ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থার সেই রাতে কী ঘটেছিল সুপ্রিম কোর্টে!
সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনাকাঙ্খিত প্রস্থান এবং গত ৪৮ ঘন্টায় ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনা পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে সত্যিই নজিরবিহীন। শনিবার (৯ এপ্রিল) সকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা দফায় দফায় পিছিয়ে রোবরাব (১০ এপ্রিল) ভোররাতে অনুষ্ঠিত হয়। অনাস্থা ভোটের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চকর্তৃক সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনের সম্ভাব্য পরিণতি সম্পর্কে ইমরানকে জানানোর পরেই জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের অনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় এবং পতন হয় ইমরান খান সরকারের।
শনিবার রাতে অনাস্থা ভোট নিয়ে কী চলছিল পাকিস্তানের ঘরোয়া রাজনীতিতে, তা এখন এক বড় কৌতূহলের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ইমরান খান সরকারের পতন অনেকটা নিশ্চিত ধরে নিয়েছিলেন বিশ্লেষকরা। তবে, গত ৩ এপ্রিলের ঘটনা মোড় ঘুরিয়ে দেয় পুরো পরিস্থিতির। এই দিন পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের নিম্নকক্ষের ডেপুটি স্পিকার কাশিম খান সুরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাব খারিজ করে দেন; সেইসঙ্গে বাতিল হয়ে যায় ওই প্রস্তাবের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিতব্য অনাস্থা ভোট। বিষয়টিকে ডেপুটি স্পিকার সংবিধানের ৫ নং অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেন। এরপর ইমরানের পরামর্শে জাতীয় পরিষদ (সংসদ) ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি।
তবে, এসব সিদ্ধান্তকে বাতিল ঘোষণা করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের পাঁচ বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বেঞ্চের পাঁচ জনই এ রায়ের পক্ষে ভোট দেন। বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সেই রায় শোনানো হয়। সেইসঙ্গে জানানো হয়, শনিবার (৯ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টায় অনাস্থা প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। রায় শোনানোর সময় পাকিস্তানের বর্তমান ও ২৮তম প্রধান বিচারপতি ওমর আতা বান্দিয়াল বলেন, কেবল জাতীয় স্বার্থ ও বাস্তবিক সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই আদালত তার সিদ্ধান্ত নেয়।
তবে, শনিবার সকালে ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও রোববার ভোররাত পর্যন্ত তা চার দফা পেছানো হয়। পাকিস্তানের গণমাধ্যম দ্য নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশার নামাজের বিরতির পর সাড়ে ৯টার দিকে আবারও অধিবেশন শুরুর পরবর্তী সময় নির্ধারণ করা হয়। আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক, অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি সারতে হবে রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে। কিন্তু স্থানীয় সময় রাত প্রায় ১১টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত জাতীয় পরিষদে ভোটের প্রক্রিয়া শুরুই হয়নি।
অবশেষে রাত ১১টার পরে এবং মধ্যরাতের আগে ইমরান খানকে জানানো হয়, অনাস্থা ভোট আটকে রাখলে তিনি এবং তার দল সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন। শুধু তাই নয়, কাল বিলম্বের দায়ে আদালতের তিরস্কারের পাশাপাশি ১৯০ নং অনুচ্ছেদের অধীনে আদালত কর্তৃক শাস্তি মুখোমুখিও হতে পারেন তিনি ও তার দল। ইমরান খান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ জারি হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা দেয়। এরপরেই মূলত ভোটাভুটির প্রক্রিয়া শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। মধ্যরাতের আগেই সুপ্রিম কোর্ট ভবনে পৌঁছে পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জরুরি শুনানির জন্য বসা হয়। এরইমধ্যে ততক্ষণে অ্যাসেম্বলির বাইরে মোতায়েন করা হয় প্রিজন ভ্যান।
প্রায় একই সময়ে চরম নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে পদত্যাগ করেন স্পিকার আসাদ কায়সার ও ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি। পরিস্থিতি বিবেচনায় পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের চেয়ার প্যানেলের সদস্য আয়াজ সাদিক স্পিকারের দায়িত্ব নেন এবং মধ্যরাতের আগেই অনাস্থা ভোটের প্রক্রিয়া শুরু করেন। জানা গেছে, ওই রাতে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে ইমরানের সঙ্গে দেখা করেন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার।
অনাস্থা ভোটে ইমরানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ভোটের দরকার ছিল ১৭২টি। তার বিরুদ্ধে ভোট পড়ে ১৭৪টি। রোববার ভোররাতেই ভোটের ফলাফল আসে গণমাধ্যমে; পরাজিত হন ইমরান খান ও তার সরকার।
- সূত্র: দ্য নিউজ, ডন