ঈদের ছুটির আগে ১৫ দিনের বেতন দেওয়াকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষের আশংকা
সরকারের পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরের ছুটির আগে গার্মেন্টসসহ সব সেক্টরের শ্রমিকদের উৎসব ভাতা, বকেয়া বেতনসহ চলতি (এপ্রিল) মাসের অন্তত ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করার নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে সাভার ও আশুলিয়ায় তৈরী পোশাক খাতের শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষ তৈরী হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
তবে তৈরি পোশাক কারখানা মালিকরা সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং কোন ধরণের শ্রম অসন্তোষের শঙ্কা নেই বলেও মনে করছেন।
সোমবার রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ের ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদ-টিসিসি এর ৭১তম এবং আরএমজি টিসিসি এর ১২তম সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের এই নির্দেশনার পর মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সহ কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এই আশংকার কথা প্রকাশ করা হয়। একইসাথে শ্রমিক সংগঠনগুলো ছুটির আগে শ্রমিকদের চলতি মাসের সম্পূর্ণ বেতন পরিশোধের দাবি জানায়।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, 'আমরা শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছি যেন মালিকপক্ষ ২০ রমজানের মধ্যে শ্রমিকদের বেসিকের সমান বোনাস, পূর্বের বকেয়া পরিশোধ করেন, পাশাপাশি ছুটির আগে শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের সম্পূর্ণ বেতন পরিশোধ করার জন্য। এটি শ্রমিকদের দাবি।'
তিনি বলেন, 'ছুটির আগে শ্রমিকদের চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করার নির্দেশনা আসার পর থেকে শ্রমিকরা একের পর এক আমাদের ফোন করছেন, যোগাযোগ করছেন। যেহেতু, এবছর ঈদের আগে শ্রমিকরা পুরো মাস কাজ করে তবেই ছুটি পাচ্ছেন, অর্থাৎ ২৮ তারিখ পর্যন্ত কাজ করে তারপর শ্রমিকরা ছুটিতে যাবে, সুতরাং অন্তত মানবিক কারণে হলেও শ্রমিকদের চলতি মাসের সম্পূর্ণ বেতন মালিকপক্ষের পরিশোধ করা উচিৎ।'
তিনি আরও জানান, এই দাবিতে ইতিমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে তারা আগামী শুক্রবার আশুলিয়ায় একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বিক্ষোভ মিছিল শেষে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন নেতারা।
জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ কবির হোসেন বলেন, শ্রমিকদের চলতি মাসের ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করা হলে শ্রমিক অসন্তোষ তৈরী হবে।
তিনি বলেন, 'ইতিমধ্যে অনেকগুলো কারখানার মালিকপক্ষ কথা দিয়েছেন যে তারা শ্রমিকদের ছুটির আগে চলতি মাসের সম্পূর্ণ বেতন পরিশোধ করবেন। সুতরাং এখন এসে ১৫ দিনের বেতন পরিশোধ করা হলে শ্রমিকরা তা মানবে না।'
বাংলাদেশ গার্মেন্টস এন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন সরকারও বিজিএমইএ এর কাছে বিষয়টি পুনর্বিচারের দাবি জানান।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, 'আমরা সরকারের দেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শ্রমিকদের বেতন দেব। ১৫ দিনের বেতন নিতে শ্রমিকদের কোন আপত্তি নেই। কোন ধরণের শ্রম অসন্তোষের আশঙ্কাও দেখি না। এখানে মালিক-শ্রমিক ঠিক আছে। যারা (শ্রমিক নেতারা) এসব বলছে, তারা হয়তো নিজের স্বার্থে বা অন্য কারো স্বার্থে এসব কথা বলছে।'
তবে তিনি বলেন, 'কোন কারখানা মালিক যদি পুরো মাসের বেতন দিতে চান, তিনি দিতে পারেন।'