রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত: যা জানা প্রয়োজন এই মুহূর্তে
সংঘাতের তৃতীয় মাসে প্রবেশ করতে না করতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্রের নতুন সহায়তা প্যাকেজের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিকভাবে শক্তিশালী করতেই পশ্চিমাদের এ উদ্যোগ।
গত তিনমাসে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও সমাধান হয়নি চলমান এই সংকটের। এরমধ্যে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ বন্দরশহর মারিউপোল দখল করে নিয়েছে রাশিয়া। সেইসঙ্গে, পশ্চিমারা সংঘাতকে আরও উসকে দিচ্ছে, এই অভিযোগে পূর্ব ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকিসহ একাধিকবার তাদেরকে সতর্ক করেছে মস্কো।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের এ পর্যায়ে এসে যা জানা প্রয়োজন
* কয়েক সপ্তাহ ধরেই পোল্যান্ড এবং বুলগেরিয়াতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল রাশিয়া। দুই দেশকেই জানানো হয়েছিল, জ্বালানি কেনার অর্থ রুবলে (রাশিয়ার মুদ্রা) পরিশোধ না করলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হবে। রাশিয়ার এই দাবিতে অস্বীকৃতি জানায় দুই দেশই। ফলে আজ বুধবার সকাল থেকে পোল্যান্ডে গ্যাসের যোগান বন্ধ করেছে রাশিয়া। আর বুলগেরিয়ায় বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও। তবে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয় এর আগে জানিয়েছিল, বুধবার থেকেই সরবরাহ বন্ধের কথা তাদেরকে জানিয়েছিল মস্কো।
* ইউক্রেন মস্কোর বিরুদ্ধে মলদোভার বিচ্ছিন্ন অঞ্চল ট্রান্সডনিস্ট্রিয়াকে যুদ্ধে টেনে আনার অভিযোগ করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম ইউক্রেন সংলগ্ন রাশিয়া-সমর্থিত এই অঞ্চল কর্তৃপক্ষের দাবি, চলমান সংঘতে তারা একাধিক বার হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।
* মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে জার্মানিতে ৪০টিরও বেশি দেশের অংশগ্রহণে প্রতিরক্ষা আলোচনা আয়োজন করা হয়। আলোচনার উদ্দেশ্য, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক দিক দিয়ে আরও শক্তিশালী করে তোলা।
* জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন শহর মারিউপোল থেকে লোকজন সরিয়ে আনতে জাতিসংঘের সম্পদ ব্যবহার করতে প্রস্তুত তিনি।
* দেশ-বিদেশ থেকে কয়েক সপ্তাহের চাপের পর জার্মানি প্রথমবারের মতো ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্র (বিমান বিধ্বংসী অস্ত্রসহ গেপার্ড ট্যাঙ্ক) সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে।
তবে যুদ্ধক্ষেত্রের কিছু প্রতিবেদন স্বাধীনভাবে যাচাই করেত পারেনি রয়টার্স। এরমধ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো জানা প্রয়োজন-
* ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পূর্বাঞ্চলীয় খারকিভ এবং দোনেৎস্কে আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে রাশিয়া।
* ব্রিটিশ সামরিক বাহিনী বলেছে, রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সুরক্ষিত অবস্থানকে ঘেরাও করার চেষ্টা করছে।
* রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি, রুশ বাহিনী দক্ষিণ ইউক্রেনের পুরো খেরসন অঞ্চল 'স্বাধীন' করেছে। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
* দক্ষিণ ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের কৃষকরা ক্ষেতে চাষাবাদের সময় নিজেদের সুরক্ষায় লোহার বর্ম পরছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ইউক্রেন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ।
* ২৪ ফেব্রুয়ারি যখন রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর আগ্রাসন শুরু করে, তখন বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া চোরনোবিল প্ল্যান্টে ১২ ঘন্টার রাতের শিফটের দায়িত্বে ছিলেন পরমাণু প্রকৌশলী লিউডমিলা কোজাক। এ সময় কর্মরত সকলেই ব্যাপক বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান। কোজাকের মতে, ১৯৮৬ সালের পারমাণবিক বিপর্যয়ের পর এটিই ছিল এই প্ল্যান্টে সবচেয়ে নাটকীয় ঘটনা।
* রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের মধ্যে একজন বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়াকে দুর্বল করতে পশ্চিমাদের যে সাহায্য নিয়েছে, তাতে করে নিজের পতনের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে বাঁচাতে নয় বরং রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতেই কিয়েভকে ব্যবহার করছে।
* রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, "ন্যাটো মূলত রাশিয়ার সঙ্গে একটি প্রক্সির যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তারা প্রক্সিকে (তৃতীয় পক্ষ) অস্ত্র সরবরাহ করছে। যুদ্ধ মানে যুদ্ধই।" সেইসঙ্গে তিনি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিকে ছোট করে না দেখার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন পশ্চিমা বিশ্বকে।
- সূত্র: রয়টার্স