হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের অবিলম্বে মুক্তির দাবি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের
ধর্ম ও বিজ্ঞানের পার্থক্য নিয়ে ক্লাসরুমে আলোচনায় 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত' করার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া স্কুল শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের অবিলম্বে ও নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বিচারে আটক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারকে অপরাধীকরণ করার ফলে জনগণের মধ্যে উদ্ভূত ভীতি সঞ্চারের পরিস্থিতি নথিভুক্ত করছে সংস্থাটি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, হৃদয় চন্দ্র মন্ডলের এই ঘটনা বিদ্যমান সংকটের পরিস্থিতিকে আরও ঘনীভূত করেছে, একটি দেশের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য হুমকিস্বরূপ এই ঘটনা।
"শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় নিজের মতামত দেওয়ার জন্য একজন শিক্ষকের গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। কোনো ভয় ছাড়া সব ধরনের ধারণা ও মত নিয়ে আলোচনা করতে পারার স্বাধীনতা থাকা উচিত শিক্ষকদের। হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে অবিলম্বে ও নিঃশর্তে মুক্তি দিতে হবে," বলেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের স্মৃতি সিং।
"হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে গ্রেপ্তার করা বাংলাদেশের চলমান উদ্বেগজনক প্রবণতার প্রতীক যেখানে ক্রমশই স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শ্রেণিকক্ষে আলোচনার জন্য একজন শিক্ষকের গ্রেপ্তার হওয়া বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তা-ধারায় উদ্বুদ্ধ করার জন্য কাউকে জেলে যেতে হতে পারে"।
এক শিক্ষার্থীর রেকর্ড করা অডিও ফাইল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, বিজ্ঞানের একটি ক্লাসে 'ধর্ম বিশ্বাসের ব্যাপার', 'বিজ্ঞান পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত। ', এ নিয়ে কথা বলেছিলেন তিনি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সংগ্রহ করা অডিও রেকর্ডিংটিতে ওই শিক্ষককে বলতে শোনা যায়, "ধর্মের কোন প্রমাণ নেই। শেষমেশ ধর্মের ব্যখ্যা কোথায় যায় জানো? শেষমেশ ওই ঈশ্বর দেখে, ঈশ্বর সমাধান দেবেন, পরকালে বিচার হবে। এসব বিশ্বাসের বিষয়। কোন প্রমাণ নেই৷ আর বিজ্ঞান প্রমাণ সাপেক্ষ"।
রেকর্ড করার দু'দিন পর ২২ মার্চ স্কুলটির প্রধান শিক্ষক সংবাদমাধ্যমকে জানান, হৃদয় মন্ডলের শাস্তি চেয়ে শিক্ষার্থী ও অন্যান্যরা স্কুলের বাইরে বিক্ষোভ করছে। সেদিনই স্কুলটির একজন অফিস সহকারি হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
গ্রেপ্তারের পর থেকেই কারাগারে আছেন তিনি, দুইবার তার জামিনের আবেদন নাকচ করা হয়েছে। পরবর্তী জামিনের শুনানি হবে ১০ এপ্রিল।
বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রনমিকাল অ্যাসোসিয়েশন ও সেন্টার ফর উইমেন জার্নালিস্টসসহ বেশ কিছু সংস্থা তার গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছে ও শিক্ষকদের শিক্ষকতা করার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
দেশজুড়ে মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী ও শিক্ষকরা এ গ্রেপ্তার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, এ ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন তারা।
"হৃদয় চন্দ্র মন্ডলকে আটক করা বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবক্ষয়ের লজ্জাজনক উদাহরণ। এ পরিস্থিতি উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে মানুষ মুক্তভাবে ও নিরাপদে মত প্রকাশ করতে পারে। কোনো ধরনের ভয় ছাড়াই শিক্ষকরা ক্লাসে কথা বলতে পারবেন তা নিশ্চিত করতে হবে", বলেন স্মৃতি সিং।