আমি মেকি নই: মৌসুমী হামিদ
ক্যারিয়ারে ১০ বছরে পা রেখেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ। এই ১০ বছরে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসেছেন তিনি। সেসব গল্প শুনতেই আমরা হাজির হয়েছিলাম উত্তরায়। তার চিলেকোঠার বাসায়। চিলেকোঠা বলতে চিলেকোঠাই, যার অর্ধেকটা জুড়ে ছাদবাগান।
উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের সেই চিলেকোঠায় দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হয়ে শুরুতেই মৌসুমীর কাছে জানতে চাই, এক দশকের ক্যারিয়ারে তার সেরা অর্জন কী?
বাগানে হাঁটতে হাঁটতে, একটু ভেবে নিয়ে উত্তর দিলেন, 'এই যে আমি মৌসুমী হামিদ হয়েছি, এটাই বড় অর্জন। মফস্বলের এক সাধারণ তরুণী ছিলাম। সেখান থেকে এ পর্যায়ে এসেছি। মানুষ আমাকে চেনে। ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। এটাই আমার বড় প্রাপ্তি।'
তবে আরও একটা প্রাপ্তির কথা বললেন তিনি, 'এই ইন্ড্রাস্টি সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না আমার। ফটোশুট, গ্লামার ওয়ার্ল্ড, অভিনয়, মডেলিং- কিছুই জানতাম। ইন্ডাস্ট্রির মানুষ, বিশেষ করে কিছু অসাধারণ ডিরেক্টর আমাকে এসব শিখিয়েছেন। তাদের কাছে আমি ঋণী।'
ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে মৌসুমী। এজন্য পরিবারের সদস্যদের হাতে মার খেতেও হয়েছে! ছোটবেলায় অনেকের মিমিক্রি করেছেন। ওটা দেখেই কাছের কেউ কেউ তাকে পরামর্শ দিয়েছিল লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টার প্রতিযোগিতার মতো প্লাটফর্মে নাম লেখাতে। ২০১০ সালে তিনি নাম লেখালেন। তখন পড়েন খুলনা সিটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়েন। থাকেন ছাত্রীদের মেসে।
খুলনায় লাক্সের অডিশনে বিচারক ছিলেন অভিনেতা আহসানুল হক নাসিম ও অভিনেত্রী ফারহানা রুমা। সেই স্মৃতি মনে করে মৌসুমী বলেন, 'মেস থেকে গিয়ে অডিশন দিলাম। সঙ্গে ছিলেন আমার এক আপু। তিনিও রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। অডিশন দেওয়ার বড় কারণ, বিচারক হিসেবে বড় তারকারা থাকবেন। তাদের কাছ থেকে দেখতে পাব।'
মৌসুমী বলেন, "মজার ব্যাপার হলো, অডিশন শেষে সিনিয়র আপুকে ছেড়ে দিলেও আমাকে বসিয়ে রাখা হলো। নাসিম ভাই আমাকে বললেন, 'তোমার চোখটা সুন্দর। উচ্চতাও ভালো। (তোমাকে) বানিয়ে নেওয়া (গড়ে তোলা) যাবে।' আমি ওই সময় অনেক মোটা ছিলাম। নাসিম ভাইয়ের পরামর্শ দিলেন, ভাত আলুর ধার দিয়ে যেন না যাই। তার কথা মতো আমি শুধু ফলমূল খাওয়া শুরু করলাম।'
ওই সময় মৌসুমীর এত ঘটনা সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে থাকা তার পরিবারের কেউই জানতেন না। কিন্তু যখন তার ঢাকা আসার ব্যাপার এলো, তখন জানাতেই হলো। এগিয়ে এলেন মা ও মামা। রাজি করালেন বাবাকে- একবার দেখুক না চেষ্টা করে!
এই 'দেখুক না' থেকে নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে মৌসুমী চলে আসেন প্রতিযোগিতার মূল রাউন্ডে। তখন বিনোদন জগতের পাশাপাশি তার পরিচয় হয় নতুন নতুন পোশাকের সঙ্গেও। এমনকি লাক্স সুপারস্টার প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কারণেই প্রথমবার জিন্স প্যান্ট পরেন তিনি! ওই সময় বিচারকদের পছন্দের প্রতিযোগী হয়ে ওঠেন মৌসুমী। সবকিছুতে হয়ে ওঠেন দক্ষ। প্রতিযোগিতা শেষে রানার আপের খেতাব পান তিনি।
লাক্সের দীর্ঘ ভ্রমণের স্মৃতি অনেকের কাছে পুরনো মনে হলেও মৌসুমীর কাছে এখনো তরতাজা। তার ভাষায়, 'মনে হয় সেদিনের ঘটনা!' তারপর বিনোদন জগতে তিনি টানা ১০ বছর পার করলেন।
নাটক দিয়ে তার ক্যারিয়ার শুরু। ওই সময় বেশ কিছু গুণী পরিচালকের নাটকে অভিনয় করেছেন। কয়েকটি চলচ্চিত্রেও দেখা গেছে তাকে।
ক্যারিয়ারের অনেক ধাপ পেরিয়ে এসেছেন মৌসুমী। লাক্সের মতো প্লাটফর্মের কথা বাদ দিলে, বিশেষ কোনো মানুষের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে চান কি না- জানতে চাওয়া হলে শুরুতেই অভিনেতা অপূর্বের নাম নিলেন।
মোসুমী বলেন, 'অপূর্ব ভাইয়ের মতো এত পজিটিভ মানুষ আমি দেখিনি। যখনই ওনার সঙ্গে দেখা বা কথা হয়েছে, তখনই মোটিভেট করতেন। মেন্টালি বুস্ট আপ করতেন। এটা আমার পুরো ক্যারিয়ারে অনেক কাজে দিয়েছে। তাকে আমি পাওয়ার অব পজিটিভিটি বলে ডাকি। আরেকজন আছেন, সুমন আনোয়ার। তিনি আমাকে অভিনয় শিখিয়েছেন। টেকনিক্যালি অনেক সমৃদ্ধ করেছেন। আজকের মৌসুমী হামিদের পেছনে এ রকম অনেকেরই অবদান আছে।'
তবে ইন্ড্রাস্টি নিয়ে একটু হতাশ এই অভিনেত্রী। বললেন, আগে পুরা একটা পরিবার ছিল; এখন কেমন যেন সবাই ছাড়া ছাড়া! পারস্পরিক সম্পর্কটাও কেমন যেন। তবে অন্য সবার মতো মৌসুমীও ইন্ড্রাস্টি নিয়ে স্বপ্ন দেখেন- নিশ্চয় একদিন সবার বোধোদয় হবে; আবার দারুণ দারুণ কাজ হবে।
আলাপের শেষদিকে জানতে চাই, ১০ বছরের ক্যারিয়ারে মৌসুমী হামিদ প্রেমে পড়েছিলেন কখনো? কোনো প্রেম তাকে এলেমেলো করে দিয়েছে?
বললেন, 'যখন যে প্রেম হয়েছে, সেটাই আমাকে পুড়িয়েছে। সবশেষ প্রেমে যে কষ্ট পেয়েছি, সেটাকেই বড় কষ্ট বলে মনে হয়েছে। তবে লাক্স থেকে মিডিয়াতে আসার পর এক সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে প্রেম হয়েছিল। তুমুল প্রেম ছিল সেটা। সে সময় আমি একটা ধারাবাহিক নাটকের শুটিং থেকে ফেরার পথে সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হই। আমার মুখ কেটে যায়। এ কারণে আমাকে ছেড়ে চলে যায় সে। অথচ ওই সময় আমার পাশে তারই সবচেয়ে বেশি থাকার কথা ছিল। ঘটেছে উল্টো। কষ্ট পেয়েছি, তবু মেনে নিয়েছি।'
শেষ করার আগে জানতে চাই, মৌসুমী হামিদ এখন মিডিয়া ছেড়ে দিলে মানুষ তাকে কেন মনে রাখবে?
একটু ভেবে উত্তর দিলেন, 'মনে রাখবে, কারণ আমি মানুষটা মেকি নই। মজা করতে, আনন্দে সময় কাটাতে ভালোবাসি।'