বড় মন্ত্রণালয়গুলোর দুর্বলতা প্রভাব ফেলছে এডিপি বাস্তবায়নে
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১৫ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের একটি হলো নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়। এই মন্ত্রণালয় চট্টগ্রাম বন্দর, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা ও মোংলা বন্দরের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
কিন্ত অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এই মন্ত্রণালয় এডিপি বরাদ্দের মাত্র ১৮.৫২% অর্থ ব্যয় করতে সক্ষম হয়েছে। পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা সেতু বিভাগ, ব্যয় করছে মাত্র ২২% অর্থ। একই সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার ২০.৫৭%।
করোনা পরিস্থিতি বড় মন্ত্রণালয়গুলোর সার্বিক এডিপি বাস্তবায়নে প্রভাব ফেলেছে। এর ফলে কোভিড-পূর্ব সময়ে যে হারে এডিপি বাস্তবায়ন হতো তার চেয়ে কম অর্থ ব্যয় করতে পারছে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হার ৩৫.৮০%। গত অর্থবছর এ হার ছিল ৩৩.৮৩%, এই অর্থবছরে কোভিড পরিস্থিতিতে এডিপি বাস্তবায়নের গতি কম ছিল।
তবে কোভিড-পূর্ব অর্থবছরগুলোতে ৩৭% থেকে ৩৯% হারে এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
আইএমইডির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অর্থছাড় না হওয়া, ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়া, দরপত্র আহ্বানে বিলম্ব, দরপত্র রেসপন্সিভ না হওয়া, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়া প্রকল্প নেওয়া, ভৌত কাজের সঠিক নকশা না থাকা, বৈদেশিক ঋণ নিশ্চিত না করে প্রকল্প নেওয়া, অপ্রতুল বরাদ্দ, মামলাজনিত সমস্যা, যথাসময়ে প্রকল্প সংশোধন না করা, কর্মপরিকল্পনা ও ক্রয় পরিকল্পনা না থাকায় প্রতি অর্থবছর বরাদ্দে অর্থ ব্যয় করতে পারে না বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
আইএমইডির কর্মকর্তারা বলেন, কোভিডের কারণে বৈদেশিক পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞরা প্রকল্প এলাকায় আসা-যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন। আবার একই কারণে বিদেশ থেকে প্রকল্পের মালামাল আনতে বিলম্ব হচ্ছে। আর এডিপি বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করছে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থবছরের শুরুতে প্রকল্পে অর্থ ব্যয় কম করে সংস্থাগুলো। অর্থবছরের শেষে বেশি অর্থ ব্যয় করে। এতে অনিয়ম হওয়ার সুযোগ থাকে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে থেকে রড-সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়তি ছিল। এ কারণে অনেক ঠিকাদারই এখন ধীর গতিতে কাজ করছে। প্রকল্পের ব্যয় পুনর্মূল্যায়ন হবে, এই আশায় তারা বসে আছে। ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঠিকাদাররা বাস্তবায়ন গতি একেবারেই কমিয়ে দেয়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক ড. জায়েদ বখত বলেন, বছরের পর বছর ধরে একই ধরণের দুর্বলতা নিয়ে এডিপি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সঠিক পরিকল্পনা থাকে না বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোর। এ কারণে ভূমি অধিগ্রহণ, দরপত্র সংক্রান্ত কাজ সময়মতো করা যায় না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এডিপি বাস্তবায়নে সক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। ফলে দেখা যায় চাপের মুখে অর্থবছরের শেষ দিকে বরাদ্দের ৬০ শতাংশ বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়। এতে কাজের গুণগত মান থাকে না এবং অর্থও অপচয় হয়।