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম ইউরোপে ৩২ টাকা, যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭ টাকা। বিশ্ববাজারে চিনির গড় দাম মাত্র ৩৫ টাকা।
বিশ্ববাজারে গরুর মাংসের দাম প্রতি কেজি ৫১৩ টাকা হলেও ঢাকায় এর দাম পড়বে ৫৭৭ টাকার ওপর।
অন্যদিকে স্পেনের ভোক্তারা এক লিটার দুধ পেতে ৬২.৯০ টাকা ব্যয় করে, যার মূল্য ঢাকায় ৮০.২০ টাকা। লিকুইড আইটেম ঢাকায় ২৮% ব্যয়বহুল, যদিও এর অধিবাসীদের আয় স্পেনের বাসিন্দাদের মাত্র ৬.৬০%।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ঢাকায় দরিদ্র ও স্থায়ী মজুরিপ্রাপ্তদের আয় অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় অনেক কম।
এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা ও কর কাঠামোতে দুর্বলতা রয়েছে। রয়েছে কার্টেল এবং একচেটিয়া (মনোপলি) ব্যবস্থার উপস্থিতি। যারা এসব অপকর্মের সাথে জড়িত তাদের সম্পর্কে তথ্য থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।