ফেব্রুয়ারিতে চালু হচ্ছে ‘জনতার বাজার’, ন্যায্যমূল্যে পাওয়া যাবে নিত্যপণ্য
ঢাকা জেলা প্রশাসন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ এবং জনসাধারণকে স্বস্তি প্রদানের লক্ষ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করতে "জনতার বাজার" নামক একটি ন্যায্যমূল্য বাজার চালুর ঘোষণা দিয়েছে।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে মোহাম্মদপুরে প্রথম বাজারটি চালু হবে এবং পরে ঢাকা শহরের আরও পাঁচটি স্থানে এ উদ্যোগ সম্প্রসারিত করা হবে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ উদ্যোগের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।
ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ জানান, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব দূর করে কৃষকদের সরাসরি ভোক্তাদের সঙ্গে সংযুক্ত করা এবং পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখা।
তিনি বলেন, "আমাদের লক্ষ্য হলো ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষক ও ভোক্তাদের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক গড়ে তোলা। প্রাথমিকভাবে ঢাকায় ছয়টি বাজার স্থাপন করা হবে এবং ভবিষ্যতে এই উদ্যোগ আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।"
এই বাজারে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম এবং সবজির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য জেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত দামে বিক্রি করা হবে। রমজান মাসে বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থাও থাকবে। এ ছাড়া মজুত ব্যবস্থাপনা এবং রিয়েল-টাইম মূল্যের তথ্য প্রদর্শনের জন্য একটি সফটওয়্যার তৈরি করা হবে।
জেলা প্রশাসন জানায়, পণ্যের মূল্য নির্ধারণে পরিবহন খরচ এবং উদ্যোক্তাদের জন্য যুক্তিসঙ্গত লাভের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
চিহ্নিত ছয়টি স্থানের মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদপুরের ইউল্যাব বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে, মিরপুর গোলরটেক মাঠ, কামরাঙ্গীরচরের কুনরাঘাট মেডিকেল মোড়, বাড্ডার বড় বেরাইদ বাজার, গুলশানের ঢেলনা মসজিদ মাঠ এবং ডেমরার সারুলিয়া বাজার।
বাজার পরিচালনায় স্থানীয় উদ্যোক্তা, শিক্ষার্থী এবং বেকার যুবকদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ ছাড়া সরকারি জমিতে অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে বাজার স্থাপন করা হবে।
তানভীর আহমেদ বলেন, "কম দামে পণ্য উৎপাদনকারী অঞ্চল থেকে সরাসরি পণ্য পরিবহন করা হবে এবং মান নিয়ন্ত্রণ ও খরচ-দক্ষতা নিশ্চিত করা হবে।"
এই প্রকল্প বাস্তবায়নে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলো সহযোগিতা করবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন, এটি নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য উল্লেখযোগ্যভাবে সহায়ক হবে। তবে তারা ভিড় নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং টেকসই বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
সভায় ছাত্র প্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরেন।
উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করে জেলা প্রশাসক বলেন, "আপনার পরামর্শ এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই আমরা এই প্রকল্পকে সাফল্যের পথে নিয়ে যেতে পারব।"
প্রস্তাবিত ন্যায্যমূল্যের বাজারের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো- জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর-সংস্থার সহযোগিতায় বাজার পরিচালিত হবে; দেশের যে স্থানে যে পণ্যের দাম তুলনামূলক কম, সেখান থেকে পণ্য সংগ্রহ ও পরিবহন করে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে এসে বিক্রয় করা হবে; ক্রয়-বিক্রয় ও পরিবহন ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় উদ্যোক্তা/ছাত্র-জনতাকে দায়িত্ব প্রদান করা হবে; প্রতিটি পণ্য জেলা প্রশাসন/সংশ্লিষ্ট কমিটি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে বিক্রয় করা হবে; ক্রয়মূল্যের সাথে প্রকৃত পরিবহন খরচ এবং উদ্যোক্তাগণকে প্রদেয় যৌক্তিক মুনাফা যোগ করে ন্যায্যভাবে বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করা হবে; যে কোনো চাষী, খামারি বা উৎপাদনকারী উৎপাদিত নিজস্ব পণ্য সরাসরি উক্ত বাজারে বিক্রয় করতে পারবেন। হিসাব সংরক্ষণ ও সার্বিক কার্যক্রম ব্যবস্থাপনার জন্য সফটওয়্যার নির্মাণ করা হবে, যাতে প্রতিটি পণ্যের ক্রয় ও বিক্রয়মূল্য অনলাইনে প্রদর্শিত হয়।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, ঢাকায় প্রাথমিকভাবে ছয়টি বাজার স্থাপন করা হবে। রমজান মাসে এই বাজারগুলোর মাধ্যমে ভোক্তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। এর পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ উদ্যোগের বিস্তৃতি ঘটানো হবে।
এ উদ্যোগে স্থানীয় উদ্যোক্তা ও শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া পণ্য পরিবহন ও মান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি থাকবে।